ঘরের কাজেও কেমন দক্ষ ঋদ্ধিমান, দেখে নিন এই ভিডিয়োয়।
অনেকের আবার গানের প্রতিভাও বেরিয়ে আসছে। গীতিময় বসুকে যেমন দেখা যাচ্ছে, টুইটারে গানের ভিডিয়ো পোস্ট করতে। বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে খেলা গীতিময় বললেন, “গান গাইতে বরাবরই ভাল লাগে। বাথরুম সিঙ্গার ছিলাম। স্ত্রী শ্রমণা, ছেলে শ্রময়কে দেওয়ার পরও এখন প্রচুর অবসর। গান গাইছি মনের আনন্দে। সবাই উৎসাহ দিচ্ছে বলে ভালও লাগছে। তা ছাড়া ব্যায়াম করছি। এই সময়ে কী কী কসরত বাড়িতেই সহজে করা যায়, তেমন ভিডিয়োও পোস্ট করেছি।”
একা গীতিময় নন, নিজেকে ফিট রাখার চ্যালেঞ্জ রয়েছে সমস্ত ক্রিকেটারেরই। ব্যাট-বল নিয়ে নেটে নামার উপায় নেই, কিন্তু ‘ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ’ তো করাই যায়। এ ক্ষেত্রে গাইডের ভূমিকায় ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল। শুধু সিনিয়র দলই নয়, বাংলার সমস্ত বয়স-ভিত্তিক দলের কাছেই পৌঁছে গিয়েছে ফিটনেস পোগ্রাম। সিএবি সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “বাংলার রঞ্জি দলের ক্রিকেটারদের সবাইকে ট্রেনিং শিডিউল পাঠানো হয়েছে। যাতে সবাই বাড়িতে বা বাড়ির কাছে মাঠ থাকলে প্রস্তুতি নিতে পারে। বাংলার সমস্ত পর্যায়ের দলের ক্রিকেটারদেরই এ ভাবে ট্রেনিং করতে বলা হয়েছে।” এর মধ্যে ভিভিএস লক্ষ্মণ বাংলা ক্রিকেটারদের অনলাইনে বিশেষ ক্লাসও নিয়েছেন। এ ভাবে যতটা তৈরি থাকা যায় আর কী!
গত ৩০ এপ্রিল আবার জন্মদিন ছিল অনুষ্টুপ মজুমদারের। রঞ্জিতে বাংলার ফাইনালে ওঠার অন্যতম কারিগর স্বাভাবিক ভাবেই লকডাউনের আবহে ঘরোয়া চৌহদ্দিতেই তা সীমাবদ্ধ রেখেছেন। স্ত্রী সোনালির বানানো কেক, বিরিয়ানি ও পায়েসে অবশ্য তা ভালমতনই কেটেছে। ছেলে ঋষিকও বেশ মজা পেয়েছে। তবে আক্ষেপ একটাই, বাবা-মার আশীর্বাদও নিতে হয়েছে ভিডিয়ো কলে।
লকডাউনের মধ্যেই ঘরোয়া জন্মদিন পালন অনুষ্টুপ মজুমদারের। —নিজস্ব চিত্র।
ফুটবলে আবার একেবারেই ভাঙা হাটের ছবি। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, দুই দলেরই স্প্যানিশ ব্রিগেড দেশে ফেরার উড়ান ধরেছে আগেই। করোনা-আতঙ্ক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই ক্লাবের কোচ-ফুটবলারদের একই বাসের সওয়ারি করে পৌঁছে দিয়েছে রাজধানীতে। সেখান থেকে তাঁরা ধরেছেন আমস্টারডামের উড়ান। তবে দুই প্রধানের সব বিদেশি এখনও দেশে ফিরতে পারেননি। ইস্টবেঙ্গলে আসা কোস্টারিকার বিশ্বকাপার জনি অ্যাকোস্তা যেমন শহরে পা রেখেই গিয়েছেন আটকে। কোনও ম্যাচও খেলতে পারেননি। মোহনবাগানের পাপা দিবাকরও রয়েছেন কলকাতায়। লাল-হলুদ শিবিরের কাশিম আইদারাও ফ্রান্সে ফিরতে পারেননি।
আরও পড়ুন: ‘এই সময়টা যেন ভয়ঙ্কর উইকেটে টেস্ট ম্যাচ খেলা’
এই আবহেও পরের মরসুমের কথা ভেবে ফুটবলারদের সঙ্গে চুক্তি সেরে নিচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগান আবার অপেক্ষায় এটিকের সঙ্গে সংযুক্তির। যা আভাস, তাতে এটিকের ফুটবলাররাই দলে বেশি প্রাধান্য পাবেন। ফলে, দল গড়ার ক্ষেত্রে খুব একটা উদ্যোগী দেখাচ্ছে না সবুজ-মেরুন শিবিরকে। তবে তা নিয়ে ভাবছেনই না আশুতোষ মেটা। এটিকেতে তিনি যোগ দিতে পারেন বলে খবর রয়েছে। তাঁর চিন্তা মুম্বইয়ে ফিরতে না-পারা নিয়ে। মোহনবাগানের সাইড ব্যাক আটকে পড়েছেন কলকাতায়। সময় কাটছে কী করে? আশুতোষ বললেন, “রান্না করছি, চিকেন আর পাস্তাই ভালই পারি। ভিডিয়ো গেম খেলছি। ফুটবল না-খেলার কষ্ট ভোলাচ্ছি ও ভাবেই। আর দেখছি সিনেমা। ইংলিশ-হিন্দি কিছুই বাদ দিচ্ছি না। শেষ দেখলাম ‘হায়দর’। নতুন সিনেমাও অনেক দেখেছি। তবে তাও বাড়ির কথা মনে পড়ছে। এখানে ভাল লাগছে না আর। ভিডিয়োতে কথা বলছি মাঝে মাঝেই।”
ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের বড় ভরসা গুরবিন্দর অবশ্য আছেন পঞ্জাবেই। কিছুদিন আগে ইটভাটার শ্রমিকদের সাহায্য করেছিলেন। গ্রামের ২৫ পরিবারের পাশেও দাঁড়িয়েছেন তিনি। মোবাইলে বললেন, “বাড়িতেই রয়েছে জিম। তাতে সব যন্ত্রপাতিই রয়েছে। আমি সেখানেই সময় কাটাই।” আর কী করেন? বললেন, “বাড়িতে অনেক কাজ থাকে। সাফাই-রান্না। বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা। গ্রামের শ্মশানঘাটের কাছে জল বেরিয়ে যাওয়ার জায়গা ভরে গিয়েছিল। নোংরা জল বেরিয়ে আসছিল। সেটা পরিষ্কার করতেও চলে গিয়েছিলাম। গ্রামের মানুষদের সাহায্য করছি। আর জিম তো আছেই। পরিশ্রমের মধ্যেই আছি। প্রস্তুত রাখছি নিজেকে।”
দেখুন ভিডিয়ো—
ঘরেই জিম, ছাদেই ফুটবল, লকডাউনে কী করছেন খেলোয়াড়রা?
Posted by
Anandabazar Khela on Wednesday, 6 May 2020
আই লিগ জয়ী মোহনবাগানের রক্ষণের শেষ প্রহরী শঙ্কর রায় আসন্ন মরসুমের জন্য সই করেছেন ইস্টবেঙ্গল। তা কখন শুরু হবে, তা অজানা। তবে নিজেকে ফিট রাখতে তো বাধা নেই। দমদম নাগেরবাজারের বাড়ির ছাদে স্ত্রী প্রিয়ার সঙ্গেই করছেন টুকটাক ট্রেনিং। বললেন, "স্কিপিং করছি, পেটের এক্সারসাইজ সারছি। আবার বল ধরাও অনুশীলনও করছি।" পাশাপাশি, নিয়মিত গান শোনা, দিদির সঙ্গে লুডো খেলা, অনলাইনে ভিডিয়ো গেম ‘প্রেস’-এ সময় কাটানোও রুটিনে ঢুকে পড়েছে। যা আবার ফুটবল গেমস। দুধের স্বাদ ঘোলেই মিটছে খানিকটা। সঙ্গে থাকছে খাওয়াদাওয়া। প্রিয়া কখনও কেক বানাচ্ছেন, কখনও অন্য কিছু তৈরি করছেন। রসনাতৃপ্তি ঘটছে। বললেন, "আমি রান্নার দিকে ঝুঁকছি না। আমার স্ত্রী যা বানিয়ে আনছে, আরাম করে খাচ্ছি। কেকটা যেমন দারুণ হয়েছিল।" আর খাওয়া-দাওয়ার পর ক্যালারি খরচের জন্য ছাদ তো রয়েইছে!
মুশকিল হল, খেলোয়াড়রা এখন শুধু তৈরিই রাখতে পারেন নিজেকে। তার বাইরে কোনও কিছুই যে হাতে নেই। কবে কাটবে করোনা-ভয়, কবে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে জীবনযাত্রা, তা জানা নেই কারও। ফলে বাড়ছে অসহায়তা।
ক্রিকেটে যেমন সিএবি লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনের অনেক খেলা বাকি। প্রথম ডিভিশনে শুধু গ্রুপের খেলা শেষ হয়েছে। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল, ফাইনালের নকআউট পর্যায় বন্ধই আপাতত। সিএবি নকআউটে শেষ হয়েছিল লিগের খেলা, নকআউট হয়নি। জেসি মুখার্জি ট্রফির লিগের খেলাও শেষ হয়নি। পি সেন ট্রফি নিয়ে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেয় সিএবি। এ বছর তো সেই প্রশ্নই ওঠে না।
ফিসফাস শোনা যাচ্ছে যে, এই আবহে কিছু ক্লাব চাইছিল যেখানে থমকে আছে খেলা, সেখান থেকেই পরের বছর শুরু করতে। যাতে এই বছরের চুক্তিতেই পরের বছর খেলানো যায় ক্রিকেটারদের। এতে অবধারিত ভাবেই পকেটে কোপ পড়ার কথা ক্রিকেটারদের। কারণ, এক মরসুমের অর্থই এতে ফাঁকি পড়ে যেত। সিএবি এখনও তা মানেনি। তবে ক্লাব ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে, ক্রিকেটারদের চুক্তির পরিণতিই কী হবে, তা নিয়ে থাকছে বিস্তর ধোঁয়াশা।
সাধারণত, এক বছরের জন্যই ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকেন ক্রিকেটাররা। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ চুক্তির এক-তৃতীয়াংশ সাধারণত দেওয়া হয়ে থাকে ক্রিকেটারদের। গরমের মধ্যে দেওয়া হয় আরও কুড়ি-পঁচিশ শতাংশ টাকা। আর মরসুমের শেষে বাকি পেমেন্ট করা হয়। যা হাতে আসতে অগস্ট হয়ে যায়। সেপ্টেম্বরে শুরু হয় দলবদল। এ বার কী অবস্থা দাঁড়াবে, তা নিয়ে থাকছে ধোঁয়াশা। অনেক ক্রিকেটারই বুঝতে পারছেন না, এ বারের চুক্তির পুরো টাকা মিলবে কি না। এই মরসুমের খেলাই বা কী হবে, পরের মরসুম কী দাঁড়াবে, দলবদলেরই বা কী ভবিতব্য, উত্তর নেই কোনও কিছুরই। থাকছে শুধু আশঙ্কা, চুক্তির টাকা মিলবে তো!