সাহায্য: বস্তিবাসীদের হাতে খাদ্য তুলে দিচ্ছেন দীপক। নিজস্ব চিত্র
ছোটবেলায় যখন আখড়ায় কুস্তি করতে নামতেন, প্রায় তিরিশ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তাঁর কাছে খাবার পৌঁছে দিতেন বাবা। যত কষ্টই হোক, বাবার জন্য কোনও দিন কুস্তি করতে গিয়ে অভুক্ত থাকতে হয়নি দীপক পুনিয়াকে।
আর তাই বিশ্বের দু’নম্বর (৮৬ কেজি বিভাগে) কুস্তিগির চান, করোনাভাইরাসের আক্রমণে ভারত যখন লকডাউনে চলে গিয়েছে, তখন হরিয়ানার ঝাঁঝর এলাকার গরিব মানুষেরা যেন দু’বেলা কিছু খেয়ে বাঁচতে পারেন। গত বছর জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা এবং সিনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো জিতে সাড়া ফেলে দেওয়া এই কুস্তিগির তাই রিংয়ের বাইরে আর একটা লড়াই লড়ছেন। ক্ষুধার্তদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার লড়াই।
বুধবার নিজের বাড়ি থেকে ফোনে দীপক শোনাচ্ছিলেন তাঁর এই লড়াইয়ের কথা। ‘‘অল্প বয়সে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। তাই চেষ্টা করছি কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার। রোজ নিয়ম করে এলাকার ঝোপড়পট্টিতে (বস্তি) খাবারের প্যাকেট নিয়ে যাচ্ছি। ওদের মধ্যে বিলি করছি। ওদের হাসিমুখ দেখে খুব ভাল লাগছে,’’ বলছিলেন টোকিয়ো অলিম্পিক্সের যোগ্যতা পেয়ে যাওয়া দীপক। ইতিমধ্যেই তিনি দু’মাসের বেতনও দান করে দিয়েছেন।
বয়স উনিশের কোঠায় হলে কী হবে, বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই তাঁকে সম্ভাব্য অলিম্পিক্স পদকজয়ী হিসেবে দেখছেন। লকডাউনের মধ্যে কী ভাবে চলছে প্রস্তুতি? কতটাই বা সমস্যা হচ্ছে? দীপক বলছেন, ‘‘আমার ফিটনেস ট্রেনিংয়ে কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা হল, কুস্তি করতে পারছি না কারও সঙ্গে। কুস্তি তো আর দূরত্ব বজায় রেখে হয় না।’’ তবে কোচেদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ থাকছে। ফোনে যে রকম রুটিন বলে দিচ্ছেন তাঁরা, সেটা মেনে চলছেন দীপক। কী ট্রেনিং করছেন বাড়িতে? জানা গেল, ভোর তিনটেতে উঠে পড়ছেন। তার পরে সাড়ে চার-পাঁচ ঘণ্টার শারীরিক কসরত। প্রথমে দৌড়, তার পরে চিন আপ এবং বিভিন্ন ব্যায়াম। এর পরে দ্বিতীয় দফার ট্রেনিং বিকেল চারটে থেকে সাতটা। সেখানে ডন-বৈঠকের পাশাপাশি প্যাঁচ-পয়জারের উপরেও নজর দিচ্ছেন। দীপক এও বলছিলেন, ‘‘অলিম্পিক্স পিছিয়ে যাওয়ায় বেশি করে এখন আমার প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভিডিয়ো দেখছি। ওদের দুর্বলতা খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি।’’
এ বারে আপনি দারুণ ছন্দে ছিলেন। টোকিয়ো অলিম্পিক্স এক বছর পিছিয়ে যাওয়াটা কি একটা ধাক্কা হল? দীপকের জবাব, ‘‘অলিম্পিক্সের জন্য একেবারে তৈরি ছিলাম। ট্রেনিং দারুণ চলছিল। এখন ছন্দটা ধরে রাখতে হবে। তবে হাতে একটা বছর আরও সময় পেলাম। নিজের দুর্বলতাগুলো ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করব।’’
ভারতীয় কুস্তির আকাশে তাঁর এই উত্থানের পিছনে কারা আছেন? দীপকের জবাব, ‘‘আমি ছোটবেলায় সুশীল কুমারকে দেখে প্রেরণা পেয়েছি কুস্তিতে আসার। আমার পরিবার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বাবা রোজ দুধ, মাখনের তৈরি খাবার পৌঁছে দিত। এখন আদানির ‘গর্ব হ্যায়’ প্রকল্পও সাহায্য করছে। ট্রেনিংয়ের আধুনিক সরঞ্জাম পাচ্ছি, পুষ্টিবিদেরা ডায়েট তৈরি করে দিচ্ছেন, যাতে ওজন ঠিক রাখা যায়।’’
গৃহবন্দি অবস্থায় অবসর সময়ে কী করছেন? দীপকের কথায় পরিষ্কার, কুস্তির বাইরে অন্য কিছু নিয়ে ভাবছেন না। বলছেন, ‘‘আমার রুটিনটা খুব সহজ। দু’বেলা প্রায় আট ঘণ্টা করে ফিজিক্যাল ট্রেনিং। নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া। এবং অনেকটা সময় ঘুম। বিশ্রামটাও আমাদের খুব জরুরি।’’
সিনেমা খুব একটা দেখেন না। কিন্তু কুস্তি নিয়ে ভারতে হইচই ফেলে দেওয়া সিনেমা— ‘সুলতান’ এবং ‘দঙ্গল’, দুটোই দেখেছেন। কোনটা বেশি পছন্দের? হাল্কা হেসে দীপক বলছেন, ‘‘দুটোই।’’ পছন্দের সিনেমা বাছা নিয়ে দ্বিধায় থাকতে পারেন এই তরুণ কুস্তিগির, কিন্তু নিজের লক্ষ্য ঠিক করার ব্যাপারে কোনও সংশয় নেই তাঁর মনে।
দীপক পুনিয়ার লক্ষ্য একটাই। ‘‘অলিম্পিক্স পদক। আর সেটা জিতেই আমি দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটাব,’’— উনিশের এই আস্ফালনে কিন্তু মিশে আছে চরম আত্মবিশ্বাসও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy