জোড়া-ফলা: চহাল-কুলদীপ জুটির উপরে ভরসা বিরাটের। ফাইল চিত্র
এর আগে তিনি দু’টি বিশ্বকাপে খেলেছেন। কিন্তু এ বারের বিশ্বকাপেই যে কঠিনতম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত বিরাট কোহালি। একই সঙ্গে দলের উদ্দেশে ভারত অধিনায়ক বলে রাখছেন, প্রথম বল থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে প্রতিপক্ষের উপরে।
কোহালি আজ, বুধবার ইংল্যান্ডগামী বিমানে উঠবেন একটাই লক্ষ্য নিয়ে। বিশ্বকাপ জয়। যে অভিযানে রওনা হওয়ার আগে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে কোহালি বলে দিলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, আমার খেলা বিশ্বকাপগুলোর মধ্যে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে এ বারেই। একে তো সব দলগুলোকে একে অন্যের সঙ্গে খেলতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটা দলই খুব শক্তিশালী। আপনি যদি ২০১৫ সালের আফগানিস্তান আর এ বারের আফগানিস্তানের সঙ্গে তুলনা করেন, তা হলেই দেখবেন এ বারে ওদের দলটা কতটা শক্তিশালী।’’
আরও পড়ুন: কোহালি থেকে বুমরা, ভারতের বিশ্বকাপ দলের কোন বিভাগে সেরা কারা
এর আগে ২০১১ এবং ২০১৫ সালে দু’টো বিশ্বকাপ খেললেও এ বারই প্রথম দলের নেতৃত্ব দেবেন কোহালি। তাঁর নেতৃত্ব ৫ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছে ভারত। তাঁর আগে কোহালি বলছেন, ‘‘বিশ্বকাপে চাপ সামলানোটাই আসল পরীক্ষা। পরিস্থিতির থেকেও চাপ সামলানোটা কঠিন হয়ে যায়।’’ ভারত অধিনায়ক এও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘এ বারের বিশ্বকাপে যে কোনও দল অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে। এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। প্রতিটা ম্যাচেই আমাদের সেরা খেলাটা খেলতে হবে। এ বার প্রত্যেক দলকে একে অন্যের বিরুদ্ধে খেলতে হবে, যেটা খুব ভাল ব্যাপার। সব দলকেই তাই তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে হবে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কোহালি পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন, এ বারের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ থেকেই তীব্রতা ধরে রাখতে হবে। একটু হাল্কা দেওয়ার কোনও জায়গা নেই। গ্রুপ পর্বে ভারতের প্রথম চার প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজ়িল্যান্ড এবং পাকিস্তান। যা নিয়ে কোহালি বলছেন, ‘‘প্রথম ম্যাচ থেকেই সেরা খেলাটা খেলতে হবে। আত্মতুষ্টির কোনও জায়গাই নেই। সে জন্যই তো এটা বিশ্বকাপ।’’
ভারতের প্রথম চার প্রতিদ্বন্দ্বীই কোহালির দলের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হতে পারে। কিন্তু তাঁর দল যে সেই চ্যালেঞ্জ এবং চাপের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত, তা জানিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। কোহালি বলেন, ‘‘মাঠে নামার পর থেকেই যে বিশাল চাপের মুখে পড়তে হবে, সেটা আমরা জানি। এটা ভাবার কোনও রাস্তা নেই যে, প্রথম সপ্তাহটা একটু হাল্কা দেওয়া যেতে পারে। প্রথম দিন থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তীব্রতা ধরে রাখতে হবে। সেটাই হল চ্যালেঞ্জ।’’
এর পরে বিশ্ব ফুটবলের উদাহরণ টেনে এনে কোহালি বলেছেন, ‘‘আপনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ দেখুন বা লা লিগা, ক্লাবগুলো তিন-চার মাস টানা একই রকম তীব্রতা ধরে রাখে খেলায়। তা হলে আমরা কেন পারব না? আমাদের শুরুটা যদি ভাল হয় আর আমরা যদি ধারাবাহিকতা দেখাতে পারি, তা হলে পুরো প্রতিযোগিতাতেই একই ছন্দ, একই তীব্রতা ধরে
রাখতে পারব।’’
সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ড-পাকিস্তান সিরিজে প্রতিটা ম্যাচেই তিনশোর ওপর রান উঠেছে। যা দেখে অনেকেই মনে করছেন, বিশ্বকাপেও তিনশো রান গড়পরতা স্কোর হবে। কোহালি অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি আগেও বলেছি, ইংল্যান্ডে পিচ খুব ভাল হবে। এখন ওদের গ্রীষ্ম চলছে, তাই পরিবেশ-পরিস্থিতিও বেশ ভাল। ম্যাচে বড় স্কোর হবে বলেই আমার মনে হয়। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক একটা সিরিজের সঙ্গে বিশ্বকাপের কোনও তুলনা হয় না। দুটো পুরোপুরি আলাদা।’’ কোহালি আরও বলেন, ‘‘হয়তো এও দেখা যাবে, ২৬০-২৭০ রান উঠছে আর সেই রান তুলেই জিতে যাচ্ছে প্রথমে ব্যাট করা দল। কারণ বিশ্বকাপে চাপ সামলানো একটা বড় ব্যাপার হয়ে যায়। সে জন্য সব রকম পরিস্থিতির জন্য আমরা তৈরি।’’
সদ্য সমাপ্ত আইপিএলে কুলদীপ যাদব একেবারেই ছন্দে ছিলেন না। পরের দিকে বেশ কয়েকটি ম্যাচে তো এই চায়নাম্যান বোলারকে বসিয়েই দিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। ভারত অধিনায়ক অবশ্য কুলদীপের খারাপ ফর্ম নিয়ে চিন্তিত নন। তিনি বলছেন, ‘‘অতীতে আইপিএল এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রচুর সাফল্য পেয়েছে কুলদীপ। তাই ওর যে একটু খারাপ সময় যাবে, সেটা প্রত্যাশিত। আশা করব, আইপিএলেই ব্যাড প্যাচ কেটে গিয়েছে কুলদীপের। বিশ্বকাপে সেই খারাপ সময় আর আসবে না।’’
কোহালি পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন, ভারতীয় বোলিং আক্রমণের প্রধান দুই অস্ত্র হতে চলেছেন চায়নাম্যান স্পিনার কুলদীপ এবং লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চহাল। ‘কুল-চা’ নিয়ে কোহালি বলেছেন, ‘‘কোথায় ভুল হচ্ছিল, কী করা দরকার, তা নিয়ে ভাবার সময় পেয়েছে কুলদীপ। বিশ্বকাপে ও আরও শক্তিশালী হয়ে নামবে। আমরা ওর আর চহালের দক্ষতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। ওরা আমাদের বোলিংয়ের দুই স্তম্ভ।’’ বছর দুই আগে ভারতীয় ক্রিকেটের মঞ্চে উদয় হয়েছিল ‘কুল-চা’। তার পর থেকে ভারতকে অনেক স্মরণীয় জয় এনে দিয়েছেন এই দুই স্পিনার। ৪১ ওয়ান ডে ম্যাচে ৭২টি উইকেট নিয়েছেন চহাল, ৪৪ ম্যাচে ৮৭টি উইকেট কুলদীপের।
বিশ্বকাপের আগেই আইপিএল হওয়ায় অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, ভারতীয় পেসাররা না ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ইংল্যান্ড উড়ে যাওয়ার আগে কোহালি বলে গেলেন, ‘‘আইপিএল খেলার সময়ও আমাদের বোলারদের মাথায় ৫০ ওভারের ক্রিকেট ঘুরেছে। আপনারা সবাই ওদের বল করতে দেখেছেন। কাউকে একটুও ক্লান্ত মনে হয়নি। সবাইকে তরতাজা দেখাচ্ছে। সবার মাথাতেই ছিল আসন্ন বিশ্বকাপের কথা। তাই কেউ নিজের ফিটনেসের মান কমতে দেয়নি। এ ব্যাপারে আইপিএল শুরুর আগেই ওদের সকলের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া হয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy