Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

থ্রি ডি বিতর্ক নয়, বিশ্বকাপ চান শঙ্কর

নিজেকে  প্রমাণ করার চিন্তার থেকেও বেশি মাথায় ঘুরছে কী ভাবে দেশকে বিশ্বকাপ এনে দেব।

প্রত্যয়ী: বিশ্বকাপের জন্য অভিনব প্রস্তুতি চালিয়েছেন শঙ্কর। ফাইল চিত্র।

প্রত্যয়ী: বিশ্বকাপের জন্য অভিনব প্রস্তুতি চালিয়েছেন শঙ্কর। ফাইল চিত্র।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ০৫:২৭
Share: Save:

আইপিএল শেষ হওয়ার পরে মাত্র দু’দিন বিশ্রাম নিয়েছেন বিজয় শঙ্কর। চেন্নাইয়ের বাড়িতে ফিরেই শুরু হয়ে গিয়েছে তাঁর বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। নিয়মিত দু’বেলা করে অনুশীলন করছেন। করবেন নাই বা কেন, তাঁকে দলে নেওয়ার পরে একাধিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ক্রিকেট অভিধানে ঢুকে পড়েছে নতুন শব্দ, ‘‘থ্রি ডি ক্রিকেটার’’। সব জেনেও জানছেন না। সব শুনেও শুনছেন না। অপেক্ষা করে রয়েছেন বিশ্বকাপে প্রথম সুযোগের জন্য। সোমবার সারা দিন ব্যস্ত ছিলেন। ফোন ধরার সময় পাননি। রাত ১০টায় নিজেই ফোন করে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন আনন্দবাজারকে।

প্রশ্ন: ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারের চার নম্বরে নামার জন্য কতটা তৈরি?

শঙ্কর: ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে ভাবছি না। যে কোনও পরিস্থিতির জন্য নিজেকে তৈরি রাখছি। সুযোগ পেলে যেন ব্যর্থ না হই। তাই নতুন বলের বিরুদ্ধেও ব্যাট করছি। পুরনো বলে রিভার্স সুইংয়ের জন্যও তৈরি হচ্ছি।

প্রশ্ন: ইংল্যান্ডের আবহাওয়া মুহূর্তের মধ্যে বদলায়। তার জন্য বিশেষ কোনও প্রস্তুতি?

শঙ্কর: অবশ্যই। ইংল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। গত বছর ভারত ‘এ’-র হয়ে খেলতে গিয়েছিলাম। তখনই দেখেছি যে, কখনও আকাশ মেঘলা। কখনও প্রচণ্ড রোদ। কোনও বল সুইং করছে। কোনও বল করছে না। তার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি চলছে।

প্রশ্ন: কী রকম?

শঙ্কর: স্থানীয় বোলারদের বলে দিয়েছি, নতুন বল এবং পুরনো বলে অনুশীলন করাতে। কিন্তু আমাকে বলতে হবে না ওরা নতুন বলে বোলিং করছে না কি পুরনো বলে। ভেবে দেখলাম চেন্নাইয়ের আবহাওয়ায় এর চেয়ে ভাল ইংল্যান্ড পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার অনুশীলন করতে পারব না।

আরও পড়ুন: কোহালি থেকে বুমরা, ভারতের বিশ্বকাপ দলের কোন বিভাগে সেরা কারা

প্রশ্ন: সদ্য শেষ হল ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তান ওয়ান ডে সিরিজ। শেষ চার ম্যাচে ইনিংস প্রতি ৩৫০ রানের মতো উঠছে। কী মনে হচ্ছে আপনার?

শঙ্কর: ইংল্যান্ড-পাকিস্তান সিরিজের প্রত্যেকটি ম্যাচ আমি দেখেছি। এমনকি আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের হাইলাইটসও নিয়মিত দেখেছি। সেখান থেকে আন্দাজ পেয়েছি যে নতুন বল নড়াচড়া করছে। অথচ প্রচুর রানও উঠছে। কিন্তু পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত মানাতে না পারলে সমস্যা হবেই। কারণ, যদি দ্রুত উইকেট পড়ার পরে আমাকে নামায়, তখন তো নতুন বল সামলাতেই হবে। তাই সব পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকছি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

প্রশ্ন: মাত্র ন’টি ম্যাচ খেলেছেন। ১০ নম্বর ম্যাচটি হতে পারে বিশ্বকাপে। কত বড় চাপ এটা?

শঙ্কর: জাতীয় দলের হয়ে যে কোনও ম্যাচ খেলার সময়েই চাপ থাকবে। চাপ না নিলে কখনওই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সম্ভব নয়। তাই চাপকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই না। সব সময় চিন্তা করি, কী ভাবে উন্নতি করা যায়। আমি জানি, কী ভাবে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে হয়। নিজের ভাল ইনিংসগুলোর ভিডিয়ো দেখি। ভাল সিনেমা দেখি। পুরনো দিনের কথা মনে করি, যখন আমি কিছুই ছিলাম না। সাধারণ একটি ছেলে। জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্নই এত দূর নিয়ে এসেছে আমাকে। সে দিনগুলোর কথা মনে করলে এমনতিই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।

প্রশ্ন: আইপিএলে ১৫ ম্যাচে ২৪৪ রান ও একটি উইকেট। বিশ্বকাপের আগে এই ফর্ম নিয়ে আদৌ খুশি?

শঙ্কর: অনেকে হয়তো ভাবছেন, আইপিএলে আমার পারফরম্যান্স ভাল ছিল না। কিন্তু আমি তা মনে করি না। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে তিন অথবা চার নম্বরে ব্যাট করেছি ঠিকই, কিন্তু বেশির ভাব ম্যাচেই ১৩-১৪ ওভারের পরে ব্যাট করতে নেমেছি। তাই কত রান করেছি তা নিয়ে ভাবছি না। দল আমার পারফরম্যান্সে কতটা উপকৃত হল সেটাই আসল।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপে যদি এ রকম পরিস্থিতি আসে যেখানে মাত্র ছয়, সাত ওভার হাতে পাচ্ছেন? তার জন্য তৈরি?

শঙ্কর: অবশ্যই। স্লগ ওভারে ব্যাট করার অভ্যাস আছে। নিদাহাস ট্রফির সেই ইনিংসের কথা বাদ দিলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও আইপিএলে স্লগ ওভারে ব্যাট করেছি। তাই বিশ্বকাপে এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঘাবড়ানোর কোনও কারণই দেখছি না। তা ছাড়া, বড় শট নিতে আমি পছন্দ করি। স্লগ ওভারে যা করতে কোনও বাধা থাকবে না।

প্রশ্ন: ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় আপনার মিডিয়াম পেস কাজে লাগতে পারে। অনেকে মনে করছেন, মোহিন্দর অমরনাথের ভূমিকা পালন করার ক্ষমতা রয়েছে আপনার। সেটা কী ভাবে দেখছেন?

শঙ্কর: অমরনাথ স্যরের সঙ্গে কোনও তুলনা চাই না। ওঁর জায়গায় পৌঁছতে প্রচুর সময় লাগবে। তবে হ্যাঁ, ইংল্যান্ডের আবহাওয়া আমাকে সাহায্য করবে। এত দিন শুধু আউটসুইং করাতাম। বিশ্বকাপের আগে ইংসুইং রপ্ত করে নিয়েছি। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ওয়ান ডে-তে শেষ ওভারে বল করে দলকে জিতিয়েছিলাম। সেটাই আমার অনুপ্রেরণা। নতুন বল হাতে তুলে দিলেও কোনও অসুবিধা নেই।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপ দলে আপনার নাম ঘোষণা হওয়ার পরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এমনকি এমএসকে প্রসাদ আপনার অলরাউন্ড দক্ষতার প্রশংসা করে থ্রি ডি ক্রিকেটারের তকমা দিয়েছেন। যা নিয়ে ব্যঙ্গ করতে ছাড়েননি অম্বাতি রায়ডুরা। কী ভাবে সামলেছেন নিজেকে?

শঙ্কর: বুঝতে পেরেছিলাম যে, যোগ্যতা আছে বলেই সুযোগ পেয়েছি। তাই বিতর্ক তৈরি হলেও আমি শুনেও শুনতাম না। জেনেও না জানার ভান করতাম। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম। খবরের কাগজ পড়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু কখনও হতাশ হইনি। কী ভাবে এ ধরনের বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে হয় তা জানতাম।

প্রশ্ন: বিতর্কের পরে তাগিদটা বেড়েছে নিজেকে প্রমাণ করার?

শঙ্কর: একেবারেই না। নিজেকে প্রমাণ করার চিন্তার থেকেও বেশি মাথায় ঘুরছে কী ভাবে দেশকে বিশ্বকাপ এনে দেব। আমি বরাবরই শান্ত ছেলে। এ সব আমাকে কখনওই নাড়াতে পারবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE