টানটান নাটক, ধন্দ এবং চরম অনিশ্চয়তার পর এশিয়া কাপে অবশেষে পাকিস্তান বনাম আমিরশাহি ম্যাচ হয়েছে। পাকিস্তান জিতে সুপার ফোরে আবার ভারতের মুখোমুখি হবে। সব ঠিকঠাক মিটেছে মানেই অবশ্য ‘সব ভাল যার শেষ ভাল’, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।
নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে, ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্ট পাকিস্তান বোর্ডের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন কিনা, তা নিয়ে। ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ সংবাদপত্র এবং ‘ক্রিকবাজ়’ ওয়েব সাইট জানাচ্ছে, পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাননি। তাদের দাবি, যে বৈঠকের কথা বলা হয়েছে, সেখানে ম্যাচ রেফারি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন মাত্র। মূলত ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পিসিবি বৃহস্পতিবার দাবি করেছিল, ম্যাচের আগে পাইক্রফ্ট পাকিস্তান ম্যানেজার এবং অধিনায়কের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তার পরেই আমিরশাহি ম্যাচ খেলতে রাজি হয়েছে তারা। বিবৃতি জারি করে এবং সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা জানায় তারা।
পিসিবি প্রথমে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে। দেখা গিয়েছে, পাকিস্তানের অধিনায়ক সলমন আঘা, ম্যানেজার নাভিদ আক্রম চিমা, কোচ মাইক হেসন এবং আরও দু’-একজন কর্তার সঙ্গে দুবাই স্টেডিয়াম সংলগ্ন একটি ঘরে কথা বলছেন পাইক্রফ্ট। সেখানেই জ়িম্বাবোয়ের প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা ম্যাচ রেফারি ক্ষমা চান বলে দাবি করেছে পাকিস্তান।
তবে সেই ভিডিয়োয় কোনও আওয়াজ নেই। ফলে কে কী বলছেন, ওই ভিডিয়ো থেকে তা জানার কোনও উপায় নেই। অর্থাৎ পাইক্রফ্ট ক্ষমা চেয়েছেন না ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা বোঝা যাচ্ছে না। পাইক্রফ্টের আচরণেও ক্ষমা চাওয়ার কোনও ভঙ্গিমা লক্ষ করা যায়নি। ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’কে আইসিসি-র এক সূত্র বলেছেন, “ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। বিশেষ করে এমন একজনের থেকে যার কোনও দোষই নেই।”
গত দু’দিন ধরে আইসিসি এবং পিসিবির মধ্যে একাধিক ই-মেল চালাচালি, ফোনে কথা এবং ভিডিয়ো কল হয়েছে। সমস্যা ছিল একজনকে নিয়েই, তিনি পাইক্রফ্ট। পাকিস্তান চেয়েছিল তাঁকে সরিয়ে দিতে। আইসিসি গোড়া থেকেই এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। তারা সাফ জানিয়ে দেয়, কোনও অবস্থাতেই পাইক্রফ্টকে সরানো হবে না।
আইসিসি-র বক্তব্য, তাদের কাজই হল ম্যাচ পরিচালকদের পাশে থাকা। পাকিস্তানের চাপে পাইক্রফ্টকে সরিয়ে দেওয়া হলে আইসিসি-র স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। পাশাপাশি এটাও প্রমাণিত হবে, আইসিসি পাকিস্তানকে ভয় পায়! খুব খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। আইসিসি স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, ম্যাচ রেফারি ঠিক করা পুরোপুরি আইসিসি-র দায়িত্ব। কোনও দেশের চাপের কাছে নতিস্বীকার করা হবে না।
শুধু ম্যাচ পরিচালকের পাশেই দাঁড়ায়নি আইসিসি। তারা তদন্ত করার পরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, পাইক্রফ্ট কোনও দোষ করেননি। পিসিবিকে ই-মেল করে জানিয়েও দেওয়া হয়, তাঁকে বদলে দেওয়ার কোনও কারণ নেই। পিসিবি প্রস্তাব দেয় অন্তত বুধবারের ম্যাচে পাইক্রফ্টের জায়গায় আর এক ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসনকে দেওয়ার। সেই প্রস্তাবও খারিজ হয়ে যায়।
আইসিসি-র তরফে পিসিবির সঙ্গে কথা বলেছেন সিইও সংযোগ গুপ্তা। পিসিবি-র প্রতিনিধিত্ব করছিলেন মহসিন নকভি এবং সলমন নাসির। পিসিবি দাবি তুলেছিল, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে, ম্যাচের সময় এবং ম্যাচের পরের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে তদন্ত করতে। আইসিসি জানতে চায়, কেন এই তদন্ত করা হবে, কার বিরুদ্ধে এবং কোন অপরাধের কারণে? পিসিবি এখনও সেই ই-মেলের জবাব দিতে পারেনি। ফলে পাকিস্তান বোর্ড বিবৃতিতে আইসিসি-র যে তদন্তের কথা উল্লেখ করেছে, সেটাও হবে কি না তা স্পষ্ট নয়। পিসিবি-র উত্তর পেলে তবেই আইসিসি তদন্ত করার আগ্রহ দেখাবে।
আরও পড়ুন:
লাহোরে রামিজ রাজা এবং নাজম শেট্টির সঙ্গে বৈঠকের পর পিসিবি চেয়ারম্যান নকভি বলেছিলেন, “ক্রিকেট এবং রাজনীতি একসঙ্গে চলতে পারে না। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ থেকেই এই সঙ্কট চলছে। পাইক্রফ্টের আচরণ নিয়ে আমাদের সমস্যা ছিল। তবে পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ায় সমস্যার সমাধান হয়েছে।” বিভিন্ন তথ্য অবশ্য বার বার এটাই তুলে ধরছে যে, পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাইনি। পাকিস্তানই বিবৃতিতে ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে।
যতই হুমকি দেওয়া হোক, পাকিস্তানের পক্ষে এশিয়া কাপ থেকে নাম তুলে নেওয়া একেবারেই সহজ ছিল না। এর পরে আইনি সমস্যা, আদালতে মামলা এবং লম্বা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে যেত। পাশাপাশি আর্থিক ভাবেও বড় ধাক্কা খেত পাকিস্তান। তা অবশ্য হয়নি।