লর্ডসের পিচে দাঁড়াতেই পারছেন না ব্যাটারেরা। দ্বিতীয় দিনের শেষ ওভারেও বল পিচে পড়ে একহাত সুইং করছে। পিচ ও পরিবেশের সুবিধা কাজে লাগালেন অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা দু’দলের বোলারেরাই। আরও একটা দিন তাঁদের দখলে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দু’দিনে ২৮ উইকেট পড়ল। অস্ট্রেলিয়া কিছুটা এগিয়ে থাকলেও যা পরিস্থিতি তাতে যে কোনও দলই খেলা জিততে পারে।
প্রথম ইনিংসে ৭৪ রানের লিড পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এই উইকেটে যার গুরুত্ব অনেক বেশি। কিন্তু সেই লিডের সুবিধা খুব একটা কাজে লাগাতে পারল না তারা। দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটারেরা ব্যর্থ। প্রথম ইনিংসে তবু স্টিভ স্মিথ ও বিউ ওয়েবস্টার অর্ধশতরান করেছিলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে সেটাও হল না। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ছয় ব্যাটারের মধ্যে মার্নাশ লাবুশেন (২২) ও স্মিথ (১৩) ছাড়া কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছোতে পারেননি। ৭৩ রানে ৭ উইকেট পড়ে গিয়েছিল তাদের। সেই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে ১৪৭ রান এগিয়ে তারা।
অস্ট্রেলিয়াকে অল আউট করার সুযোগ পেয়েছিলেন টেম্বা বাভুমারা। কিন্তু সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন হল অসিদের। কেন তারা ক্রিকেটে এত শক্তিশালী তা আরও এক বার দেখাল অস্ট্রেলিয়া। অষ্টম উইকেটে ৬১ রানের জুটি হল অ্যালেক্স ক্যারে ও মিচেল স্টার্কের মধ্যে। প্রথম ইনিংসে ভাল শুরু করেও বাজে শট খেলে আউট হয়েছিলেন ক্যারে। এই ইনিংসে দায়িত্ব নিয়ে খেললেন তিনি। তাঁকে সঙ্গ দিলেন স্টার্ক। দুই ব্যাটার দলের লিড ২০০ পার করালেন। অস্ট্রেলিয়ার লেজ (টেল এন্ডার) সমস্যায় ফেলল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। দিনের শেষ দিকে ৪৩ রান করে আউট হলেন ক্যারে। স্টার্কও আউট হতেন। শেষ ওভারে তাঁর ক্যাচ ছাড়েন মার্কো জানসেন। এই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাচিং দেখার মতো। শুধু জানসেনই একটা ক্যাচ ছেড়ে দিলেন।
দ্বিতীয় দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ৮ উইকেটে ১৪৪। দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে ২১৮ রান এগিয়ে তারা। অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে থাকলেও লর্ডসে সাধারণত তৃতীয় ও চতুর্থ দিনের পিচ ব্যাটিংয়ের জন্য সবচেয়ে ভাল। তাই যদি তৃতীয় দিন অস্ট্রেলিয়ার বাকি দুই উইকেট দক্ষিণ আফ্রিকা তাড়াতাড়ি ফেলে দিতে পারে তা হলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ রয়েছে তাদের। তবে যা পরিস্থিতি তাতে শুক্রবারই এই ম্যাচের ফয়সালা হয়ে যাওয়ার কথা।
৪ উইকেটে ৪৩ রান থেকে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের প্রথম কাজ ছিল, সকালের সেশন পার করা। কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জশ হেজ়লউডের সামনে তা সহজ ছিল না। নিজেদের ডিফেন্সে ভরসা রাখেন দুই প্রোটিয়া ব্যাটার বাভুমা ও ডেভিড বেডিংহ্যাম। অহেতুক ঝুঁকি নেননি তাঁরা। সময় নিয়ে খেলেছেন। তাঁরা জানতেন বল একটু পুরনো হলে রান আসবে। সেটাই হল। ৬৪ রানের জুটি হয় বাভুমা ও বেডিংহ্যামের মধ্যে। সেই জুটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে ম্যাচে ফেরায়।
আরও পড়ুন:
ধীরে ধীরে হাত খোলা শুরু করেন বাভুমা। কামিন্সের একটা বলে পুল করে ছক্কা মারেন তিনি। সেই শট দেখে কামিন্সই একটু অবাক হয়ে যান। ছক্কা মারার পর বাভুমা হয়তো একটু ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। নইলে তার পরেই কভার দিয়ে হাওয়ায় শট খেলতেন না তিনি। ঝাঁপিয়ে ভাল ক্যাচ ধরেন মার্নাশ লাবুশেন। ৩৬ রান করে আউট হন বাভুমা।
অধিনায়ক আউট হওয়ার পর বেডিংহ্যাম জুটি বাঁধেন উইকেটরক্ষক কাইল ভেরেইনির সঙ্গে। দলের রান ১০০ পার করেন তাঁরা। মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ছিল ৫ উইকেটে ১২১। বিরতির পর বৃষ্টি হয়। তাতে খেলা কয়েক মিনিট বন্ধ থাকে। খেলা শুরুর পর বেশি ক্ষণ টিকতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। প্রথমে ভেরেইনিকে আউট করেন প্যাট কামিন্স। সেই ওভারেই তিনি ফেরান মার্কো জানসেনকে। এক ওভার জোড়া ধাক্কা থেকে ফিরতে পারেনি প্রোটিয়ারা। দলের ইনিংস টেনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল বেডিংহ্যামের। ৪৫ রানের মাথায় তাঁকে আউট করেন কামিন্স। তার পরে দু’ওভারও টিকতে পারেনি দল। শেষ উইকেটও নেন কামিন্স। বিরতির পর ৫ উইকেটের মধ্যে ৪টেই তাঁর। ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে টেস্টে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন অসি অধিনায়ক।