এ বার আইপিএলেও গড়াপেটার ছোঁয়া। প্রতিযোগিতার ১০টি দলকে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। হায়দরাবাদের একটি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে বোর্ড। সেখানে বলা হয়েছে, দলের মালিক, ক্রিকেটার, কোচ, সাপোর্ট স্টাফ, এমনকি ধারাভাষ্যকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন সেই ব্যবসায়ী। তাই সকলকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ‘দুর্নীতি দমন নিরাপত্তা ইউনিট’ পুরো বিষয়ের উপর নজর রেখেছে। তাদের মতে, হায়দরাবাদের সেই ব্যক্তির সঙ্গে বুকিদের যোগাযোগ রয়েছে। আগেও অনেক বার গড়াপেটার চেষ্টা করেছেন সেই ব্যবসায়ী। এ বারও সেই চেষ্টা করছেন তিনি। তাই আইপিএলের প্রতিটি দলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনও ভাবেই যাতে সেই ব্যবসায়ী দলের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না করা হয়।
দলগুলিকে জানানো হয়েছে, ওই ব্যবসায়ী মূলত দামী উপহার দেওয়ার চেষ্টা করেন। তার মধ্যে সোনার গয়নাও রয়েছে। প্রথমে ক্রিকেটারদের কাছে তিনি এক ভক্ত হিসাবে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান। এই ভাবে ক্রিকেটারদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভাল করার চেষ্টা করেন তিনি। তার পরে ক্রিকেটারদের লোভনীয় প্রস্তাব দেন তিনি। শুধু ক্রিকেটারদের নয়, তাঁদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন ওই ব্যক্তি। বিদেশে ক্রিকেটারদের আত্মীয়দের সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা করেন তিনি। তাই ক্রিকেটারদের অনেক বেশি সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বোর্ডের ‘দুর্নীতি দমন নিরাপত্তা ইউনিট’ জানিয়েছে, এ বারের আইপিএলে অনেক ম্যাচে গ্যালারিতে দেখা গিয়েছে ওই ব্যবসায়ীকে। এমনকি, বিভিন্ন দলের হোটেলেও গিয়েছেন তিনি। সেই কারণে গড়াপেটার আশঙ্কা আরও বাড়ছে। দলগুলিকে জানানো হয়েছে, কোনও বিষয়ে সন্দেহ হলে তারা যেন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এখন প্রযুক্তি অনেক উন্নত। তাই সরাসরি ক্রিকেটারদের কাছে না গিয়েও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব। সেটা যাতে না হয় সে দিকে নজর রাখছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
আরও পড়ুন:
হায়দরাবাদের সেই ব্যবসায়ীর নাম প্রকাশ্যে আনেনি ভারতীয় বোর্ড। বোঝা যাচ্ছে, বিষয়টি গোপন রাখতে চাইছে তারা। নাম প্রকাশ্যে এলে সেই ব্যবসায়ী সতর্ক হয়ে যেতে পারেন। তখন ক্রিকেটার, কোচ, সাপোর্ট স্টাফ, ধারাভাষ্যকার বা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের পদ্ধতি বদলে ফেলতে পারেন তিনি। সেটাই চাইছে না বিসিসিআই।
আইপিএলে ম্যাচ গড়াপেটার অতীত ইতিহাস রয়েছে। ২০১৩ সালে স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য রাজস্থান রয়্যালসের তিন ক্রিকেটার এস শ্রীসন্থ, অজিত চান্ডিলা ও অঙ্কিত চবনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। আজীবন নির্বাসিত হয়েছিলেন তিন ক্রিকেটার। ১১ জন বুকিকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগে দু’বছরের জন্য নির্বাসিত হয়েছিল রাজস্থান রয়্যালস ও চেন্নাই সুপার কিংস। চেন্নাইয়ের মালিক এন শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে গড়াপেটার অভিযোগ তুলেছেন আইপিএলের ‘জনক’ ললিত মোদী। আইপিএল তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। তাঁর অভিযোগ, নিলাম থেকে শুরু করে ম্যাচ, সব গড়াপেটা করতেন শ্রীনিবাসন। রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ক্রিকেটারও অভিযোগ করেছেন, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন বুকিরা।
অতীত ইতিহাস থাকায় এ বার বেশি সতর্ক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। কোনও ভাবেই যাতে ম্যাচ গড়াপেটার ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে নজর রয়েছে তাদের। এখন ম্যাচ গড়াপেটা নিয়ে খুব কড়া আইসিসি। তাই কোনও লিগে এই ঘটনা ঘটলে সমস্যায় পড়তে পারে সেই লিগ। আইপিএল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সোনার ডিম পাড়া হাঁস। তাই এই লিগের গায়ে কালির দাগ লাগতে দিতে চাইছে না তারা। সেই কারণেই দলগুলিকে সতর্ক করেছে বিসিসিআই।