ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের টেস্ট দল। ছবি: এক্স।
টেস্ট ক্রিকেট জনপ্রিয় করে তুলতে বিশেষ আর্থিক তহবিল গড়েছে আইসিসি। টেস্ট পিছু ক্রিকেটারেরা যাতে ১০ হাজার ডলার (প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা) পান, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিদায়ী কর্তা জনি গ্রেভ মনে করেন, এই উদ্যোগ নেওয়া হলেও টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচানো যাবে না।
টেস্ট খেলিয়ে দেশগুলির মধ্যে যারা আগ্রহ হারিয়েছে তাদের মধ্যে সবার আগে রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েডের আমলে টেস্টে দাপট দেখানো দেশের হয়ে এখন প্রথম সারির বেশির ভাগ ক্রিকেটারই খেলেন না। তাঁরা আগ্রহী দেশ-বিদেশে ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি লিগ খেলতে। তাই গ্রেভের মতে, এই তহবিল স্রেফ নজর কাড়ার উদ্যোগ ছাড়া আর কিছু নয়।
গ্রেভ বলেছেন, “ক্রিকেট খেলাটাকে লিগের থেকেও বড় করে ভাবতে হবে। আরও বেশি ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি আনতে হবে। বিগ থ্রি-র (ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া) থেকে ইতিবাচক আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। উদ্যোগটা ভাল। কিন্তু নজর কেড়ে নেওয়ার প্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়। এই তহবিলে কিছুই বদলাবে না।”
তিনি যোগ করেছেন, “১০ হাজার ডলার ম্যাচ ফি দিয়ে স্রেফ নজর কাড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এখনই ক্রিকেটারদের ১০ হাজার ডলার ম্যাচ ফি দিই। যখন আইসিসি ঘোষণাটা করল তখন চুপিসারে হেসেছিলাম। ভাবছিলাম, যখন আমাদের ক্রিকেটারেরা একই টাকা পায়, তখন এই টাকায় কী ভাবে বাকিদের মধ্যে টেস্ট খেলার আগ্রহ এতে বাড়ানো যাবে! আমাদের দেশে কোনও বদল আসবে না।”
গ্রেভের মতে, টেস্টকে জনপ্রিয় করে তুলতে আইসিসি-র উচিত আরও বেশি করে তিন ম্যাচের সিরিজ় আয়োজন করা, টেস্টের জন্য নির্দিষ্ট সূচি তৈরি করা এবং আরও বেশি করে ‘এ’ দলের সফর করানো। তিনি বলেছেন, “২৫ বছরে এমন কারও সঙ্গে কথা বলিনি যে বলেছে কাউন্টি ক্রিকেট আর টেস্ট ক্রিকেট একই রকম। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা। টেস্ট জনপ্রিয় করতে আরও বেশি ‘এ’ দলের সফর দরকার। বিদেশের মাটিতে খেলতে হবে।”
উল্লেখ্য, টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশের। বিক্রি হয় না টিকিট। অধিকাংশ সময়ই টেস্ট খেলা হয় প্রায় ফাঁকা মাঠে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আসার পর ক্রিকেটারদের একটা অংশও টেস্ট খেলতে আগ্রহী নন। তবু ক্রিকেটের স্বার্থেই টেস্টকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় আইসিসি। এ জন্য ১.৫ কোটি ডলারের (প্রায় ১২৬ কোটি টাকা) একটি তহবিল তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। আইসিসির এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)।
টেস্টে ম্যাচ ফি বৃদ্ধি করে ক্রিকেটারদের আকৃষ্ট করাই মূল লক্ষ্য আইসিসির। ক্রিকেটারেরা বেশি রোজগারের আশায় শুধু টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি লিগ খেলুক, তা চান না আইসিসি কর্তারা। একই সঙ্গে ক্রিকেটীয় প্রতিভার যথাযথ বিকাশ চান তাঁরা। টেস্টের জন্য বিশেষ তহবিল তৈরির প্রস্তাব প্রথমে দিয়েছিল সিএ। তাদের প্রস্তাবকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেছে বিসিসিআই। সমর্থন করেছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডও (ইসিবি)।
আইসিসির এক কর্তা বলেছেন, ‘‘আমরা চাই টেস্ট ক্রিকেটে ন্যূনতম ম্যাচ ফি বেঁধে দিতে। একটি টেস্ট খেলে এক ক্রিকেটার অন্তত ১০ হাজার ডলার (প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা) পাক। যে সব দেশের বোর্ডের আর্থিক সমস্যা রয়েছে, তাদের বিদেশ সফরের ক্ষেত্রেও সাহায্য করা হবে।’’ আইসিসি প্রস্তাব নেমে নেওয়ায় খুশি সিএ। সংস্থার চেয়ারম্যান মাইক বেয়ার্ড প্রথম এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটের জন্য তহবিল তৈরির যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, সেটা দুর্দান্ত। আমরা চাই টেস্ট নিয়ে আগ্রহ ফিরে আসুক। ইতিহাস এবং ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে হবে আমাদের। আমরা চাই সাদা বলের ক্রিকেটের পাশে লাল বলের ক্রিকেটও থাকুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy