আইপিএলে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ নিয়ম আসার পর থেকেই প্রতিটি দল বাড়তি আগ্রাসনের রাস্তায় হেঁটেছে। সহজ মন্ত্র হল, ‘পাওয়ার প্লে কাজে লাগাও, চালিয়ে খেলা থামিয়ো না’। চলতি আইপিএলে সব দলই এই মন্ত্র কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে। তবে সবচেয়ে ভাল পেরেছে গুজরাতই। তারা প্রমাণ করে দিয়েছে, এই আইপিএলে তাদের টপ অর্ডারই সেরা। শুক্রবার গুজরাতের কাছে ৩৮ রানে হেরে আইপিএল থেকে প্রায় বিদায় নিল হায়দরাবাদ।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টপ অর্ডারই যে সবচেয়ে বেশি রান করবে এটা প্রত্যাশিত। খেলাটার পরিকল্পনাই শুরু হয় টপ অর্ডারকে ধরে। গুজরাত সেটাকেই অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। এমন নয় যে তাদের হাতে বড় মাপের ব্যাটার রয়েছে। কিন্তু দুই দেশি এবং এক বিদেশি ব্যাটারের উপর তাদের যে অগাধ আস্থা, সেটাই প্রতি ম্যাচে দাম দিচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলছে, চলতি আইপিএলে গুজরাতের টপ অর্ডারের তিন জন, অর্থাৎ সাই সুদর্শন, শুভমন গিল এবং জস বাটলার মিলে করেছেন ১৪৩৯ রান। দল করেছে ১৯০৮ রান। অর্থাৎ দলের মোট রানের ৭৫.৪১ শতাংশ করেছেন এই তিন জন।
কিছু কিছু দলের মিডল অর্ডার শক্তিশালী হলেও সব দলেরই টপ অর্ডার কোনও না কোনও ভাবে অবদান রেখেছে। লখনউ, বেঙ্গালুরু, পঞ্জাবেরও টপ অর্ডার ভাল। কিন্তু গুজরাতের ধারেকাছে কেউ নেই। লখনউয়ের টপ অর্ডার (মিচেল মার্শ, এডেন মার্করাম, নিকোলাস পুরান) দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। কিছু ম্যাচে তাদের মিডল অর্ডার ব্যাটারেরা সুযোগ পেলেও বেশি রান করতে পারেনি। গুজরাতের সঙ্গে পার্থক্য হল, শুভমনের দলের টপ অর্ডার এতটাই ভাল যে মিডল অর্ডারের ব্যাটারদের ব্যাট করার সুযোগই আসেনি।
রাজস্থানের হয়ে প্রভূত সাফল্য পেয়েছেন জস বাটলার। তাঁকে দলে নেওয়ার পরেও গুজরাত নিজেদের দুই দেশীয় ব্যাটারের উপর আস্থা হারায়নি। ওপেন করতে পাঠানো হচ্ছে সুদর্শন এবং শুভমনকে। বাটলার নামছেন তিনে। মনে রাখতে হবে, তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বরাবর ওপেন করেছেন। তবু সদ্য ইংল্যান্ডের নেতৃত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়া বাটলার ক্রিকেটজীবনের কঠিন সময়ে এই পরিবর্তন মেনে নিতে দ্বিধা করেননি।
আইপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় এখন সবার উপরে সুদর্শন (৫০৪)। তিন এবং চারে শুভমন (৪৭০) এবং বাটলার (৪৬৫)। তিন জনেরই স্ট্রাইক রেট ১৫০-র উপরে। পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট যে এ বারের আইপিএলে তাঁদের দাপট ঠিক কতখানি।
এই মডেল অতীতে দেখা গিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংসের ক্ষেত্রে। ২০২১ এবং ২০২৩ সালে তারা আইপিএল জিতেছে টপ অর্ডারের উপর নির্ভর করে। তবে তারাও গুজরাতের প্রথম তিন ব্যাটারের মতো এতটা প্রভাব ফেলতে পারেনি।
আইপিএল কেরিয়ারের দীর্ঘ সময় চেন্নাইয়ে কাটানোর কারণে নেহরা জানেন, কী ভাবে তারা সাফল্য পেয়েছে। কোচিংয়ের সময় সেটাই অনুসরণ করার চেষ্টা করেছেন নেহরা। অকারণে বড় নামের পিছনে না ছুটে গুজরাত ভরসা রেখেছে স্থানীয়দের উপরে। সঙ্গে রয়েছে ঝুঁকিহীন ক্রিকেট। অর্থাৎ প্রতি বলে ছয় মারার দিকে জোর না দিয়ে, ফাঁক খুঁজে রান করার। সে কারণেই সুদর্শন মাত্র ১৬টি ছয় মারলেও, ৫৫টি চার মেরেছেন। শুভমন এবং বাটলার মেরেছেন যথাক্রমে ৪৮ এবং ৪৬টি চার। এ বারের আইপিএলে সব ম্যাচে গুজরাতের প্রথম তিন ব্যাটারের অন্তত এক জন অর্ধশতরান করেছেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে, গুজরাতের টপ অর্ডার যদি কোনও দিন ব্যর্থ হয়, তা হলে কী হবে? মিডল অর্ডার বা বোলারেরা সামলাতে পারবেন? এখনও সেই মুহূর্ত আসেনি। ওয়াশিংটন সুন্দর, রাহুল তেওটিয়া থেকে মহম্মদ সিরাজ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, ইশান্ত শর্মারা ভরসা দিয়েছেন দলকে।
আরও পড়ুন:
শুক্রবার এমন একটা দলের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল গুজরাত, যাদের প্রথম তিন ব্যাটারকে নিয়ে আইপিএলের আগে হইচই হয়েছিল। তবে সেই ফানুস চুপসে গিয়েছে। এ দিন হায়দরাবাদের প্রথম তিন ব্যাটারের অবদান মোটে ১০৭। তা-ও যেখানে দলকে তাড়া করতে হত ২২৫ রান। স্বাভাবিক ভাবেই বাকিদের উপরে বাড়তি চাপ তৈরি হয়। সেই চাপ কাটিয়ে জিততেও পারল না হায়দরাবাদ। ১০ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে আইপিএল থেকে প্রায় বিদায় হয়ে গেল তাদের।
আগে ব্যাট করে গুজরাত তুলেছিল ২২৪/৬। শুভমন (৭৬) এবং বাটলার (৬৪) অর্ধশতরান করেন। অল্পের জন্য অর্ধশতরান করতে পারেননি সুদর্শন (৪৮)।