Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
CAB

Anustup Majumdar: নতুন করে আর প্রমাণ করার কিছু নেই, বলে দিলেন নায়ক

সাদা বলের ক্রিকেট মানচিত্র থেকে প্রায় মুছেই ফেলা হচ্ছিল তাঁর নাম। কিন্তু অনুষ্টুপ অপেক্ষা করছিলেন একটি সুযোগের।

সেঞ্চুরির পর অনুষ্টুপ।

সেঞ্চুরির পর অনুষ্টুপ। নিজস্ব চিত্র।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:২১
Share: Save:

তিনিও এক নীরব যোদ্ধা। ভারতীয় দলে ঋদ্ধিমান সাহা যে রকম ব্যাট হাতে জবাব দিয়ে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন, ঠিক সে ভাবেই বাংলার ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের চুপ করিয়ে দিয়েছেন অনুষ্টুপ মজুমদার। দল যখনই বিপদে পড়েছে, তিনিই ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনালে দলকে জেতানোর পরের মরসুমে অধিনায়ক নির্বাচিত করা হয় তাঁকে। দল ভাল খেলতে না পারায় নেতৃত্বের মুকুট তো কেড়ে নেওয়া হয়েইছে, দল থেকেও বাদ দেওয়া হয় তাঁকে। সাদা বলের ক্রিকেট মানচিত্র থেকে প্রায় মুছেই ফেলা হচ্ছিল তাঁর নাম। কিন্তু অনুষ্টুপ অপেক্ষা করছিলেন একটি সুযোগের।

বিজয় হজারে ট্রফিতে বাংলা দলের যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে, রবিবার মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ফিরিয়ে আনা হল অনুষ্টুপকে। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১১০ রান করে দলকে গুরুত্বপূর্ণ জয় এনে দিলেন তিনি-ই। আরও এক বার বিপদ থেকে টেনে তুললেন বাংলা দলকে।

ম্যাচ শেষে তাঁর সঙ্গে যখন যোগাযোগ করা হল, তখন এমন ভাবে কথা বলছিলেন যেন এই ইনিংস তাঁর মধ্যে কোনও প্রভাবই ফেলেনি। বরাবরই ব্যক্তিকে পিছনে সরিয়ে দলকে মর্যাদা দিয়েছেন অনুষ্টুপ। তাই এ দিনও তাঁর বলতে দ্বিধা নেই, ‘‘দলের প্রয়োজনে একটা ভাল ইনিংস উপহার দিতে পেরে স্বস্তিবোধ করছি।’’ তবুও তাঁর কথা বলার মধ্যে কোথাও লুকিয়েছিল দল থেকে বাদ পড়ার যন্ত্রণা। বলছিলেন, ‘‘টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পাইনি। এখানেও প্রথম তিনটি ম্যাচে বাইরে বসেছিলাম। রান করার বাড়তি তাগিদ ছিলই। প্রচণ্ড চাপের মধ্যে এ রকম একটি ইনিংস উপহার দিতে পেরে ভাল লাগছে।’’

বলা হচ্ছিল, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অনুষ্টুপকে আর ভাবা হচ্ছে না। এই ইনিংস কি সেই সমালোচকদের জবাব? অনুষ্টুপের সাফ উত্তর,‘‘সত্যি কথা বলতে, কারও কাছে নিজেকে প্রমাণ করার আর কিছু নেই। সেই বয়সও নেই। তবে হ্যাঁ, নিজের কাছে এটা প্রমাণ করতে চেয়েছি যে আমি এখনও ফুরিয়ে যাইনি।’’

চলতি মরসুমে নেতৃত্বের মুকুট খোয়ানোর পরে বেশ ভেঙে পড়েছিলেন অনুষ্টুপ। নিজেকে প্রশ্ন করতে শুরু করেছিলেন, এই পরিস্থিতির জন্য কি তিনি দায়ী? তবে অনুষ্টুপ জানেন কী ভাবে দুশ্চিন্তা এড়ানো যায়। মন খারাপ হলে সঙ্গ দেয় তাঁর গিটার। বই পড়ার শখও তাঁর ছোটবেলা থেকে। তবুও কিছু ক্ষত থাকে যা মেরামত হয় মাঠেই। অনুষ্টুপ তাই অপেক্ষা করেছিলেন এই দিনটির জন্য। বলে দিলেন, ‘‘অধিনায়কত্ব হারানোর পরে সত্যি খারাপ লেগেছিল। তার চেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছি দল থেকে বাদ পড়ায়। বুঝতে পারিনি কেন বাদ দেওয়া হয়েছে।’’ আরও বলেন, ‘‘তবে দল নির্বাচন, নেতৃত্বের মুকুট, এ সব আমার হাতে নেই। আমার হাতে রয়েছে ব্যাট। যতই ঝড়-ঝাপ্টা আসুক, এই ব্যাটই জবাব দেবে। মৌখিক জবাব অথবা কোনও অঙ্গভঙ্গি করে গণমাধ্যমে চর্চার বিষয় হওয়ার মানসিকতা আমার নেই।’’

অনুষ্টুপের এই ইনিংসের পরে গণমাধ্যমে তাঁর সতীর্থ ও বন্ধুরা অভিনন্দন বার্তা দিয়েছেন। অর্ণব নন্দী একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘‘বরাবর ব্যাট দিয়েই জবাব দিয়েছ। আরও এক বার নিজেকে প্রমাণ করলে।’’ প্রাক্তন ক্রিকেটার ঋতম কুণ্ডুও ফেসবুকে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বন্ধুদের বার্তা পেয়ে তাঁর এই লড়াই যেন আরও বিশেষ হয়ে উঠেছে। দিনের নায়কের কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকে যাদের সঙ্গে খেলছি, তারা সব সময় পাশে দাঁড়ায়। সবচেয়ে বড় কথা, ওরা আমার খারাপ সময়ও পাশে ছিল, ভাল সময় তো আছেই। ওদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যও এ ধরনের ইনিংস খেলতে ভালবাসি।’’

কর্নাটকের বিরুদ্ধে মরণ-বাঁচন ম্যাচ মঙ্গলবার। সে ম্যাচে জিতলে শেষ ষোলো নিশ্চিত বাংলার। হেরে গেলে ছিটকে যাবে প্রথম পর্ব থেকে। অনুষ্টুপ যদিও আত্মবিশ্বাসী। শেষে বললেন, ‘‘আমাদের বোলিং বিভাগ কিন্তু দেশের অন্যতম সেরা। পরের ম্যাচে ব্যাটিংটা যদি ঠিক থাকে, আমাদের আটকানো কঠিন হবে।’’

বাংলার সঙ্গেই স্বপ্ন দেখা শুরু অভিজ্ঞ অনুষ্টুপের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE