পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলবে না ভারত। সূত্রের খবর, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইন্ডিয়া চ্যাম্পিয়ন্স দলের ক্রিকেটারেরা। বৃহস্পতিবার ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অফ লেজেন্ডস’ (ডব্লিউসিএল) প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে মুখোমুখি হওয়ার কথা দু’দলের।
প্রতিযোগিতার গ্রুপ পর্বে ভারত বনাম পাকিস্তানের ম্যাচ বাতিল হয়ে গিয়েছিল। ভারতের একাধিক ক্রিকেটার নাম তুলে নেওয়ায় ম্যাচ আয়োজন সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবারের সেমিফাইনালের বিরোধিতা করে ভারতের একটি স্পনসরকারী সংস্থা নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। তার পর ক্রিকেটারেরাও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যুবরাজ সিংহ, শিখর ধাওয়ান, সুরেশ রায়নার মতো ক্রিকেটারেরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে রাজি নন।
ভারতের অধিকাংশ ক্রিকেটারই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে রাজি নন। এই পরিস্থিতিতে সেমিফাইনাল থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিতে পারে ইন্ডিয়া চ্যাম্পিয়ন্স। এর ফলে সরাসরি ফাইনালে উঠে যেতে পারেন শাহিদ আফ্রিদিরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে হারিয়ে গ্রুপ পর্বে চতুর্থ স্থানে শেষ করেছে ভারত। একটি জয়, তিনটি হার এবং একটি ম্যাচ বাতিল হয়েছে। গ্রুপে সবার উপরে শেষ করেছে পাকিস্তান। তারা চারটি ম্যাচ জিতেছে। একটি ম্যাচ বাতিল হয়েছে। প্রতিযোগিতার ফরম্যাট অনুযায়ী প্রথম এবং চতুর্থ স্থানে থাকা দল সেমিফাইনাল খেলবে। সেই মতো ভারত এবং পাকিস্তানের ম্যাচ পড়ে।
প্রতিযোগিতার অন্যতম স্পনসর সংস্থাও জানিয়ে দিয়েছে, পাকিস্তানের কোনও ম্যাচ তারা স্পনসর করবে না। ভ্রমণ বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট ডব্লিউসিএলে আর ভারতের স্পনসর থাকছে না। সংস্থার মালিক নিশান্ত পিট্টি জানিয়েছেন, যুবরাজ সিংহদের পারফরম্যান্সে তাঁরা গর্বিত। কিন্তু পাকিস্তান অন্য প্রতিপক্ষের মতো নয়। সন্ত্রাস এবং ক্রিকেট হাতে হাত মিলিয়ে চলতে পারে না। তাই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সঙ্গে ওই সংস্থা জড়িত থাকছে না।
গ্রুপ পর্বের ম্যাচের আগে দু’দেশের প্রাক্তনদের তীব্র বাদানুবাদও হয়েছে। আফ্রিদি নিশানা করেছিলেন ধাওয়ানকে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে না চেয়ে সবচেয়ে সরব হয়েছিলেন ধাওয়ানই। তিনি সমাজমাধ্যমে জানান যে, এই ম্যাচ খেলবেন না। পাশাপাশি আয়োজকদের ম্যাচ বাতিলের জন্য তাঁরা একটা চিঠিও লেখেন। সেই চিঠিও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন ধাওয়ান। তার পরে আয়োজকদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এই ম্যাচ হচ্ছে না। তার আগে অবশ্য হরভজন সিংহ, রায়না, ইরফান ও ইউসুফ পাঠান জানিয়েছিলেন যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলবেন না। কিন্তু ধাওয়ানের মতো কড়া প্রতিক্রিয়া তাঁরা দেননি।
আফ্রিদির মতে, ধাওয়ানের কারণেই খেলা ভেস্তে গিয়েছে। তিনি বলেন, “খেলা বিভিন্ন দেশের মধ্যে দূরত্ব কমায়। যদি সব কিছুর মধ্যে রাজনীতি চলে আসে তা হলে কী ভাবে আপনি এগোবেন? আলোচনা ছাড়া তো সমস্যা মিটবে না। কিন্তু কিছু করার নেই। একটা পচা ডিম আছে। সে সব নষ্ট করে দিচ্ছে।”
এই প্রথম নয়, এর আগেও সরাসরি কথার লড়াই হয়েছিল আফ্রিদি ও ধাওয়ানের। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর নিজের দেশের সমর্থনে মুখ খুলেছিলেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা। ভারতীয়দের মধ্যে সকলেই পাকিস্তানের নিন্দা করেছিলেন। তার মাঝেই পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে ভারতকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন আফ্রিদি। তার জবাবে ধাওয়ান লিখেছিলেন, “কার্গিলেও তোমাদের হারিয়েছিলাম। এত নীচে নেমেছ, আর কত নামবে? উল্টোপাল্টা মন্তব্য করার চেয়ে নিজের দেশের ভাল হয় এমন কোনও কাজ করো। ভারতীয় সেনাদের নিয়ে আমরা গর্বিত।” আফ্রিদির নেতৃত্বাধীন সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে ধাওয়ান খেলবেন না তা স্পষ্ট ছিল। সেই কারণেই হয়তো আফ্রিদি আবার ধাওয়ানকেই নিশানা করেছিলেন।