Advertisement
E-Paper

অসহায় আত্মসমর্পণ! শেষ দিন সাড়ে ৩ ঘণ্টায় শেষ গম্ভীরের ভারত, ক্লাব স্তরের ক্রিকেট খেলে ঘরে চুনকাম দক্ষিণ আফ্রিকার কাছেও

গৌতম গম্ভীরের জমানায় আরও এক বার লজ্জার মুখোমুখি ভারতীয় দল। নিউ জ়িল্যান্ডের পর আরও এক বার ঘরের মাঠে চুনকাম হতে হল তাদের। এ বার দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে। গুয়াহাটিতে ৪০৮ রানে হারল ভারত।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৩৪
cricket

হতাশ ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর। ছবি: পিটিআই।

মাত্র আট উইকেট হাতে নিয়ে ভারত যে শেষ দিনে গুয়াহাটি টেস্ট বাঁচিয়ে দেবে, এমন স্বপ্ন খুব কম সমর্থকই দেখেছিলেন। তবু মনের মধ্যে ক্ষীণ আশা একটু হলেও বেঁচে ছিল। খেলাটার নাম তো ক্রিকেট। অলৌকিক ঘটনা হয়েই থাকে।

তবে ভারতের ব্যাটারেরা বুধবার ফের প্রমাণ করে দিলেন যে, অলৌকিক বলে কোনও শব্দ তাঁদের অভিধানে নেই। ২০২১-এ সিডনিতে সারা দিন ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়ায় বিরুদ্ধে ম্যাচ বাঁচিয়েছিল ভারত। সেই কাজ যাঁরা করেছিলেন, সেই হনুমা বিহারি দীর্ঘ দিন জাতীয় দলের বাইরে। অপর জন, রবিচন্দ্রন অশ্বিন বিরক্ত হয়ে গত বছরই অস্ট্রেলিয়া সফরে অবসর নিয়ে ফেলেছেন। ম্যাচ বাঁচাতে চাওয়ার নিরিখে কাছাকাছি থাকবে গত ইংল্যান্ড সফরে মহম্মদ সিরাজ, জসপ্রীত বুমরাহদের প্রয়াস। যদিও সেই টেস্ট হারতে হয়েছিল। লর্ডসের সেই পিচ আর গুয়াহাটির পিচে আকাশ-পাতাল তফাত। সিডনি বা লর্ডসে বুক চিতিয়ে লড়াই করলেও, গুয়াহাটিতে অসহায় আত্মসমর্পণ করলেন ভারতের ক্রিকেটারেরা। হারলেন ৪০৮ রানে। রানের নিরিখে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারল ভারত। লক্ষ্য ছিল ৫৪৯ রানের। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ ১৪০ রানে। প্রথম ইনিংসে যে রান তুলেছিল, সেটাও তুলতে পারল না ভারত।

শুধু গুরু গৌতম গম্ভীরের জমানা নয়, ভারতের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসেও এই দিন লজ্জার হয়ে থেকে যাবে। যে ভারত বিষান সিংহ বেদি, ভাগবত চন্দ্রশেখর, এরাপল্লি প্রসন্ন থেকে অনিল কুম্বলে বা হরভজন সিংহের মতো স্পিনারের জন্ম দিয়েছে, সেখানেই নিউ জ়িল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের স্পিনারেরা এসে ভেলকি দেখিয়ে যাচ্ছেন। সেই ২০১৭ সালে স্টিভ ও’কিফকে দিয়ে শুরু। তার পর অজাজ পটেল, মিচেল স্যান্টনার, টম হার্টলে, শোয়েব বশির, সাইমন হারমার— তালিকা নেহাত কম নয়। সকলের একটাই মিল, ভারতে এসে অখ্যাত থেকে বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন। তবু ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাঠে হারানো গিয়েছে। নিউ জ়িল্যান্ড পর এ বার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছেও কচুকাটা হতে হল।

ক্রিকেটারদেরই বা কী করার আছে। যে দলের কোচই এত নেতিবাচক হন, যে দলের কোচ নিজের ক্রিকেটারদের উপরেই ভরসা রাখতে পারেন না, যে কোচ ঘন ঘন প্রথম একাদশ বদলে ফেলেন— তাঁর দলের ক্রিকেটারেরা সাহসী হবেন কী করে? রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, অশ্বিন থাকার সময়ে ভারতীয় দলের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাসটা ছিল, তার কিছুই এখন বেঁচে নেই। না হলে যে সব শট খেলে ব্যাটারেরা আউট হলেন, তা পাড়ার ক্রিকেটেও দেখা যায় না। রক্ষণ বলে কিছু নেই। বোলারের হাত থেকে বল বেরনোর আগেই পা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কোন বোলার এই সুযোগ নেবেন না? দলের সিনিয়র ক্রিকেটারেরা এমন সব ম্যাচে এগিয়ে এসে জুনিয়রদের পরামর্শ দেন। কিন্তু রোহিত, কোহলিদের ছেঁটে ফেলে সেটাও মিটিয়ে দিয়েছেন গম্ভীর। এই দলের সিনিয়রদেরও এমন অবস্থা যে জুনিয়রেরা পরামর্শ চাইতে যেতে লজ্জা পাবেন।

ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম দিনের স্কোরকার্ড।

ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম দিনের স্কোরকার্ড।

যে দলের হাতে গোটা দিনের জন্য আট উইকেট থাকে, তারা যদি প্রথম সেশনেই তিন উইকেট হারায় তা হলে আর কী-ই বা পড়ে থাকে! কুলদীপ যাদবকে হিসাবের বাইরে রাখাই ভাল। তিনি মঙ্গলবার নৈশপ্রহরী হিসাবে নেমেছিলেন। দলের তাবড় তাবড় ব্যাটারেরা যত বল খেলতে পারেননি, কুলদীপ দুই ইনিংস মিলিয়ে তত বলই খেলেছেন। হারমারের যে বলে আউট হলেন তা যে কোনও ভাল ব্যাটারকেও বিপদে ফেলে দেবে। তাঁকে দোষ দেওয়া অহেতুক।

কিন্তু ধ্রুব জুরেল বা ঋষভ পন্থ? প্রথম বলে দু’রান নিয়ে দ্বিতীয় বলে রক্ষণ করলেন জুরেল। তৃতীয় বলের সময়, হারমারের হাত থেকে ডেলিভারি বেরনোর আগেই তাঁর পা উঠে গেল। বল মাঝপিচ পেরোনোর আগে সামনের পা এগিয়ে দিলেন। রক্ষণ করতে গিয়ে ক্যাচ চলে গেল স্লিপে থাকা এডেন মার্করামের হাতে। সামনেই ওঁত পেতে বসেছিলেন সিলি পয়েন্টের ফিল্ডার। তাঁর হাতেও ক্যাচ যেতে পারত।

ঋষভ পন্থ এসে কয়েকটি বল ধরে খেললেন। তার পর ভাবলেন, একটু টি-টোয়েন্টির মেজাজে খেলা যাক। একই ওভারে কেশব মহারাজকে একটি চার এবং ছয় মেরে গ্যালারির আওয়াজ খানিকটা বাড়িয়ে দিলেন। দু’ওভার পরেই গ্যালারিতে আবার মৃদু আওয়াজ হল। তবে ভারতীয়দের নয়, প্রোটিয়াদের। হারমারের বলে সেই মার্করামের হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন পন্থ। সেই ভুল রক্ষণেই উইকেট খোয়াতে হল। দু’টি আউটই প্রমাণ করে দিল, টেস্ট ক্রিকেটের সাধারণ জিনিসগুলিই ভুলতে বসেছেন ভারতের ব্যাটারেরা। ক্লাবস্তরের ক্রিকেট খেললেও কোচেরা শিখিয়ে দেন, কখন সামনে এগোতে হবে, কখন পিছিয়ে ব্যাকফুটে খেলতে হবে। সেই সাধারণ জিনিসগুলিই ভারতীয় ব্যাটারদের থেকে দেখা গেল না।

রোজ দিনের খেলা শুরুর আগে ভারতীয় দল গোল হয়ে দাঁড়ায়। সেখানে গম্ভীর বা অধিনায়ককে ভাষণ দিতে দেখা যায়। কী কথা হয় সেখানে তা বোঝা মুশকিল। তবে কাজের কথা হয় কি না সন্দেহ আছে। কারণ, ভারতের খেলা দেখলে তা বোঝার কোনও উপায় নেই। একের পর এক খারাপ শট খেলে আউট হলেও ব্যাটিং কোচ সীতাংশু কোটাককে কিছু বলতে দেখা যায় না। তাঁর ভূমিকা কী সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে। আধুনিক ক্রিকেটে প্রযুক্তির সৌজন্যে কোনও দলেরই দুর্বলতা ধরে ফেলা কঠিন ব্যাপার নয়। সেখানেও পিছিয়ে ভারত। না হলে সেনুরান মুথুস্বামীর মতো ক্রিকেটার গুয়াহাটিতে শতরান করে যান!

এই ব্যর্থতার মাঝে আশার আলো রবীন্দ্র জাডেজা। পুরনোদের মধ্যে একমাত্র তিনিই এই দলে রয়ে গিয়েছেন। তার একমাত্র কারণ, তিনি ‘তারকা’ সুলভ হাবভাব নিয়ে চলেন না এবং নেতাগোছের নন। দলে নিজের কাজটা করে যান। তাই তাঁকে ছেঁটে ফেলার মতো সাহস এখনও গম্ভীর দেখাতে পারেননি। এ দিনও জাডেজা দেখিয়ে গেলেন, গুয়াহাটির পিচে পঞ্চম দিনেও ব্যাট করা অসম্ভব নয়। শুধু ক্রিজ় কামড়ে পড়ে থাকার মানসিকতাটা দরকার। সাই সুদর্শনের মতো রানের দিকে মন না দিয়ে বলের পর বল খেললেও চলবে না। আবার পন্থের মতো ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেটও চলবে না। ভারসাম্য রেখে খেলতে হবে। সেটাই করলেন জাডেজা। কেশব মহারাজকে ছয় মেরে অর্ধশতরান করেছেন। আবার যে বল ভাল, সেখানে সম্মান দিয়েছেন বোলারকে।

আপাতত লাল বলের ক্রিকেটকে দীর্ঘ দিনের জন্য বিদায় জানাচ্ছে ভারত। পরের বছর সম্ভবত অগস্টে শ্রীলঙ্কা সিরিজ়‌ রয়েছে। সেটাও আবার বিপক্ষের মাঠে। অতীতে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে বড় বড় দেশেরও নাকানি-চোবানি খাওয়ার ইতিহাস রয়েছে। নিউ জ়িল্যান্ড ভারতে এসে ভারতকে চুনকাম করার আগে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে ০-২ হেরে এসেছিল। ফলে বিরতি লম্বা হলেও, ভারতের কাজ যে সহজ হবে তা নয়। তবে মাঝের এই সময়টায় অনেক কিছু ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে। তার মধ্যে সবার আগে থাকবে দল নির্বাচন, ক্রিকেটারদের উপর আস্থা রাখা এবং সাধারণ জিনিসগুলিতে জোর দেওয়া।

India vs South Africa 2025 Gautam Gambhir Rishabh Pant Temba Bavuma
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy