Advertisement
E-Paper

কোহলির শতরান ম্লান গম্ভীরের এক ভুলে, দোসর জঘন্য ফিল্ডিং! দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে শনিবার ‘ফাইনালে’ নামবে ভারত

রায়পুরে প্রথমে ব্যাট করে ৩৫৮ রান করে ভারত। বিরাট কোহলি ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের শতরান কাজে এল না। ভারতকে হারিয়ে সিরিজ়ে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:০৮
cricket

হতাশ বিরাট কোহলি। শতরান করেও জেতাতে পারলেন না তিনি। ছবি: পিটিআই।

ইনিংসের বিরতিতে ঢোঁক গিলেছিলেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। তাঁর ও বিরাট কোহলির শতরানে ভর করে ভারত ৩৫৮ রান করলেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না রুতুরাজ। কারণ, শিশির। রাঁচীর থেকেও বেশি শিশির পড়ার পূর্বাভাস ছিল রায়পুরে। সেটাই হল। শিশির পড়তেই ৩৫৯ রান মনে হল ২৫৯। বল গ্রিপ করতে পারলেন না বোলারেরা। তার সুবিধা নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এডেন মার্করাম, টেম্বা বাভুমা, ম্যাথু ব্রিৎজ়কে, ডেওয়াল্ড ব্রেভিসদের ব্যাটে হাসতে হাসতে ৩৫৯ রান তাড়া করে ৪ উইকেটে জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের মাটিতে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান তাড়া করল তারা। এক দিনের সিরিজ়ে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা। শনিবার বিশাখাপত্তনমে হবে সিরিজ়ের ফয়সালা।

ভারতের এই হারের নেপথ্যে রয়েছে কোচ গৌতম গম্ভীরের এক ভুল। রুতুরাজ ও কোহলির জুটিতে ভারত যে জায়গায় ছিল তাতে অন্তত ৩৮০ রান হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আবার ছ’নম্বরে ওয়াশিংটন সুন্দরকে নামিয়ে দিলেন গম্ভীর। যেখানে রবীন্দ্র জাডেজার মতো ক্রিকেটার রয়েছেন, সেখানে কেন বার বার গম্ভীর ওয়াশিংটনের উপর ভরসা করছেন তা তিনিই জানেন। ভারতের রান তোলার গতি এক ধাক্কায় কমিয়ে দিলেন ওয়াশিংটন। ফলে ৩৮০ রানের বদলে ৩৫৮ রান হল। আর ২০ রান বেশি থাকলে হয়তো জিতে যেত ভারত। গম্ভীরের ভুলে তা হল না। পাশাপাশি ভারতের জঘন্য ফিল্ডিংও ভোগাল দলকে।

cricket

ব্যর্থ রোহিত-যশস্বী

আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ যশস্বী জয়সওয়াল। শুভমন গিল না থাকায় এই সিরিজ়ে ওপেনারের ভূমিকায় রয়েছেন তিনি। রাঁচীতে রান পাননি। রায়পুরেও পেলেন না। শুরুটা করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই শর্ট বলের সামনে সমস্যায় পড়লেন যশস্বী। মার্কো জানসেনের বাউন্সার সামলাতে না পেরে ২২ রানের মাথায় আউট হলেন তিনি।

আগের ম্যাচে অর্ধশতরান করেছিলেন রোহিত শর্মা। এই ম্যাচেও শুরুটা খারাপ করেননি। তিনটি চার মারেন। কিন্তু নান্দ্রে বার্গারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে আউট হন তিনি। বাঁহাতি পেসারের বিরুদ্ধে আরও এক বার সমস্যায় পড়লেন তিনি। ৮ বলে ১৪ রান করে আউট হলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক।

জোড়া শতরান কোহলির

ফর্মে রয়েছেন কোহলি। রাঁচীতে শতরান করেছিলেন। নিখুঁত ইনিংস খেলেছিলেন। রায়পুরে নিখুঁত ইনিংস না খেললেও আরও একটি শতরান করলেন। লুঙ্গি এনগিডির বলে ছক্কা মেরে ইনিংস শুরু করেন কোহলি। যদিও পরে বড় শটের বদলে দৌড়ে রানের দিকেই বেশি ভরসা রাখলেন তিনি। মাঝে দু’বার ক্যাচও তোলেন কোহলি। কিন্তু ফিল্ডার না থাকায় বেঁচে যান। সেটা কাজে লাগিয়ে শতরান করেন। যদিও আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচে বড় শতরান করতে পারেননি তিনি। ৯৩ বলে ১০২ রান করে টাইমিংয়ের গন্ডগোলে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন কোহলি।

শতরান রুতুরাজের

ইন্ডিয়া ‘এ’ দলের হয়ে ভাল খেলায় এই সিরিজ়ে সুযোগ পেয়েছেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। রাঁচীতে রান পাননি। ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরেছিলেন। রায়পুরে মিডল অর্ডারে ভরসা জোগালেন তিনি। চার নম্বরে নেমে কোহলির থেকে বেশি স্ট্রাইক রেটে রান করলেন। তিনি হাত খুলে খেলায় সুবিধা হল কোহলিরও। শতরান করলেন রুতুরাজ। এই ইনিংস তাঁর আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়ে দেবে। ভারতের এক দিনের দলে জায়গা কিছুটা পাকা করলেন রুতুরাজ। শেষ পর্যন্ত ৮৩ বলে ১০৫ রান করে ফিরলেন রুতুরাজ। কোহলি ও তাঁর ১৫৬ বলে ১৯৫ রানের জুটি ভারতের বড় রানের ভিত গড়ে দেয়।

আবার ব্যর্থ ওয়াশিংটন

ওয়াশিংটন সুন্দরকে মিডল অর্ডারে খেলানোর পরিকল্পনা কাজে লাগছে না। রাঁচীতে পাঁচ নম্বরে নেমে রান পাননি। রায়পুরে ছ’নম্বরে নামেন। বল নষ্ট করেন। তিনি নামার পর ভারতের রান তোলার গতি ধাক্কা খায়। ৮ বলে ১ রান করে রান আউট হন ওয়াশিংটন। বল সরাসরি ফিল্ডারের হাতে গিয়েছিল। কোনও ভাবেই তাতে রান হয় না। কিন্তু রান নিতে যান ওয়াশিংটন। উইকেট ছুড়ে দিয়ে ফেরেন তিনি।

ফিনিশার রাহুল-জাডেজা

রাঁচীতেও ভারতের হয়ে ফিনিশারের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল অধিনায়ক লোকেশ রাহুল ও রবীন্দ্র জাডেজাকে। রায়পুরেও সেই কাজটা করলেন তাঁরা। জাডেজা অবশ্য ধীরে খেলেছেন। বড় শট মারতে সমস্যা হচ্ছিল তাঁর। কিন্তু রাহুল এই ম্যাচে অনেক বেশি আগ্রাসী ছিলেন। শুরু থেকে বড় শট খেলছিলেন। পর পর দুই ম্যাচে অর্ধশতরানও করলেন রাহুল। ৪৩ বলে ৬৬ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি। জাডেজা করলেন ২৭ বলে ২৪ রান। ইনিংসের শেষ ওভারে ১৮ রান নেন তাঁরা। ফলে ভারতের স্কোর ৩৫৮ রানে পৌঁছোয়।

শুরুতে ধাক্কা অর্শদীপের

৩৫৯ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতে ধাক্কা দেন অর্শদীপ সিংহ। আগের ম্যাচেও সেটা করেছিলেন তিনি। ৮ রানের মাথায় কুইন্টন ডি’কককে আউট করেন তিনি। ডি’ককের রেকর্ড ভারতের বিরুদ্ধে ভাল। তিনি থাকলে সমস্যা বাড়ত ভারতের।

মার্করামের শতরান

আগের ম্যাচে রান না পেলেও এই ম্যাচে শতরান করলেন এডেন মার্করাম। ডি’কক আউট হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার রান তোলার গতি কমতে দেননি তিনি। সাবলীল শট খেলছিলেন। তাঁর একটি ক্যাচ ছাড়েন যশস্বী জয়সওয়াল। দেখে মনে হচ্ছিল, মার্করাম ভারতের হাত থেকে খেলা নিয়ে যাবেন। তাঁকে ১১০ রানের মাথায় আউট করে ভারতকে খেলায় ফেরান হর্ষিত রানা।

বাভুমার সঙ্গত

আগের ম্যাচে টেম্বা বাভুমা খেলেননি। এই ম্যাচে আবার ফিরেছেন তিনি। শুরুতে ধীরে খেললেও পরে রান তোলার গতি বাড়ান বাভুমা। বড় শটও মারেন। শেষ পর্যন্ত ৪৬ রান করে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের বলে আউট হন তিনি।

শিশিরে সমস্যা ভারতীয় বোলারদের

রাঁচীর মতো রায়পুরেও দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শুরু থেকে শিশির পড়ছিল। ফলে বল ধরতে সমস্যা হচ্ছিল বোলারদের। পেসারদের থেকেও বেশি সমস্যা হচ্ছিল স্পিনারদের। শিশির পড়ায় আউটফিল্ডও দ্রুত হয়ে যায়। ফলে ফিল্ডিং করতেও সমস্যা হচ্ছিল। ফলে রান তোলার গতি খুব একটা কমছিল না। বার বার তোয়ালে দিয়ে বল মুছছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। বলকে যতটা সম্ভব শুকনো রাখার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা।

ভারতের খারাপ ফিল্ডিং

শুধু বোলিং নয়, ভারতের ফিল্ডিংও খারাপ হল। ক্যাচ ফস্কালেন যশস্বী। চার গলালেন জাডেজার মতো ফিল্ডার। কুলদীপের পায়ের তলা দিয়ে বল বেরিয়ে গেল। ওভার-থ্রোয়েও রান হল। তার সুবিধা নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। হতে পারে শিশিরের কারণে বল ভিজে গিয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটারদের সেটা মানিয়েই খেলতে হবে। তার জন্য ভেজা বলে প্রশিক্ষণও নেন তাঁরা। কিন্তু মাঠে কাজের কাজটা করতে পারলেন না। ফিল্ডিংয়ে অন্তত ২৫-৩০ রান গলাল ভারত। তারই খেসারত দিতে হল।

ভরসার নাম ব্রিৎজ়কে

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এক দিনের ক্রিকেটে মিডল অর্ডারে ভরসা জোগাচ্ছেন ম্যাথু ব্রিৎজ়কে। আগের ম্যাচে অর্ধশতরান করেছিলেন। হারতে থাকা ম্যাচে লড়াই ফিরিয়েছিলেন। এই ম্যাচেও সেটা করলেন তিনি। ছোট কেরিয়ার তাঁর। এর আগে ১০ এক দিনের ম্যাচে এক শতরান ও পাঁচ অর্ধশতরান করেছিলেন। অর্থাৎ, ১০ ম্যাচের মধ্যে ছ’টিতে ৫০-এর বেশি রান ছিল। রায়পুরের ইনিংসের পর সেটা ১১ ম্যাচে সাতে পৌঁছোল। খুব বেশি বড় শটের উপর ভরসা করেন না তিনি। কিন্তু স্কোরবোর্ড সচল রাখেন। সেটিই তাঁর শক্তি। অনেকটা কোহলির মতোই খেলেন ব্রিৎজ়কে। ৬৪ বলে ৬৮ রান করে তিনি যখন ফিরে যাচ্ছেন, তখন জয়ের অনেকটা কাছে পৌঁছে গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

বেবি এবি

ডিফেন্স শব্দটা তাঁর অভিধানে নেই। প্রতি বলে ব্যাট চালান। রাঁচীতে সেটা শুরু করেছিলেন। কিন্তু বেশি ক্ষণ টানতে পারেননি। রায়পুরে অর্ধশতরান করলেন। মাত্র ৩৩ বলে। মারলেন পাঁচ ছক্কা। এক সময় মনে হচ্ছিল, একার কাঁধে ম্যাচ বার করে নেবেন তিনি। ৫৪ রানের মাথায় অবশ্য কুলদীপ যাদবের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন তিনি।

‘খলনায়ক’ প্রসিদ্ধ

অর্শদীপ ও হর্ষিত শিশিরের সমস্যা সামলে বল করলেও প্রসিদ্ধকে দেখে বোঝা গেল, তিনি বোঝেনই না কোন পরিস্থিতিতে কী ভাবে বল করতে হয়। তিনি শুধু লেংথে বল করে যান। বাকি কাজ পিচের। কিন্তু যেখানে পিচে তেমন কোনও সুবিধা নেই, পাশাপাশি শিশির পড়ছে, সেখানে কী ভাবে বৈচিত্র কাজে লাগাতে হবে সেই ধারণা তাঁর নেই। যখনই বল করতে এলেন রান দিলেন। তাঁকে নিশানা করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারেরা। বাকিরা কিছুটা চাপ তৈরি করলেও প্রসিদ্ধ এসে সব চাপ কাটিয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু স্পিনারদের থেকে তাঁর উপরেই বেশি ভরসা করলেন রাহুল। তার খেসারত দিতে হল অধিনায়ককে। ৮.২ ওভারে ৮৫ রান দিলেন প্রসিদ্ধ। সেখানেই ম্যাচ হেরে গেল ভারত।

India vs South Africa 2025 Virat Kohli Gautam Gambhir
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy