দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে টেস্ট সিরিজ়ে চুনকামের পর সাদা বলের ক্রিকেটকে ঢাল করেছিলেন গৌতম গম্ভীর। সেই ঢাল এ বারও ঢাল হয়েই দাঁড়াল। প্রশ্ন উঠেছিল, গম্ভীর কি আর ভারতীয় দলের কোচ থাকবেন? তাঁর চাকরি কি থাকবে? চাকরি বাঁচানোর প্রথম পরীক্ষায় পাশ করে গেলেন গম্ভীর। কোচ হওয়ার পর যে দুই ক্রিকেটারকে তিনি টেস্ট থেকে অবসর নিতে ‘বাধ্য’ করেছেন, এক দিনের ক্রিকেটেও তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, সেই বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মাই উতরে দিলেন গম্ভীরকে। কোহলির শতরান ও রোহিতের অর্ধশতরানে ভর করে সিরিজ়ে এগিয়ে গেল ভারত।
নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে চুনকামের পর গম্ভীরের উপর যে চাপ তৈরি হয়েছিল, তা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ের পর। দল নির্বাচন থেকে শুরু করে পরিকল্পনা সব গম্ভীরই করেন। এমনকি, দেশের মাটিতে খেলা হলে পিচও ঠিক করে দেন তিনিই। তার পরেও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে চুনকাম হতে হয়েছে ভারতকে।
হারের পর সেই সাদা বলের ক্রিকেটকে ঢাল করেছেন গম্ভীর। তুলে এনেছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও এশিয়া কাপের প্রসঙ্গ। গুয়াহাটিতে সিরিজ় হারের পর সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, “মনে রাখবেন, আমি সেই একই লোক যে ইংল্যান্ডে ভাল ফল করেছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং এশিয়া কাপ জিতেছে।” এই কথা থেকে পরিষ্কার, লাল বলের ক্রিকেটে ব্যর্থতার জবাব সাদা বলের ক্রিকেটে সাফল্য দিয়ে দিতে চেয়েছেন ভারতীয় কোচ।
পাশাপাশি গম্ভীর আরও জানিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সাদা বলের সিরিজ়ে সাফল্য পেলে টেস্ট সিরিজ়কে ভুলে যাবেন সকলে। তিনি বলেছেন, “সাদা বলের সিরিজ় শুরু হোক। সেখানে সাফল্য পেলে আপনি রাতারাতি ভুলে যাবেন লাল বলের ক্রিকেটে কী হয়েছিল।” সেই সাদা বলের সিরিজ়ের শুরুটা ভাল হল ভারতের। রাঁচীতে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল তারা। কিন্তু এখনও নিশ্চয় লাল বলের ক্রিকেটে গম্ভীরের ব্যর্থতার কথা কেউ ভুলবেন না। খুব বেশি হলে কয়েকটা রাত শান্তিতে ঘুমোতে পারবেন ভারতীয় দলের কোচ।
ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম এক দিনের ম্যাচের স্কোরকার্ড।
যে দিন থেকে গম্ভীর ভারতের প্রধান কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন সে দিন থেকে লাল ও সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতের ছবিটা দু’রকম। সাদা বলের ক্রিকেটে একের পর এক সিরিজ় জিতেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়ায় এক দিনের সিরিজ় হয়তো হারতে হয়েছে, কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজ় জিতেছেন গম্ভীর। আইসিসি ও এশীয় প্রতিযোগিতায় দাপট দেখিয়েছে দল। এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে তিন বার হারিয়েছে তারা। কিন্তু লাল বলের ক্রিকেটে দেশের মাটিতে দুর্বল বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে হারানো ছাড়া সাফল্য বলতে ইংল্যান্ডে গিয়ে সিরিজ় ড্র।
গম্ভীরকে আরও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ায়। বাধ্য হয়ে তাঁকে স্বীকার করতে হয়েছে এখনও তিন ক্রিকেটারের বিকল্প পাননি তিনি। গম্ভীর বলেছেন, “আপনি যদি ভাবেন ১০০-র বেশি টেস্ট খেলা অশ্বিনের মতো খেলে দেবে ওয়াশিংটন, তা হলে তরুণ ছেলেটার উপরে অবিচার করা হবে। এটা নিয়ে আপনাদেরও ভাবা উচিত।”
পাশাপাশি ট্রানজ়িশন বা রূপান্তরের কথা শোনা গিয়েছে গম্ভীরের গলায়। তিনি বলেছেন, “এত বেশি অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে একসঙ্গে হারালে সেটার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন। এই জন্যই এটাকে রূপান্তর বলছি। এই ক্রিকেটারদের সময় দেওয়া দরকার।” কিন্তু গম্ভীর কি নিজেই এই অবস্থার জন্য দায়ী নন? অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে বড্ড বেশি ওয়াশিংটনকে প্রাধান্য দিচ্ছিলেন গম্ভীর। রিজ়ার্ভ বেঞ্চে কাটাতে হচ্ছিল অশ্বিনের মতো ১০০-র বেশি টেস্ট খেলা ক্রিকেটারকে। যদি ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতাকেই প্রাধান্য দেবেন গম্ভীর, তা হলে কেন অশ্বিনকে পরের পর ম্যাচে বসিয়ে রাখা হচ্ছিল? একই কথা বলা যায় রোহিত, কোহলির ক্ষেত্রেও। এই দুই ব্যাটারের শূন্যস্থান যে রাতারাতি ভরাট করা সম্ভব নয়, তা গম্ভীর এত দিনে বুঝতে পারলেন? বিশেষজ্ঞ ক্রিকেটারেরা অনেক আগে থেকেই রোহিত, কোহলির উপর ভরসা রাখার কথা বলে আসছিলেন। বার বার সাবধান করা হচ্ছিল যে, এই দুই ক্রিকেটারের অভাব পূরণ করা যাবে না। অথচ গম্ভীর ভরসা রেখেছিলেন সাই সুদর্শন, করুণ নায়ার, নীতীশ রেড্ডিদের উপরে। সেই পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
ভারতের হয়ে সাদা বলের ক্রিকেটেও তো রোহিত, কোহলির জায়গা পাকা নয়। তাঁদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ২০২৭ সালের বিশ্বকাপে খেলতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে হবে। অর্থাৎ, এখনও নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে দুই তারকাকে? আর গম্ভীরের ক্ষেত্রে? তাঁকেও তো সাফল্য এনে দিতে হবে। রাঁচীতে রোহিত, কোহলি বুঝিয়ে দিয়েছেন, এখনও তাঁদের মধ্যে কতটা ক্রিকেট বাকি। এখনও দলকে জেতাচ্ছেন তাঁরা। মাঠে দেখে মনে হচ্ছে, সবচেয়ে তরুণ তাঁরাই। রোহিত, কোহলির হাত ধরে প্রথম পরীক্ষায় উতরে গিয়েছেন গম্ভীর। পরের পরীক্ষাগুলোতেও কি অপছন্দের রোহিত, কোহলির উপরেই ভরসা করতে হবে কোচকে?