নিজের দলের অন্দরেই কি ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন গৌতম গম্ভীর? গত কয়েক দিনে যে ভাবে একের পর এক ক্রিকেটার রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে সেই ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে। রাঁচীতে কোহলির ইনিংসের প্রশংসা আগেই করেছিলেন তিলক বর্মা। এ বার রোহিত ও কোহলিকে নিয়ে মুখ খুললেন তিনি। জানালেন, দুই ক্রিকেটার খেললে দলের আত্মবিশ্বাসটাই অন্য রকম থাকে। দুই ক্রিকেটারকে দলে চাইছেন হর্ষিত রানাও।
‘জিয়োস্টার’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিলক জানিয়েছেন, ভারতীয় দলে রোহিত, কোহলির গুরুত্ব ঠিক কতটা। তিনি বলেন, “আমি লম্বা ফরম্যাট খেলতে ভালবাসি। তাই এক দিনের ক্রিকেট ও টেস্ট ক্রিকেট খেলতে চাই। আর যখন রোহিত ও বিরাট ভাই একই দলে খেলে, তখন দলের আত্মবিশ্বাসটাই আলাদা থাকে।”
তিলক জানিয়েছেন, দুই ক্রিকেটারের অভিজ্ঞতা বাকিদের কতটা সাহায্য করতে পারে। সেই কারণেই হয়তো রাঁচীতে প্রথম বার যে দিন রোহিত ও কোহলি অনুশীলন শুরু করেন, সে দিন নেটের পিছনে দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন তিলক। তিনি বলেন, “ওদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অনেক বেশি। আমি ওদের কাছ থেকে যতটা পারি শিখতে চাই। বাকিরাও সেটা করে। ওরা দলে থাকলে বাকি ক্রিকেটারদেরও উন্নতি হয়।”
তিনি নিজে কোহলির কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন বলে জানিয়েছেন। বিশেষ করে কোহলির ফিটনেসের ভক্ত তিনি। তিলক বলেন, “আমি বিরাট ভাইয়ের সঙ্গে অনেক কথা বলি। বিশেষ করে ওর ফিটনেস ও উইকেটের মাঝে দৌড় নিয়ে কথা হয়। এই বয়সেও বিরাট ভাইয়ের ফিটনেস দুর্দান্ত। আমিও দ্রুত দৌড়তে পারি। সেটা আরও ভাল করার চেষ্টা করছি। আমি চাই, বিরাট ভাইয়ের সঙ্গে জুটি বাঁধব। একসঙ্গে দু’জনে দৌড়ে অনেক রান নেব।”
রাঁচীতে প্রথম বার কোহলির শতরান চোখের সামনে দেখেছেন তিলক। তাঁর বিশ্বাসই হচ্ছে না এই ইনিংস। বলেছেন, “আমরা কোহলির অন্যতম সেরা ইনিংস দেখতে পেলাম। প্রথম বার সামনে থেকে বিরাট ভাইয়ের শতরান দেখতে পেয়ে খুব খুশি। গত ১৭ বছর ধরে দুর্দান্ত খেলে যাচ্ছে ও। ব্যাটিং, ফিল্ডিং, সবেতে সেরা। সব সময়ে নিজেকে সকলের আগে রাখতে ভালবাসে। অনেক কিছু শিখেছি ওর থেকে। সামনে থেকে ওর খেলা দেখা ভাগ্যের ব্যাপার। আমি চেষ্টা করি যতটা সম্ভব ওর সঙ্গে কথা বলে কিছু না কিছু শিখতে।”
রায়পুরের মাঠে মঙ্গলবার অনুশীলনের আগে হর্ষিতও দুই তারকাকে নিয়ে মুখ খুলেছেন। নিন্দকেরা বলেন, গম্ভীর পছন্দ করেন বলেই ভারতের তিন ফরম্যাটেই খেলার সুযোগ পেয়েছেন হর্ষিত। গম্ভীর নিজেও সমালোচনার মুখে হর্ষিতের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সেই হর্ষিতই রোহিত, কোহলির পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, “রোহিত ভাই, বিরাট ভাইয়ের দলে থাকা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানি, গোটা দলের কাছেও তাই। কারণ, ওদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দলে থাকলে সাজঘরের পরিবেশটাই বদলে যায়। ওদের সঙ্গে সাজঘরে বসে থাকলে অনেক কিছু শেখা যায়। তাতে আমাদেরই উন্নতি হচ্ছে।”
আরও পড়ুন:
রাঁচীতে জয়ের পর কুলদীপ যাদবও কোহলিকে নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কোহলি পাশে থাকলে তিনি আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। কারণ, বোলিংয়ের সময় অনেক পরামর্শ দেন কোহলি। কুলদীপের কথায়, “কোহলি দলে থাকলে খুব ভাল লাগে। সব সময় কোনও না কোনও পরামর্শ পাওয়া যায়। বোলিংয়ের সময়ও ও এসে বলে যায় কী করতে হবে। ওর মতো সিনিয়রেরা পাশে থাকলে সব সময়েই ভাল। দলের মধ্যেও আলাদা শক্তি এবং স্ফূর্তি আসে। গত কাল মাঠেই সেটা দেখেছেন। ওকে পেয়ে আমরা ভাগ্যবান।”
প্রথম ম্যাচে বিরাট কোহলি আর রোহিতের ব্যাটিংয়ের সামনে হারতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা স্বীকার করে নেন, বিরাট-রোহিতের উপস্থিতি ভারতের শক্তি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাভুমা এ-ও জানিয়েছেন, রো-কোর মতো ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে লড়াইটা সব সময় উত্তেজক। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়কের কথায়, ‘‘রোহিতকে খুব সম্ভবত প্রথম দেখি ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। আমি তখন স্কুলে পড়তাম। ওরা দীর্ঘদিন খেলছে। জানে কী করতে হবে। বিরাট-রোহিতের বিরুদ্ধে খেলাটা নতুন কিছু নয়। আমরা আগেও খেলেছি। কখনও ওদের বিরুদ্ধে আমাদের সময়টা খারাপ গিয়েছে। কখনও আমরা ওদের হারিয়েছি। ওই দু’জনের উপস্থিতি সিরিজ়টাকে জমিয়ে দিয়েছে।’’
উল্লেখ্য, ম্যাচের আগে ভারতের পরিবর্ত অধিনায়ক লোকেশ রাহুল বলেছিলেন, “রোহিত ও কোহলির গুরুত্ব আমাদের দলে খুব বেশি। ওদের মতো সিনিয়র ক্রিকেটার সাজঘরে থাকলে সকলের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়ে যায়। ওদের অভিজ্ঞতা দলের সকলকে অনেক সাহায্য করে। তাই ওদের পেয়ে আমি খুব খুশি।”
রবিবার ম্যাচ হওয়ার পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে রাহুল বলেন, “রোহিত আর কোহলিকে এ ভাবে খেলতে দেখলে খুব মজা লাগে। ওরা যে স্বাধীনতা নিয়ে খেলে সেটা গোটা কেরিয়ার জুড়েই করেছে। নতুন কিছু নয় ওদের কাছে। অনেক দিন ধরে ওদের চোখের সামনে দেখছি। সাজঘরে ওদের দেখতে পাওয়া আমার কাছে সব সময়েই খুব মজার।”