Advertisement
E-Paper

উপেক্ষিত শ্রেয়সকে হারালেন ভারতের টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়া করুণ, সঙ্গত রিজভির, পঞ্জাবকে হারাল দিল্লি

লড়াই ছিল শ্রেয়স আয়ার বনাম করুণ নায়ারের। সেই লড়াইয়ে উপেক্ষিত শ্রেয়স আয়ারকে হারালেন ভারতের টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়া করুণ নায়ার। নিজেদের শেষ ম্যাচে পঞ্জাব কিংসকে হারাল দিল্লি ক্যাপিটালস।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৫ ২৩:২২
cricket

(বাঁ দিকে) শ্রেয়স আয়ার ও করুণ নায়ার (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

বিরাট কোহলি টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পরে আলোচনায় উঠে এসেছিল তাঁদের নাম। ভারতের টেস্ট দলে চার নম্বরে শ্রেয়স আয়ার না করুণ নায়ার, কাকে দেখা যাবে তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। ঘরোয়া ক্রিকেট ও আইপিএলে যে ফর্মে তাঁরা রয়েছেন তাতে দু’জনের খেলার সম্ভাবনাই ছিল প্রবল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শ্রেয়সকে নেওয়া হয়নি। ভারতের নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, লাল বলের ক্রিকেটে শ্রেয়সের জায়গা নেই। যদিও সেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলায় করুণ জায়গা পেয়েছেন দলে। সেই দল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই আগরকরকে জবাব দেওয়ার সুযোগ ছিল শ্রেয়সের। কিন্তু পারলেন না তিনি। করুণের কাছে হারতে হল শ্রেয়সকে। করুণকে সঙ্গত দিলেন সমীর রিজ়ভি। অর্ধশতরান করে দলকে জিতিয়ে ফিরলেন তিনি। দিল্লির কাছে হারায় চাপ বাড়ল পঞ্জাবের। পয়েন্ট তালিকায় প্রথম দুই দলের মধ্যে শেষ করতে হলে শেষ ম্যাচ জিততেই হবে তাদের।

শনিবার ভারতের টেস্ট দল ঘোষণার সময় সকলের নজর ছিল আগরকরের দিকে। কোহলির বিকল্প হিসাবে তাঁরা কাকে ভাবছেন তা নিয়ে উৎসাহ ছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। আগরকর স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভাবে রান করা করুণকে বিকল্প হিসাবে ভাবছেন তাঁরা। করুণের অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গও আলাদা করে বলেন আগরকর। তিনি জানিয়েছেন, কোহলি না থাকায় অভিজ্ঞ করুণকে তাঁদের দরকার ছিল। কিন্তু শ্রেয়সের কথা ভাবছেন না তাঁরা। আগরকর স্পষ্ট বলেন, “শ্রেয়স ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলেছে ঠিকই। কিন্তু এই মুহূর্তে টেস্ট দলে ওর জন্য কোনও জায়গাই নেই।”

কোথায় আটকে যাচ্ছেন শ্রেয়স? ক্রিকেটারের ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের বক্তব্য, “ওর ব্যাটিংয়ে নতুন স্টান্স, সাহসী স্ট্রোক খেলা এবং ভয়ডরহীন দৃষ্টিভঙ্গি— পুরোটাই সাদা বলের ক্রিকেটের সঙ্গে মানানসই। তবে লাল বলের ক্রিকেটে এমন কিছু করতে পারেনি যাতে নির্বাচকেরা সন্তুষ্ট হতে পারেন।” সেটাই যদি একমাত্র কারণ হয়, তা হলে কেন ঋষভ পন্থ ভারতীয় দলে রয়েছেন? তাঁর শক্তিও তো সেই একই। তিনিও তো ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলেই শুধু জায়গা পাকা নয়, দলের সহ-অধিনায়কের পদও পেয়েছেন। তা হলে শ্রেয়সের ক্ষেত্রে মাপকাঠি আলাদা কেন?

শ্রেয়সের হয়ে আগরকরের সামনে আরও একটি প্রশ্ন তোলা যেতে পারে? কোন যুক্তিতে সাই সুদর্শনকে দলে নিয়েছেন তিনি? সুদর্শন পরিচিতি পেয়েছেন আইপিএল খেলে। এ বারের আইপিএলে কমলা টুপির তালিকায় সকলের উপরে তিনি। ১৩ ম্যাচে ৬৩৮ রান করেছেন। সেটাই যদি মাপকাঠি হয়, তা হলে শ্রেয়স কোথায় পিছিয়ে? তিনিও ১৩ ম্যাচে ৪৮৮ রান করেছেন। ৪৮.৮০ গড় ও ১৭২.৪৩ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন। পাঁচটা অর্ধশতরান করেছেন শ্রেয়স। সুদর্শন গুজরাতের হয়ে ওপেন করেন। অনেক বেশি বল খেলার সুযোগ পান তিনি। সেখানে পঞ্জাবের দুই ওপেনার প্রিয়াংশ আর্য ও প্রভসিমরন সিংহ অনেক ম্যাচে বড় ইনিংস খেলেছেন। ফলে শ্রেয়সকে নেমে প্রথম বল থেকে হাত খুলতে হয়েছে। তিনি থিতু হওয়ার সময় পাননি। পাওয়ার প্লে-র সুবিধাও অনেক ম্যাচে পাননি। তাই তাঁর এই ৪৮৮ রানের গুরুত্ব সুদর্শনের থেকে কোনও অংশে কম নয়। সুদর্শনকে যদি আইপিএলের পারফরম্যান্স দেখে নেওয়া হয়, তা হলে শ্রেয়স কেন বাদ পড়লেন? বিশেষ করে যেখানে সুদর্শনের তুলনায় লাল বলের ক্রিকেটে শ্রেয়সের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। হতে পারে ১৫ মাস আগে শেষ বার টেস্ট খেলেছেন শ্রেয়স। সুদর্শনের তো অভিষেকই হয়নি। ইংল্যান্ডের কঠিন পরিস্থিতিতে কি শ্রেয়সের অভিজ্ঞতার দিকটা দেখতে পারতেন না নির্বাচকেরা? তাঁর সঙ্গে কি অন্যায় হয়নি?

শ্রেয়স নিজে অবশ্য কিছু বলেননি। দল ঘোষণার পরেও চুপ রয়েছেন। নিজের ব্যাট দিয়ে জবাব দিচ্ছেন তিনি। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধেও সেটাই করেছেন। এই ম্যাচে দলের ওপেনিং জুটি রান পায়নি। শ্রেয়সের কাঁধে তাই দায়িত্ব বেশি ছিল। অধিনায়কের ইনিংস খেলেছেন তিনি। দ্রুত রান করেছেন। পাশাপাশি উইকেটও সামলেছেন। শ্রেয়স জানতেন, তিনি রান করতে না পারলে দল সমস্যায় পড়বে। ৩৪ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে শেষ অর্ধশতরান করেছিলেন শ্রেয়স। আগের দুই ম্যাচে ৪৫ ও ৩০ রান করলেও অর্ধশতরান করতে পারেননি। এই ম্যাচে আবার করেছেন। পাঁচটা চার ও দুটো ছক্কার সাহায্যে এই ইনিংসে জবাব দিয়েছেন তিনি।

শ্রেয়স এমন একজন ক্রিকেটার, যিনি মুখে জবাব দিতে খুব বেশি পছন্দ করেন না। আগের বার আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক হিসাবে একের পর এক টস হারছিলেন তিনি। তা নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছিল। শ্রেয়স নিজেও বিব্রত ছিলেন। কিন্তু একটা করে ম্যাচ জেতার পর তিনি জানিয়েছেন, দলের জয় আসল। দল জিতলে সব টস হারতে তিনি তৈরি। এ বারও মুখে জবাব দিচ্ছেন না পঞ্জাবের অধিনায়ক। দলকে জেতানোর পাশাপাশি ব্যাট কথা বলছে তাঁর।

পঞ্জাব-দিল্লি ম্যাচে শ্রেয়সের পাশাপাশি করুণ কী করেন, সে দিকে নজর ছিল সকলের। করুণও ভাল খেলেছেন। দিল্লির সার্বিক ফিল্ডিং খারাপ হলেও স্লিপে দাঁড়িয়ে কয়েকটা বল খুব ভাল বাঁচিয়েছেন করুণ। ব্যাট করার সময় দায়িত্ব নিয়ে খেলেছেন তিনি। লোকেশ রাহুল ও ফাফ ডু’প্লেসি আউট হওয়ার পরে দিল্লির দরকার ছিল তাঁকে। দ্রুত রান দিয়েছেন উইকেটে মধ্যে। এক রানকে দু’রান করেছেন। আবার প্রয়োজনে বড় শট খেলেছেন। এ বারের আইপিএলে আট ম্যাচে ১৬২ রান করেছেন করুণ। নজর কেড়েছে তাঁর স্ট্রাইক রেট। ১৭৪.১৯ স্ট্রাইক রেটে খেলেছেন তিনি। অর্থাৎ, তিনিও যে দ্রুত রান করতে পারেন তা বুঝিয়েছেন করুণ। তবে শেষ পর্যন্ত খেলতে পারেননি তিনি। ২৭ বলে ৪৪ রান করে আউট হয়েছেন তিনি। ইনিংসে পাঁচটা চার ও দুটো ছক্কা মেরেছেন তিনি।

আউট হয়ে গেলেও শেষ হাসি হেসেছেন করুণই। তিনি যে কাজটা শুরু করেছিলেন, তা শেষ করেছেন দলের তরুণ প্রতিভা সমীর রিজ়ভি। অর্ধশতরান করেছেন তিনি। তাঁর ব্যাটেই জিতেছে দিল্লি। ব্যাটে রান করেও হারের হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়েছে শ্রেয়সকে।

Punjab Kings Delhi Capitals Karun Nair Shreyas Iyer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy