E-Paper

বাড়ি ফিরলেই টেনিস বলের ক্রিকেট নিয়ে মেতে ওঠেন মহম্মদ সিরাজ

ছোটবেলায় এক বন্ধুকে বাউন্সার মেরে আহত করে দেওয়ার পর থেকে পাড়ার মাঠে খুব একটা বল করতেন না। মোমিনাবাদে ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে যাওয়ার পর থেকে পেসার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু। তিনি, মহম্মদ সিরাজ।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩৭
An image of Mohammed Siraj

মহম্মদ সিরাজ। —ফাইল চিত্র।

হতে পারেন তিনি ভারতীয় দলের ক্রিকেটার। কিন্তু পাড়ার বন্ধুদের কাছে তিনি এখনও ছোট্টবেলার মিয়াঁ। সকাল ১১টা বাজলেই ব্যাট বল নিয়ে ছুটতেন বন্ধুদের বাড়ি। তাঁদের অভিভাবকদের বলতেন, ‘‘ওকে একটু খেলতে নিয়ে যাব?’’

বন্ধুদের স্কুল থাকলে মুখ কাঁচুমাচু করে ফিরে আসতেন বাড়ি। নিজে স্কুল যেতে খুব একটা পছন্দ করতেন না। অটোচালক বাবা বলতেন, ‘‘ওরে দাদাকে দেখে শেখ। ও পড়াশোনায় কত ভাল। তুই তো স্কুলেই যেতে চাস না। জীবনে কিছু করার কি ইচ্ছে নেই?’’

বাবার কথায় কান না দিয়ে বিকেলে আবার ব্যাট বল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। হায়দরাবাদে মাসাবা ট্যাঙ্ক এলাকায় ফার্স্ট ল্যান্সার পাড়ার ইদগা ময়দানে সারা দিন পড়ে থাকতেন। এত জোরে বল করতেন যে, বন্ধুরা খেলতে ভয় পেত। ছোটবেলায় এক বন্ধুকে বাউন্সার মেরে আহত করে দেওয়ার পর থেকে পাড়ার মাঠে খুব একটা বল করতেন না। মোমিনাবাদে ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে যাওয়ার পর থেকে পেসার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু। তিনি, মহম্মদ সিরাজ।

তাঁর পাড়ায় গিয়ে জানা গেল, টেনিস বলে ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন তিনি। হায়দরাবাদে যত ‘খেপ’ প্রতিযোগিতা আছে, প্রত্যেকটিতে ব্যাটসম্যান সিরাজের একাধিক রেকর্ড রয়েছে। এমনকি ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ় শুরু হওয়ার দেড় সপ্তাহ আগে ইদগা ময়দানে চালু হয় ফার্স্ট ল্যান্সার সুপার লিগ। যার পোস্টারে সিরাজের ছবি বসানো। সেখানে ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে ১৫টি বল হারিয়ে দেন ভারতীয় পেসার। আবার তা কিনেও দেন।

সিরাজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমজাদ ম্যাডি বলছিলেন, ‘‘দু’বার ছ’টি করে ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড আছে মিয়াঁর। ব্যাট করে বহু ম্যাচ জিতিয়েছে। টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, মিক্সার-গ্রাইন্ডার, মাইক্রোওয়েভ সবই পেয়েছিল টেনিস ক্রিকেট খেলেই। এখানে যখনই আসে, টেনিস বলে আমাদের সঙ্গে খেলে।’’ যোগ করেন, ‘‘ব্যাটিংই করে। বল করে না। আমরা কেউ ওর বল খেলতে পারি না। এত জোরে বল খেলার অভ্যেস নেই তো। তাও এক দু’বার খেলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি।’’

সিরাজের দাদা ইসমাইল ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন তাঁদের পাড়া। সিরাজের প্রিয় দোকানে বসিয়ে চা খাওয়ানো থেকে বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করানো। সবটাই করছিলেন নিজে।ছোটবেলার বন্ধু শফি শারু বলছিলেন, ‘‘সিরাজ যখন ব্যাট করে তখন কেউ ভিডিয়ো করে না। আমরা করতে দিই না। সংবাদমাধ্যমকে তো তখন ঢুকতেই দেওয়া হয় না। মাঠের আশেপাশে যত ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট দেখছেন, প্রত্যেকটির সামনে নেট লাগানো। কারণ, বল লেগে একাধিক জানালা ভাঙে। দরজা ফেটে যায়। সিরাজের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের এই মাঠে ঘুরে গিয়েছেন বিরাট কোহলিও।’’

স্থানীয় কাউন্সিলার ফ্লাডলাইট বসিয়ে দিয়েছেন ইদগা ময়দানে। ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ় শুরু হওয়ার আগের দিনই পাড়ায় গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে এসেছেন। ছোটবেলার বোলিং সঙ্গী আজ়হার আয়ান বলছিলেন, ‘‘ও এখানে এলে খোলামেলা ঘুরে বেড়ায়। মহল্লার সকলে নিজেদের ছেলের মতো ভালবাসে ওকে।’’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হওয়ার পরে মিয়াঁর খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হয়েছে। কিন্তু বাড়ি ফিরলে বিরিয়ানি তাঁর চাই-ই। বন্ধু আয়াজ় ভি. কে. বলছিলেন, ‘‘শাদাবের বিরিয়ানি পেলে আর কিছুই চায় না। বাড়িতে এসে বিরিয়ানির লোভ সামলাতে পারে না।’’

বিদেশ সফরে গেলেই বন্ধুদের জন্য উপহার নিয়ে আসেন মিয়াঁ। এ বার বিশাখাপত্তনমেও বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সিরাজ। ১ ফেব্রুয়ারি বিশাখাপত্তনম রওনা দিচ্ছেন তাঁর দশ বন্ধু। শারুর কথায়, ‘‘এই এলাকার কোনও বাচ্চাও যদি সিরাজকে গিয়ে বলে ভাইয়া টিকিট দাও, ও না বলে না। আইপিএলের সময় প্রত্যেকের জন্য আরসিবি-র জার্সি আসে। কর্পোরেট বক্সে বসেও অনেক ম্যাচ দেখেছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mohammed Siraj Indian Cricket team Indian cricketer Indian Pacer

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy