চাপে পড়েও হংকংয়ের বিরুদ্ধে জিতল শ্রীলঙ্কা। সোমবার দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার জয় এসেছে ৪ উইকেটে। অর্ধশতরান করে জয়ের নায়ক পাথুম নিসঙ্ক। বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও অর্ধশতরান করেছিলেন তিনি। টানা দু’টি ম্যাচ জিতে সুপার ফোরের দিকে এক পা বাড়িয়ে রাখল চরিত আসালঙ্কের দেশ। অন্য দিকে, তিনটি ম্যাচেই হেরে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিল হংকং।
সোমবার আগে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ১৪৯ তুলেছিল হংকং। জবাবে ৬ উইকেটে সেই রান তুলে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। হারলেও এই ম্যাচে হংকংয়ের ব্যাটিং এবং বোলিং নজর কেড়েছে। শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের সামনে যে ভাবে সাহসী ব্যাটিং করেছে তারা তা প্রশংসনীয়। আগের দু’টি ম্যাচের তুলনায় অনেক ভাল খেলেছে হংকং। পরপর চারটি উইকেট নিয়ে এক সময় শ্রীলঙ্কার নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিল তারা। কিন্তু এই ম্যাচে ফিল্ডিং ডুবিয়েছে তাদের। বাগে পেয়েও শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারল না তারা। একাধিক ক্যাচ ফেলেছে তারা। নিসঙ্কেরই অন্তত তিনটি ক্যাচ পড়েছে। কুশল পেরেরার দু’টি ক্যাচ ফেলেছে হংকং।
টসে জিতে আগে বল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। প্রথম ওভারেই হংকংয়ের একটি উইকেট পড়তে পড়তে বেঁচে যায়। নুয়ান থুশাসার চতুর্থ বল লেগেছিল জ়িশান আলির পায়ে। আম্পায়ার আঙুল তুলে দিলেও জ়িশান রিভিউ নেন। দেখা যায়, ব্যাটে হালকা স্পর্শ হয়েছে বলের। ষষ্ঠ বলে জ়িশানেরই ক্যাচ ফেলে দেন দুষ্মন্ত চামিরা।
দু’বার প্রাণ পেয়ে সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন হংকংয়ের ব্যাটার জ়িশান। যোগ্য সঙ্গত দেন অপর ওপেনার অংশুমান রথ। প্রথম দু’টি ম্যাচে রান পাননি তিনি। তৃতীয় ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া ছিলেন। দুই ওপেনার খুব একটা চার-ছয় মারতে না পারলেও খুচরো রান নিয়ে পাওয়ার প্লে-র মধ্যে স্কোরবোর্ড সচল রাখার চেষ্টা করছিলেন। পঞ্চম ওভারে চামিরা ফিরিয়ে দেন জ়িশানকে।
এর পর আচমকাই রানের গতি থমকে যায় হংকংয়ের। পরের ২৩ বলে মাত্র একটি চার হয়। তিনে নামা বাবর হায়াতের ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না কিছুতেই। ওয়ানিন্দু হাসরঙ্গ এবং মাহিশ থিকশানার স্পিন বোলিং খেলতে অসুবিধা হচ্ছিল হংকংয়ের দুই ব্যাটারেরই। হাসরঙ্গের বল এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্টাম্পড হন বাবর (৪)।
আরও পড়ুন:
নিজ়াকত খান নামার পর থিতু হয় হংকংয়ের ইনিংস। শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের উপরে ধীরে ধীরে দাপট দেখাতে থাকে তারা। পিচ মন্থর থাকায় দুই ব্যাটার খুব বেশি আগ্রাসী হওয়ার দিকে নজর দেননি। বরং চেষ্টা করছিলেন প্রতি বলেই খুচরো রান নেওয়ার। খারাপ বল পেলে চালাচ্ছিলেন। অর্ধশতরানের দু’রান দূরে চামিরার বলে আউট হন অংশুমান। ৪৬ বলে ৪৮ করেন তিনি। অংশুমান এবং নিজ়াকতের তোলা ৬১ রান পূর্ণ সদস্যের দেশের বিরুদ্ধে হংকংয়ের সবচেয়ে বেশি রানের জুটি।
পরের ওভারেই নিজ়াকতের ক্যাচ ফেলেন কুশল মেন্ডিস। সুযোগ পেয়ে নিজ়াকতও আগ্রাসী খেলতে থাকেন। এক সময়ে অর্ধশতরানও করে ফেলেন। হংকংয়ের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসাবে অর্ধশতরান করেন তিনি।
জবাবে প্রথম ওভারে আট রান তুলে শুরুটা ভালই করেছিল শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ওভারে আয়ুষ শুক্লের বল পাথুম নিসঙ্কের প্যাডে লাগে। আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান নিসঙ্ক। তবে হংকংয়ের মতো শ্রীলঙ্কাকেও বেশ সাবধানি হয়ে খেলতে হচ্ছিল। পিচ থেকে সাহায্য পাচ্ছিল না তাঁরা। ওপেনার কুশল একটু ধীরে খেলছিলেন। আয়ুষকে এক ওভারে দু’টি চার মারার পরেই তিনি ফিরে যান (১১)।
এর পর শ্রীলঙ্কার ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন নিসঙ্ক এবং কামিল মিশারা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই জুটিই জিতিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। আইজ়াজ়ের বলে পুল করতে গিয়েছিলেন মিশারা। ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক হয়নি। ক্যাচ ধরেন বাবর।
নিসঙ্কের সঙ্গে যোগ দেন কুশল পেরেরা। দুই ক্রিকেটার মিলে চেষ্টা করেন শ্রীলঙ্কার ইনিংসকে টেনে তোলার। সেই সময়ে কিছুটা চাপে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। রান রেটও বেড়ে যাচ্ছিল। এহসান খান নিজের বলে নিসঙ্কের ক্যাচ নিতে পারেননি।
অর্ধশতরান করার নিজমূর্তি ধারণ করেন শ্রীলঙ্কার ওপেনার। ১৩তম ওভারে দু’টি চার মারেন আয়ুষকে। তার পরের ওভারে আইজ়াজ়কে তিনটি চার মারেন। ওখানেই শ্রীলঙ্কার চাপ কিছুটা কমে যায়।
তারা আবার চাপে পড়ে নিসঙ্কো আউট হওয়ার পর। দ্রুত রান নিতে গিয়ে নিজাকতের থ্রোয়ে রান আউট হন তিনি। পরের বলেই কুশল পেরেরাকে আউট করেন মুর্তাজা। শ্রীলঙ্কার চাপ আরও বাড়িয়ে ফিরে যান আসলঙ্কা এবং কামিন্দু মেন্ডিসও। পর পর চারটি উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে শ্রীলঙ্কা। এই ম্যাচ তারা বার করতে পারবে কি না সেটা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। তবে শ্রীলঙ্কার চাপ কাটিয়ে দেন হাসরঙ্গ। মুর্তাজাকে ছয় এবং আতিক ইকবালকে দুটি চার মেরে শ্রীলঙ্কাকে জিতিয়ে দেন তিনি।