মঙ্গলবার আইপিএলের নিলামে সব নজর নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন প্রশান্ত বীর এবং কার্তিক শর্মা। দিনটা যে এ রকম যেতে চলেছে তা হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি দু’জনে। ৩০ লক্ষ টাকার বেস প্রাইসে আইপিএলের নিলামে নেমেছিলেন। দু’জনকেই ১৪ কোটি ২০ লক্ষ টাকায় কিনেছে চেন্নাই সুপার কিংস। বাকি আরও চার জন ‘আনক্যাপড’ ক্রিকেটার দাপট দেখিয়েছেন নিলামে।
যাঁরা এখনও দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেননি তাঁদের ‘আনক্যাপড’ ক্রিকেটার বলা হয়। পাশাপাশি, যাঁরা অন্তত পাঁচ বছর আগে অবসর নিয়েছেন তাঁরাও ‘আনক্যাপড’ বিভাগে। যেমন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ঘটনাচক্রে, ‘আনক্যাপড’ ধোনির সঙ্গেই খেলবেন প্রশান্ত, কার্তিক।
দুই ক্রিকেটারই ন্যূনতম দামের থেকে ৪৬৩৩.৩৩ গুণ বেশি দাম পেয়েছেন। দু’জনকেই ভবিষ্যতের তারকা বানানোর জন্য চেন্নাই নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রশান্তকে কিনতে লখনউ এবং মুম্বই জোর লড়াই দিলেও চেন্নাইয়ের মরিয়া মনোভাবের কাছে হার মানে তারা। রাজস্থান লড়াই করেও ৬ কোটির পর হাল ছেড়ে দেয়।
উত্তরপ্রদেশের অমেঠীর প্রশান্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলে উঠে এসেছেন। বাঁ হাতি স্পিন বোলিং এবং বাঁ হাতে ব্যাট করেন। এতেই মনে করা হচ্ছে, পরবর্তী রবীন্দ্র জাডেজা হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করবে চেন্নাই। নিলামের আগেই রাজস্থানে জাডেজাকে বিক্রি করে দিয়েছে চেন্নাই। দলে নিয়েছে সঞ্জু স্যামসন। নিলাম থেকেই তাঁরা জাডেজার বিকল্প খোঁজার কাজ শুরু করে দিল।
রাজ্য দল উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি রাজ্যের টি-টোয়েন্টি লিগে নয়ডা সুপার কিংসের হয়েও ভাল খেলেছে প্রশান্ত। শেষ প্রতিযোগিতায় ৩২০ রান করেছে ১৫৫ স্ট্রাইক রেটে। ম্যাচ শেষ করার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে ১১২ রান করেছে ১৭০ স্ট্রাইক রেটে।
প্রশান্তের বাবা শিক্ষামিত্র বা প্রাইমারি শিক্ষক। মাসে ১২ হাজার টাকা উপার্জন। ছেলে প্রায় ১৫ কোটি টাকা পাওয়ায় আনন্দে কী বলবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে প্রশান্ত বলেছেন, “আশা করেছিলাম কেউ অন্তত ওর জন্য দর হাঁকবে। চেন্নাই যে ওকে ১৪ কোটি টাকায় কিনেছে এটা এখনও হজম হচ্ছে না। স্বপ্ন মনে হচ্ছে। রিঙ্কু ভাইকে বলছিলাম, এক বার চিমটি কাটো আমায়। আমার পরিবার জীবনে এত টাকা কোনও দিন দেখেনি। টাকা দিয়ে কী করব এটা পরিবারের লোকজন ভাববে। আমার কাজ ক্রিকেট খেলা।”
অন্য দিকে, ধোনিকে আদর্শ হিসাবে মানা কার্তিক চেন্নাইয়ে যাবেন শুনেই কেঁদে ফেলেন। তাঁকে নিয়ে মুম্বই, কলকাতা, লখনউয়ের সঙ্গে লড়াই করেছে কেকেআর। রাজস্থানের উইকেটকিপারকে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল হায়দরাবাদও। সকলকে টপকে তুলে নেয় চেন্নাই। সম্প্রচারকারী চ্যানেলে কার্তিক বলেছেন, “এই প্রথম বার মাহি ভাইয়ের সঙ্গে খেলব। উত্তেজনায় মুখিয়ে আছি। অনেক কিছু ওঁর থেকে শিখতে চাই। এই প্রথম নিলামে আমাকে কোও দল কিনল। এতটাই খুশি হয়েছি যে কেঁদে ফেলেছি। আমার নাম ধরে বিডিং শুরু হওয়ার পর ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এল।”
আরও পড়ুন:
জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুল্লার আকিব নবি দারকে ৮.৪০ কোটিতে কিনেছে দিল্লি। তাঁরও ন্যূনতম মূল্য ছিল ৩০ লক্ষ। অর্থাৎ ২৭০০ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়েছেন তিনি। নতুন বলে সুইং করতে পারেন। পাশাপাশি ডেথ ওভারে বল করতে পারেন। চলতি সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে সাত ম্যাচে ১৫টি উইকেট নিয়েছেন। ইনিংসে পাঁচ উইকেটও রয়েছে।
এঁদের তিন জন বাদে, তেজস্বী সিংহকে কেকেআর নিয়েছে তিন কোটিতে। মঙ্গেশ যাদব ৩০ লক্ষ থেকে ৫.২ কোটি টাকা দাম পেয়েছেন।