Advertisement
E-Paper

চ্যাম্পিয়ন ভারত, সাদা ব্লেজ়ারে শীর্ষ ছোঁয়া রোহিতের দলই সাদা বলের ক্রিকেটের শৌর্য

সাফল্যের এমন মুহূর্ত সকলেই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন। যাঁরা এমন সব মুহূর্ত উপহার দেন, তাঁরাও নিজেদের নিরন্তর তাড়িয়ে বেড়ান। সাফল্যের খোঁজে। আরও ভাল পারফরম্যান্সের খোঁজে।

picture of Indian cricket team

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিজয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দল। ছবি: এএফপি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫ ০৮:৪০
Share
Save

পারে না। পারে না। পারে না!

রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা চোকার্স। পর পর দু’বার টেস্ট বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ সালে এক দিনের বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের পর ব্যর্থতার তকমা প্রায় সেঁটে গিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলের গায়ে। সেই ব্যর্থ দলটাই পর পর দুটো বড় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন! বার বার হেরে যাওয়া রোহিত, কোহলিরাই ক্রিকেটজীবনের শেষ প্রান্তে এসে ২২ গজের এভারেস্টে পৌঁছে দিলেন ভারতকে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সাদা ব্লেজ়ার গায়ে ভারতীয় ক্রিকেটারেরা যেন হিমালয়ের একেকটি বরফশুভ্র শৃঙ্গ।

যাঁরা ফাইনাল জিততে পারতেন না, তাঁরাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও ভারতে নিয়ে আসছেন। রবিবার রাতে ব্যর্থতার তকমাটা এক টানে ছিঁড়ে ফেলল রোহিতের দল। ২০ ওভারের বিশ্বকাপ জেতার পর বার্বাডোজ়ের ঘাস ছিঁড়ে খেয়েছিলেন রোহিত। সেই রোহিতই রবিবার দুবাইয়ে খানিকটা শান্ত। হার্দিক পাণ্ড্য, অক্ষর পটেল, রবীন্দ্র জাডেজারা যখন ট্রফি নিয়ে পিচের উপর বসে ছবি তুলতে ব্যস্ত, তখন কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে অধিনায়ক। তাঁর সঙ্গী কোহলি। মুহূর্তটা হয়তো ভারতীয় ক্রিকেটের আরও এক পালাবদলের ইঙ্গিত দিয়ে রাখল। তার কিছু ক্ষণ আগেই শুভমন গিলের কাঁধে হাত রেখে কোহলি বলে দিয়েছেন, ‘‘ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ একঝাঁক প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটারের হাতে সুরক্ষিত।’’

সাফল্য পাওয়া কঠিন। নিঃসন্দেহে কঠিন। সেই সাফল্যকে অভ্যাসে পরিণত করা অনেক বেশি কঠিন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) শেষ তিনটি বড় প্রতিযোগিতায় প্রায় সব ম্যাচ জিতেছে রোহিতের দল। শেষ ২৪টি ম্যাচের ২৩টি জিতেছেন রোহিতেরা। চোনা শুধু ওই ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ ফাইনালটা। ভারতীয় দলের কোচের নাম রাহুল দ্রাবিড় থেকে গৌতম গম্ভীর হয়েছে। ভারতীয় সাজঘরের পরিবেশ বদলেছে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিসিআই) ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে। বদলায়নি শুধু রোহিত, কোহলিদের সাফল্যের খিদে। দু’জনেরই চারটি করে আইসিসি প্রতিযোগিতা জেতা হয়ে গেল। ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর অহমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে দু’জনের চোখে শূন্য দৃষ্টি দেখেছিল ক্রিকেটবিশ্ব। সেই দু’জোড়া চোখেই রবিবার পূর্ণতার দীপ্তি।

Picture of Virat Kohli and Rohit Sharma

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা। ছবি: এএফপি।

বড় প্রতিযোগিতা জয়ের পর খেলোয়াড়েরা উচ্ছ্বাসে ভাসবেন। নানা ভাবে জয় উপভোগ করবেন। যেমন রবিবার জয় আসার সময় কে কার কোলে উঠবেন বুঝতে পারছিলেন না। যে যাঁকে সামনে পাচ্ছিলেন, তাঁর উপরই ঝাঁপিয়ে পড়ছিলেন উচ্ছ্বাসের ডালা সাজিয়ে। রোহিত-কোহলির ডান্ডিয়া নাচ জয়ের রাত আরও রঙিন করেছে। ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে এমন ছবি নতুন নয়। এমন মুহূর্ত সকলেই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন। যাঁরা এমন সব মুহূর্ত উপহার দেন, তাঁরাও নিজেদের নিরন্তর তাড়িয়ে বেড়ান। সাফল্যের খোঁজে। আরও ভাল পারফরম্যান্সের খোঁজে। ধারাবাহিকতার খোঁজে। কত রক্ত জল হলে এমন সাফল্যের স্বাদ পাওয়া যায়? কত দিনের প্রস্তুতিতে এমন একটা রাত পাওয়া যায়? এ সবের হিসাব কে রাখে? রাখেন সুনীল গাওস্করেরা। না হলে ৩০-৩৫ বছরের ছেলেদের সাফল্যে আত্মহারা হয়ে প্রকাশ্যে নাচতে পারেন ৭৫ বছরের বুড়ো! বিশ্বজয়ের স্বাদ অজানা নয় গাওস্করের। ভারতের প্রথম আইসিসি ট্রফি (১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ) জয়ের আর এক নায়ক ছিলেন পুরস্কার বিতরণী মঞ্চেই। বোর্ড সভাপতি রজার বিন্নীও খিলখিল করে হাসছিলেন। চ্যাম্পিয়নেরাই বোঝেন চ্যাম্পিয়নদের কষ্ট। তাঁরাই জানেন এই সাফল্যের স্বাদ। জানেন, নিজেদের কতটা তাড়িয়ে নিয়ে গেলে ট্রফির মঞ্চে ওঠা যায়।

সাদা বলের ক্রিকেট বর্তমান প্রজন্মের ভারতীয় ক্রিকেটারদের কাছে এক রকম জলভাত। ভারত চাইলে একই মানের তিনটে দল তৈরি করতে পারে। দেশেই একটা মিনি বিশ্বকাপ আয়োজন করে ফেলতে পারে। এক দিনে এই জায়গায় পৌঁছোয়নি ভারত। রয়েছে দীর্ঘ পরিকল্পনা, আধুনিক পরিকাঠামো, প্রশাসনিক আন্তরিকতা এবং অবশ্যই আইপিএলের অবদান। ভারতের তরুণ ক্রিকেটারেরাও এখন আর আন্তর্জাতিক অভিষেকে ভয় পায় না প্রতিপক্ষকে। দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামার আগেই বিদেশিদের মাপা হয়ে যায় আইপিএলে। নইলে বরুণ চক্রবর্তী, হর্ষিত রানাদের মতো কয়েক দিন আগে এক দিনের আন্তর্জাতিকে পা রাখা ক্রিকেটারেরাও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় মঞ্চে দাপুটে পারফরম্যান্স করতে পারতেন না। জুনিয়র সতীর্থদের কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি অধিনায়কও।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল শেষ হওয়ার পর কয়েক ডজন মনে রাখার মতো মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন রোহিত, কোহলিরা। কিছু দিন আগেই তো অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় দুই ব্যাটারের অবসরের কাহিনি প্রায় লেখা হয়ে গিয়েছিল। চোট সারিয়ে এক বছরের বেশি সময় পর মাঠে ফেরা মহম্মদ শামিকে নিয়ে সংশয়ের শেষ ছিল না। জসপ্রীত বুমরাহের চোট নিয়ে আশঙ্কার অন্ত ছিল না। ঋষভ পন্থের বদলে লোকেশ রাহুলকে উইকেটরক্ষক হিসাবে ব্যবহার করা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। পাঁচ জন স্পিনার নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল তৈরি নিয়েও কথা হয়েছে অনেক। এই সব কিছুই বিস্ফোরণের আকার নিত দুবাইয়ে রোহিতেরা ব্যর্থ হলে। সুযোগই দিলেন না তাঁরা। প্রতিযোগিতার পাঁচটি ম্যাচই সমান দাপটে জিতেছেন। বাংলাদেশ থেকে নিউ জ়িল্যান্ড, ভায়া পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়া। একটি ম্যাচেও টস জেতেননি রোহিত। উইকেট বুঝে আগে বল বা ব্যাট করার সুযোগ পাননি। তবু একটা ম্যাচও জিততে বেগ পেতে হয়নি। দল কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে কেউ না কেউ ঠিক উতরে দিয়েছেন। ব্যক্তিগত ভাবে সবাই সব ম্যাচে দারুণ খেলেননি। আবার সবাই সব ম্যাচে হতাশ করেননি। দল হিসাবে লড়াই করেছেন। দল হিসাবেই সাফল্য পেয়েছেন। সকলের মিলিত অবদানে এই সাফল্য। সে জন্যই এই সাফল্যের স্বাদ বেশি মিষ্টি।

Picture of Ravindra Jadeja

রবীন্দ্র জাডেজার ব্যাটে এল কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। ছবি: এএফপি।

১৪০ কোটির ভারতে ক্রিকেট শুধু খেলা নয়। সাধারণ মানুষের আবেগ। এক বেলা খেয়ে কোনও রকমে দিনযাপন করা মানুষের কাছে উদ্‌যাপনের মাধ্যম। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা রোহিত, কোহলিদের অজানা নয় বিপুল প্রত্যাশার কথা। এই চাপ মাথায় নিয়েই প্রতি দিন মাঠে নামতে হয় তাঁদের। কোনও দিন পারেন। কোনও দিন পারেন না। ক্রিকেট যে এক বলের খেলা। সব মিলিয়ে ওঁরা আসলে পারেন। বার বার ফাইনালে হারতে হলেও তো বার বার সে পর্যন্ত এগোতে হয়। একের পর এক প্রতিযোগিতার ফাইনাল তো ফাঁকতালে খেলা যায় না। যোগ্যতা, দক্ষতা প্রয়োজন। তবু শেষ বেলায় একাধিক ব্যর্থতা হয়তো ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে একটা অবিশ্বাসের জন্ম দিতে শুরু করেছিল। রবিবার রাত থেকে নতুন বিশ্বাসের যাত্রা শুরু হল। যে বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে বিশ্বসেরার গর্ব। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি তো আসলে মিনি বিশ্বকাপ। এক দিনের ক্রিকেটের সেরা আটটি দলের লড়াই। সেরাদের সেরা হয়ে দেখিয়েছেন রোহিত, কোহলিরা। প্রমাণ করে দিয়েছেন তাঁরাই আধুনিক সাদা বলের ক্রিকেটের শৌর্য।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নাকি কোচ গম্ভীরের অগ্মিপরীক্ষা ছিল। দল ব্যর্থ হলে তাঁর চাকরি নিয়ে টানাটানি হত। ছাত্রেরা শিক্ষকের চাকরি শুধু বাঁচিয়েই দিলেন না, আরও পোক্ত করলেন। তাঁকেও টেনে তুললেন এভারেস্টের শীর্ষে। গম্ভীরের গায়ে না-ই বা উঠল সাদা ব্লেজ়ার। না-ই বা ঝুলল গলায় পদক। ২০ ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বজয়ী দলের দায়িত্ব নিয়ে ৫০ ওভারের ক্রিকেটেও দাপট অক্ষুণ্ণ রাখা সহজ ছিল না। তাঁর একাধিক সিদ্ধান্ত সমালোচিত হয়েছে। রোহিতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের নানা ময়নাতদন্ত হয়েছে। রবিবার তাঁর দর্শনেও সিলমোহর দিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ২২ গজের এভারেস্টের পথে তিনিই তো শেরপা।

Indian Cricket team Virat Kohli Rohit Sharma BCCI ICC Champions Trophy 2025

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}