Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
দস্তানার দাপট
Sambaran Banerjee

Mayank Agarwal: মায়াঙ্কের ব্যাটে যেন  শিভালকরদের লড়াই

যোদ্ধা: সেঞ্চুরিতে পৌঁছে উচ্ছ্বাস মায়াঙ্কের। সঙ্গী ঋদ্ধিমান।

যোদ্ধা: সেঞ্চুরিতে পৌঁছে উচ্ছ্বাস মায়াঙ্কের। সঙ্গী ঋদ্ধিমান। ছবি পিটিআই।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:০৫
Share: Save:

প্রথম দলের তারকারা উপস্থিত থাকলে ওয়াংখেড়েতে হয়তো খেলাই হত না মায়াঙ্ক আগরওয়ালের। সেঞ্চুরি করে দলকে টেনে তোলার পরেও কি তাঁর জায়গা সুরক্ষিত? মনে হয় না। রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল ফিরলে সেই তো কথা উঠতে পারে, মায়াঙ্ককে বসিয়ে দাও। ইংল্যান্ডে দারুণ খেলে এসেছে রোহিত-রাহুল জুটি। তাই ওরা ফিট থাকলে মনে হয় না ওপেনার হিসেবে মায়াঙ্কের কথা কেউ ভাববে।

এই ওয়াংখেড়ে টেস্টেও তো অজিঙ্ক রাহানের চোট নিয়ে যখন জানাজানি হয়নি, কথা উঠেছিল মায়াঙ্ককে বসিয়ে বিরাট কোহালিকে খেলাও। চেতেশ্বর পুজারাকে ওপেন করিয়ে রাহানেকে রেখে দাও মিডল অর্ডারে। তারকাসুলভ হাবভাব না থাকা, শান্ত প্রকৃতির ডানহাতি ওপেনার যেন দুয়োরানির সন্তান।

মায়াঙ্কের মধ্যে পুরনো আমলের সেই ঘরোয়া ক্রিকেটের সৈনিকসুলভ একটা ব্যাপার আছে। প্রতিভার চেয়েও পরিশ্রম, জেদ, সংকল্প, দায়বদ্ধতা যাদের অস্ত্র। যা তোমার হাতে নেই, তা নিয়ে ভেবো না। যা হাতে আছে, সেটাই করে যাও— এই মন্ত্র নিয়েই নেমেছিল ও। ২৪৬ বলে ১২০ ব্যাটিং। পদ্মাকর শিভালকর, রাজিন্দর গোয়েলরা সারাজীবন ভারতীয় টেস্ট ক্যাপ পাননি। আমিও ওদের প্রজন্মেরই ক্রিকেটার। কাছ থেকে ওদের সংগ্রাম দেখেছি, নিজেরাও লড়েছি জাতীয় দলে আসার জন্য কিন্তু পারিনি। বেদী, প্রসন্ন, বেঙ্কট, চন্দ্রদের উপস্থিতিতে জাতীয় দলের দরজা বন্ধই থেকেছে শিভালকর, গোয়েলদের জন্য। তবু অক্লান্ত ভাবে নিজেদের কাজটা করে গিয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটে। মায়াঙ্ক দেখলাম বলেছে, সুনীল গাওস্করের কাঁধের অবস্থান দেখে নিজের ব্যাটিং স্টান্স পরিবর্তন করেছে। টেকনিকের দিক থেকে সেটা তো ঠিকই আছে। ব্যাটিংয়ের ব্যাকরণের ব্যাপারে সানির চেয়ে নিখুঁত উদাহরণ আর কে হতে পারে! কিন্তু মানসিক ভাবে নিজেকে উদ্বুদ্ধ রাখার জন্য আদর্শ হতে পারে শিভালকর, গোয়েলদের লড়াই।

সেই সঙ্গে বলতেই হবে ঋদ্ধিমানের সঙ্গত করে যাওয়া। মায়াঙ্কের মতো ঋদ্ধিকেও তো বসিয়ে দেওয়ার কথা উঠছিল, কেরিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার কাহিনিও বাজারে বেরিয়ে পড়েছিল। দিনের শেষে ৫৩ বলে ২৫ ব্যাটিং শুধু সব প্রশ্নের যোগ্য জবাবই দিল না, দলের স্কোরকে মজবুতও করে দিয়ে গেল। অসমাপ্ত পঞ্চম উইকেটে মায়াঙ্ক-ঋদ্ধি যোগ করে ফেলেছে ৬১ রান। দ্বিতীয় দিন সকালের এক ঘণ্টা যদি ওরা কাটিয়ে দিতে পারে, তা হলে অ্যাডভ্যান্টেজ ভারত।

আর ওয়াংখেড়েতে ব্যাটসম্যানকে পরীক্ষার মুখে পড়তে হচ্ছে। কানপুরের চেয়ে ওয়াংখেড়ের পিচে ঝাঁঝ বেশি। বাউন্স বেশি পাচ্ছে স্পিনাররা। মুম্বইয়ে জন্মগ্রহণ করা অজাজ় পটেল পুজারা আর কোহালিকে শূন্য রানে ফিরিয়ে জোরাল ঝটকা দিয়েছিল। ডগলাস জার্ডিনের পরে অজাজ় দ্বিতীয় ক্রিকেটার যে ভারতের বিরুদ্ধে তার জন্মের শহরে খেলতে নামল। সেই মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতেই যেন বিনা উইকেটে ৮০ থেকে মাত্র কয়েকটা বলের ব্যবধানে ভারতকে ৮০-৩ করে দিল বাঁ হাতি স্পিনার। সেখান থেকে দিনের শেষে ভারত ২২১-৪। চারটি উইকরেটের চারটিই অজাজ়ের নেওয়া। প্রথমে শ্রেয়স আয়ারকে নিয়ে ৮০ রান যোগ করে মায়াঙ্ক। তার মধ্যে শ্রেয়সের অবদান ছিল মাত্র ১৮। অজাজ়কে কাউন্টার অ্যাটাকের রণনীতি নিয়েও দারুণ সফল মায়াঙ্ক। বারবার ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে আক্রমণ করে ওর ছন্দটাই নষ্ট করে দিল। চারটি ছক্কার চারটিই অজাজ়কে মারা। কোহালির আউট নিয়ে চূড়ান্ত বিতর্ক তৈরি হল। আমার মনে হয়েছে, বল প্রথমে ব্যাটে লেগেছে। টিভি আম্পায়ার বীরেন্দ্র শর্মা বড্ড বেশি বার ক্লোজ-আপে দেখতে গিয়ে বোধ হয় গুলিয়ে ফেললেন। বলের গতিপথ যে পাল্টেছে সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল খালি চোখেই। ব্যাটে না লাগলে যেটা সম্ভব হত না। প্রশ্ন হচ্ছে, টিভি আম্পায়ারও যদি ভুল করেন, প্রযুক্তি রেখে তা হলে কী লাভ? আইপিএলের সময় থেকেই টিভি আম্পায়ারদের ভুল করতে দেখা যাচ্ছে, যেটা খুবই
চিন্তার কারণ। শুভমন গিল আবারও দারুণ শুরু করে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হল। ওকে বুঝতে হবে স্টপগ্যাপ ওপেনারের মতো ৩০-৪০ রান যথেষ্ট নয়। মায়াঙ্ক যেটা করে গেল। এর পরেও দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে মায়াঙ্ক। কিন্তু রাহুল দ্রাবিড়দের কিছুটা হলেও তো অস্বস্তি হবে যে, এই ছেলেটা শেষ টেস্টে বড় সেঞ্চুরি করে এসেছে। কী ভাবে বসাব?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sambaran Banerjee mayank agarwal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE