Advertisement
E-Paper

যে বাভুমাকে ‘বামন’ বলে বিদ্রুপ করেছিল ভারত, ইডেন গার্ডেন্সে তাঁরই ‘বিশাল’ ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেলেন শুভমন, পন্থ, বুমরাহেরা

খেলার মাঠে দৈহিক উচ্চতার বদলে দক্ষতা ও প্রতিভা যে অনেক বেশি দরকার, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন টেম্বা বাভুমা। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক শিক্ষা দিলেন ভারতীয় ক্রিকেটারদের।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:৩১
cricket

ইডেনে খেলা শেষে টেম্বা বাভুমার (বাঁ দিকে) সঙ্গে জসপ্রীত বুমরাহ। বিতর্ক কি মিটিয়ে ফেলতে চাইছেন ভারতীয় পেসার? ছবি: পিটিআই।

‘বামন’টেম্বা বাভুমার উচ্চতায় ঢাকা পড়ে গেলেন শুভমন গিলেরা। ‘বামন’ টেম্বা বাভুমা বুঝিয়ে দিলেন, খেলার মাঠে জিততে দৈহিক উচ্চতা নয়, বরং দক্ষতা ও প্রতিভার প্রয়োজন।

বছরের পর বছর ধরে সুনীল গাওস্কর, সচিন তেন্ডুলকরের মতো কম উচ্চতার ক্রিকেটারেরা যা প্রমাণ করেছেন, সেই বিশ্বাস এগিয়ে নিয়ে চলেছেন বাভুমা। কয়েক মাস আগে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাভুমা প্রমাণ করেছিলেন, চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে মাঠে নেমে খেলাটাই আসল। আরও এক বার সেটা করে দেখালেন তিনি। ইডেন গার্ডেন্সে। ভারতের ঘরের মাঠে। মাত্র আড়াই দিনে ভারতকে হারিয়ে দিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর সেই জয়ে ব্যাট হাতে বটগাছ হয়ে উঠলেন বাভুমা। দ্বিতীয় ইনিংসে করা তাঁর অপরাজিত ৫৫ রান একটা শিক্ষা হয়ে থেকে যাবে। কঠিন উইকেটে কী ভাবে ব্যাট করতে হয়, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন তিনি।

বাভুমার উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। ক্রিকেটারদের দুনিয়ায় একে কম উচ্চতা বলেই ধরা হয়। তবে গাওস্কর বা সচিনকে যা সহ্য করতে হয়নি, তাই বার বার সহ্য করতে হয় বাভুমাকে। দৈহিক উচ্চতার জন্য তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি হয়। সমাজমাধ্যমে মজার সব মিম তৈরি হয়। কখনও সতীর্থ মার্কো জানসেন, আবার কখনও ভারতের বোলিং কোচ মর্নি মর্কেলের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর ছবি নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ইডেন গার্ডেন্সে টেস্টের মাঝে তো ভারতীয় পেসার জসপ্রীত বুমরাহ তাঁকে সরাসরি ‘বামন’ বলে তির্যক মন্তব্যও করে বসেন।

ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ১৩তম ওভারে। বুমরাহের শেষ বল সামনের পায়ে খেলার চেষ্টা করেছিলেন বাভুমা। বল লাগে তাঁর প্যাডে। সঙ্গে সঙ্গে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করেন বুমরাহ। আম্পায়ার সাড়া দেননি। তখন পন্থ এবং বাকিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন বুমরাহ। তার পরে বুমরাহই বলেন রিভিউ নেবেন না। কারণ বাভুমা ‘বাওনা’, অর্থাৎ তাঁর উচ্চতা কম। বুমরাহ একটি অশ্লীল শব্দও উচ্চারণ করেন। হিন্দিতে ‘বাওনা’ শব্দের অর্থ বামন।

বুমরাহের এই মন্তব্যের সমালোচনা হলেও বাভুমা কিচ্ছু বলেননি। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্স বলেন, “এটা নিয়ে কোনও আলোচনাই হবে না। আমি তো প্রথম বার কথাটা শুনছি। মনে হয় না যা বলেছে সেটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনও আলোচনা হবে।” তাঁর কথাতেও স্পষ্ট হয়ে যায়, দলের মধ্যে এই বিষয়ে কোনও আলোচনা হবে না। কারণ, তাঁরা খেলতে এসেছেন। জিততে এসেছেন। তার বাইরে কিছু ভাবছেন না।

বাভুমা সেটা করেও দেখালেন। সেই কারণেই খেলা শেষে বুমরাহকে দেখা গেল, বাভুমার কাঁধে হাত দিয়ে কিছু বলছেন। নিজের মন্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছেন কি না তা জানা না গেলেও বুমরাহ যে বিতর্ক থামাতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট। পাল্টা বাভুমা কি কিছু বলেছেন? মনে হয় না। নইলে এত দিনের ক্রিকেট কেরিয়ারে তাঁকে যে বিদ্রুপ করা হয় তার জবাব তো তিনি দিতেন। বাভুমা ব্যাটেই সব সমালোচনা, বিদ্রুপের জবাব দিতে চান। যেমনটা দিয়েছেন ইডেনে।

বাভুমা প্রথম ইনিংসে রান পাননি। লেগ স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন। তিনি জানতেন, দ্বিতীয় ইনিংসে পিচ আরও খারাপ হবে। স্পিনারদের সামলানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে। তাই নিজের স্টান্সে খানিক বদল করেছিলেন। বাঁ পা কিছুটা লেগ সাইডে (চেস্ট অন স্টান্স) রেখে ব্যাট করা শুরু করেন। ফলে লেগ স্লিপে বা সিলি পয়েন্টে ক্যাচ আউট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। পাশাপাশি এলবিডব্লিউয়ের সম্ভাবনাও কমিয়ে দেন বাভুমা। ম্যাচ শেষে সেই বিষয়ে মুখ খুলেছেন বাভুমা। তিনি বলেন, “আমি উপমহাদেশের মাটিতে কয়েকটা ইনিংস খেলেছি। জানি, এখানে কী ভাবে ব্যাট করতে হয়। তাই ওই বদলটা করেছিলাম। ফলে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং সহজ হয়ে গিয়েছে।”

বাভুমার প্রধান শক্তি টেকনিক। পায়ের নড়াচড়া করেন। বলের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আবার পিছনের পায়েও সাবলীল তিনি। কঠিন উইকেটে পায়ের ব্যবহার কতটা জরুরি তা দেখালেন বাভুমা। স্পিনারদের সাবলীল ভাবে খেললেন। দেখে মনে হচ্ছিল, বাকি সকলে এক উইকেটে খেলছেন, আর তিনি অন্য উইকেটে। নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রেখেছিলেন বাভুমা। ঠান্ডা মাথায় খেলেছেন। ম্যাচ জিতে তিনি বলেন, “আমি নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। নিজের টেকনিক নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কখনও তাড়াহুড়ো করিনি। জানতাম, উইকেটে পড়ে থাকলে রান আসবে।” বাভুমা যেটা করে দেখালেন, সেটা তো পারলেন না ভারতীয় ব্যাটারেরা। খেলা শেষে কোচ গৌতম গম্ভীরও তা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই উইকেটে তো বাভুমা রান করেছে। তা হলে অত খারাপ উইকেটও ছিল না। এখানে টিকে থাকলে রান আসবে। এই উইকেটে ব্যাটারেরা টেকনিক ও মানসিকতার পরীক্ষা হয়। এখানে শুরু থেকে চালিয়ে খেলতে গেলে হবে না।”

গম্ভীরের কথা থেকে স্পষ্ট, বাভুমা যে ভাবে খেলেছেন, সে ভাবেই কঠিন উইকেটে খেলতে হয়। বলকে সম্মান দিতে হয়। বোলারদের সম্মান দিতে হয়। প্রতিটি বলের আগে মনঃসংযোগ করতে হয়। প্রতিটি বলের আগে ভাবতে হয়, সেটাই প্রথম বল। নইলে ১৩৬ বলে ৫৫ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলা যায় না। তার মধ্যে মাত্র চারটি চার মেরেছেন বাভুমা। অর্থাৎ, ৩৯ রান তিনি দৌড়ে নিয়েছেন। গোটা দল আউট হয়ে গেলেও বাভুমার উইকেট তুলতে পারেননি ভারতীয় বোলারেরা। ম্যাচের একমাত্র অর্ধশতরান তাঁর ব্যাট থেকেই এসেছে। শান্ত থেকেছেন। শেষে ম্যাচ জিতে উচ্ছ্বাসে ভেসেছেন।

এ ভাবেই জবাব দিতে ভালবাসেন বাভুমা। অধিনায়ক হিসাবে টেস্টে তাঁর রেকর্ড ঈর্ষণীয়। ১১টি টেস্টের মধ্যে ১০টি জিতেছেন তিনি। একটি টেস্ট বৃষ্টির কারণে ড্র হয়েছে। অর্থাৎ, অধিনায়ক হিসাবে এখনও হারেননি বাভুমা। তার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যেমন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল রয়েছে, তেমনই রয়েছে ইডেনের এই টেস্ট। ভারতের মাটিতে ১৫ বছর পর আবার টেস্ট জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর তা সম্ভব হয়েছে বাভুমার ওই ইনিংসের জন্যই। দলকে জিতিয়ে নিজের উচ্চতা তিনি এতটাই বাড়িয়ে ফেলেছেন যে তার বিশাল ছায়ায় ঢাকা পড়ে গিয়েছে গৌতম গম্ভীর, শুভমন গিলদের তারকাখচিত দল।

India vs South Africa 2025 Temba Bavuma Team India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy