কখনও সাধারণ মানের বোলার হতে চাননি। কতটা অসাধারণ হয়েছেন, সেটা সময় বলবে। কিন্তু তাঁর উইকেট নেওয়ার উদ্যাপন যে অসাধারণ, তা প্রথম আইপিএলেই ‘নোটবুক সেলিব্রেশন’ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর সেটাই কাল হল লখনউ সুপার জায়ান্টসের দিগ্বেশ রাঠীর। আইপিএলে এক ম্যাচের জন্য নির্বাসিত বোলারের নাম লেখা থাকল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ‘নোটবুকে’।
কোনও ব্যাটারকে আউট করার পরেই ‘নোটবুক’ উৎসব করেন ঝাঁকড়া চুলের দিগ্বেশ। হাতের ভঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন, ওই ব্যাটারের নাম তিনি লিখে রাখছেন। একসময় বিরাট কোহলিকে এই ভাবে উৎসব করতে দেখা গিয়েছিল। তাঁর যদিও কোনও জরিমানা বা শাস্তি হয়নি, কিন্তু দিগ্বেশকে ভুগতে হল। প্রথমে এই ধরনের উৎসবের জন্য জরিমানা করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু এ বার অভিষেক শর্মাকে আউট করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যেতে বলার জন্য তাঁকে এক ম্যাচ নির্বাসিত হতে হল।
দিগ্বেশ একসময় কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে নেট বোলার হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় সুনীল নারাইনের। তার পর থেকেই ক্যারিবিয়ান স্পিনারকে গুরু মানেন দিগ্বেশ। তাই এ বার কলকাতার বিরুদ্ধে নারাইনকে আউট করার পর কোনও উল্লাস করেননি। গুরুকে সম্মান জানিয়েছিলেন। ম্যাচের আগে অনুশীলনের সময় লখনউয়ের অধিনায়ক ঋষভ পন্থ নারাইনের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন দিগ্বেশকে। সঙ্গে ছিলেন নারাইনের দেশেরই নিকোলাস পুরান। তিনি নারাইনের সামনেই দিগ্বেশকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “নারাইন তো উইকেট নিয়ে উল্লাস করে না। তা হলে তুমি কেন করো?” জবাবে দিগ্বেশ বলেছিলেন, “আমি দিল্লির ছেলে।” দিল্লির ছেলে বলেই হয়তো কোহলির মতো তিনিও একটু বেশিই আগ্রাসী।
দু’বার জরিমানা দিলেও দিগ্বেশ কখনও নিজের ‘নোটবুক’ উৎসব ছাড়েননি। তাঁর দাদা সানি বলেন, “আমি দিগ্বেশকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এটা নিয়ে। ও বলল, এট ওকে বাড়তি উৎসাহ দেয়। ভাল খেলতে উজ্জীবিত করে। আমি ওকে বলে দিয়েছি, ভাল লাগলে এটা করতেই পারিস, কিন্তু কোনও ক্রিকেটারকে অসম্মান করিস না। ও যে নজর কাড়ার জন্য এমন করে, তা কিন্তু নয়। ওগুলো নিয়ে ভাবেই না। সমাজমাধ্যমও ব্যবহার করে না ও। হোয়াট্সঅ্যাপে স্টেটাসও দেয় না। দিগ্বেশ বলে, স্টেটাস না থাকলে স্টেটাস দেওয়ার মানে নেই।”

পঞ্জাব কিংসের প্রিয়াংশ আর্যকে আউট করে নোটবুক উৎসব দিগ্বেশ রাঠীর। ছবি: পিটিআই।
দিল্লির বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলতেন ‘স্টেটাস না থাকা’ দিগ্বেশ। উইকেটরক্ষক বিজয় দাহিয়া এমনই একটি ম্যাচে তাঁকে দেখতে পান। দিল্লি প্রিমিয়ার লিগে দক্ষিণ দিল্লি সুপারস্টারজ়ের হয়ে খেলছিলেন দিগ্বেশ। গত বছর ১৪টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে লখনউ সুপার জায়ান্টসে যোগ দেন ৩০ লক্ষ টাকায়। দাহিয়া এখন লখনউ দলের সহকারী কোচ। সেই দলেই খেলেন দিগ্বেশ। তাঁর দাদা সানি বলেন, “দিল্লির বিভিন্ন দল থেকে ডাক পেত। যে দলে জায়গা পেত, সেই দলের হয়েই খেলত। এক সময় পীরাগরির একটা অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু সেখানে ওকে দু’বছর বসিয়ে রেখেছিল। পরে দাহিয়া ওকে দেখেন একটা ক্লাব ম্যাচে। মোরি গেট অ্যাকাডেমিতে নিয়ে যান দিগ্বেশকে।”
দিগ্বেশের ডাক নাম ববি। তাঁর বাবা ধর্মেন্দ্র দুই ছেলের নাম রেখেছিলেন সানি এবং ববি। তৃতীয় ছেলের নাম রেখেছিলেন হ্যাপি। সানি বাঁহাতি স্পিনার ছিলেন। ভাল খেলতেনও। কিন্তু বাবা ধর্মেন্দ্রর পক্ষে দুই ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর সামর্থ্য ছিল না। তাই বড় ছেলে সানি নিজেই ক্রিকেট থেকে সরে আসেন। ভাইকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। সানি এখন পুলিশ কনস্টেবল। দাদা জানেন, ভাই পরিশ্রম করেছে বলেই এখন এই পর্যায়ে খেলতে পারছে।
অথচ, দিগ্বেশ একসময় চেয়েছিলেন ব্যাটার হতে। কিন্তু পরে রহস্য স্পিনার হয়ে ওঠেন। কী ভাবে এই পরিবর্তন? দিগ্বেশ বলেন, “কেরিয়ারের শুরুতে ব্যাট করতাম। কিন্তু খুব বেশি সুযোগ পেতাম না। ব্যাট করার পর সিনিয়রদের বল করতাম। নারাইনের বোলিং দেখে অনেক কিছু শিখেছিলাম। সেগুলো নেটে করার চেষ্টা করতাম। সেখান থেকেই অনেক কিছুই শিখেছি। কেউ আমাকে হাতে ধরে বোলিং শেখায়নি। আমার বল করতে এমনিই ভাল লাগে না। আমি চাই রহস্য স্পিনার হতে। সেই ধরনের বোলিং শুরু করতেই আমার সামনে নতুন একটা পৃথিবী খুলে যায়। ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলতে পারলে মজা পেতাম। দিল্লিতে রবিন বিশৎ আমাকে বলেছিল বোলিংয়ে মন দিতে। বলেছিল, আমি বোলার হলেই উন্নতি করব, ব্যাটার হিসাবে নয়। সেখান থেকেই শুরু।”
দিগ্বেশ মনে করেন, আইপিএল তাঁর কেরিয়ার পাল্টে দেবে। তিনি বলেন, “আমি নিজের সেরাটা দিয়ে যেতে চাই। নতুন জিনিস শিখতে ভালবাসি। প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করি। অতীত নিয়ে ভাবি না। পুরনো ম্যাচ দেখি না। নিজের বোলিংও দেখি না।”