অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ় খেলে ফেরার পর রঞ্জি ট্রফিতে খেলেছিলেন বিরাট কোহলি। রেলের বিরুদ্ধে দিল্লির জার্সি পরে খেলা সেই ম্যাচেই কোহলিকে শেষ বার দেখা গিয়েছে লাল বলের ক্রিকেটে। তার পর আইপিএলের মাঝে হঠাৎই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সম্মান রাখতেই হয়তো ১২ বছর পর রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ খেলেছিলেন কোহলি। জাতীয় দলে জায়গা ধরে রাখার জন্য ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে হবে, বোর্ডের এই নিদান পছন্দ হয়নি তাঁর। ঘনিষ্ঠ মহলে একাধিক বার জানিয়ে ছিলেন। বার্তা দিতেই হয়তো টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন কোহলি।
আবারও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ২০২৭ সালের এক দিনের বিশ্বকাপের পরিকল্পনায় থাকতে হলে ঘরোয়া ৫০ ওভারের ক্রিকেট খেলতে হবে। খেলতে বিজয় হজারে ট্রফি। নতুন বার্তা দিয়েছে বিসিসিআই। কর্তারা চান কোহলি এবং রোহিত শর্মা খেলার মধ্যে থাকুন।
এ বার সরাসরি মুখ খুলেছেন কোহলি। রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শতরান করে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, মাঠের প্রস্তুতিতে তাঁর আস্থা নেই। নিজস্ব পদ্ধতিতে নিজেকে প্রস্তুত করেন। কোহলি বলেছেন, “আমি কখনও মাঠের প্রস্তুতিতে বিশ্বাস করি না। আমার কাছে মানসিক প্রস্তুতিটাই আসল। আমি কঠোর পরিশ্রম করি। যত ক্ষণ আমার শরীর ঠিকঠাক আছে এবং মানসিক তীক্ষ্ণতা রয়েছে, তত ক্ষণ জানি আমি ঠিক আছি। ম্যাচের আগে এক দিনের বিশ্রামও নিয়েছি। এখন আমার বয়স ৩৭ বছর। রিকভারির সময় দরকার হয়। এ ভাবেই এত দিন খেলে এসেছি। এখন তো শুধু একটা ফরম্যাটেই খেলি।” তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমার কাছে আসল হল সচেতনতা। আপনি পরিস্থিতি অনুযায়ী কতটা সচেতন, সাফল্য ও ব্যর্থতার সময় কতটা সচেতন, তার উপর নির্ভর করে আপনি মানসিক ভাবে কতটা খেলার মধ্যে রয়েছেন। আমি সব সময় সচেতন থাকার চেষ্টা করি।’’
মনে করিয়ে দিয়েছেন এই বয়সেও তিনি পরিশ্রম বিমুখ নন। কোহলি বলেছেন, ‘‘মনের মধ্যে কী চলছে, তা নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। তার জন্য পরিশ্রম করতে হবে। এক দিনে হবে না। এত বছর ধরে পরিশ্রম করেছি। এখনও প্রতিদিন উন্নতির চেষ্টা করি। এখনও প্রতিদিন আরও ভাল ব্যাট করার চেষ্টা করি। আমি এ রকমই।”
২০০৮ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন কোহলি। সমসাময়িক সময়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটারের স্বীকৃতি পেয়েছেন। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডার। এবং অবশ্যই ফিটনেসের ব্যাপারে অন্যতম সেরা। কোহলি জানেন কী ভাবে সাফল্য পেতে হয়। জানেন কোথায় কোথায় উন্নতি করতে হবে। বোঝেন কী কী সমস্যা হচ্ছে। এত দিনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বোঝেন।
বোর্ড কর্তারা চান, কোহলি-রোহিতেরা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলুন। খেলার মধ্যে থাকুন। যাতে তাঁদের ম্যাচ অনুশীলনের অভাব না হয়। কর্তাদের থেকে হয়তো বেশি চান গৌতম গম্ভীর এবং অজিত আগরকর। গম্ভীর ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার পর থেকেই জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার উপর জোর দিচ্ছেন। বিশেষত গত বর্ডার-গাওস্কর সিরিজ়ের পর থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটের উপর জোর দিচ্ছেন গম্ভীর। প্রধান নির্বাচক আগরকরও তাঁর পাশে। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে ভরাডুবির পর গম্ভীর বলেছেন, তিনি ফল চান। জাতীয় দলের ক্রিকেটারেরা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবেন কিনা, সেটা তাঁরা ঠিক করবেন। কে কী পদ্ধতিতে নিজেকে তৈরি করবেন, তা তাঁদের নিজস্ব বিষয়।
গম্ভীর ফল চেয়েছিলেন। কোহলি ফল দিয়েছেন। নিজস্ব পদ্ধতি মেনেই দিয়েছেন। বল এখন কোচের কোর্টে। কোহলির শতরানের মুহূর্তে গম্ভীর সাজঘরে রোদচশমায় চোখ ঢেকে রাখতে পারেন। রোহিত শর্মার উগ্র উচ্ছ্বাসের দিকে না-ই তাকাতে পারেন। কিন্তু ফল অস্বীকার করবেন কী করে? কোহলি পর পর দু’ম্যাচে রান পেলেন। রোহিত টানা তিন ম্যাচে। দুই সিনিয়র ব্যাটারের প্রস্তুতি, ফিটনেস নিয়ে প্রশ্নগুলো ক্রমশ যুক্তিহীন হয়ে যাচ্ছে।
রবিবার ম্যাচের কোহলি নিজের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন রাখঢাক না করে। বলা যায় ‘স্ট্রেট ব্যাট’-এ খেলেছেন। বিজয় হজারে ট্রফিতে খেলা নিয়ে ধোঁয়াশা রেখে দিয়েছেন।