পাকিস্তানের কোচ মাইক হেসন দাবি করেছেন, ভারতীয় স্পিনারদের সামলাতে সমস্যা হবে না পাক ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আক্রম একেবারেই পাক কোচের বিপরীত কথা বললেন। তিনি মনে করেন, কুলদীপ যাদব ও সি ভি বরুণই কাঁটা হবে পাকিস্তানের। কারণ, সম্প্রতি পাক ব্যাটিং বিভাগে কোনও বড় নাম নেই যাঁরা ভারতের দুই তারকা স্পিনারকে সামলেদিতে পারেন।
রবিবারের দ্বৈরথে যশপ্রীত বুমরার উপরেও নজর থাকবে ক্রিকেটবিশ্বের। পাক ওপেনার সাইম আয়ুব কী ভাবে বুমরাকে সামলাবেন? শুক্রবার ওমানের বিরুদ্ধে প্রথম বলে আউট হয়েছেন তিনি। আক্রম যদিও বুমরাকে নিয়ে ভাবছেন না। সোনি স্পোর্টস নেটওয়ার্ক আয়োজিত ভার্চুয়াল মিডিয়া সেশনে আক্রমণ বলছিলেন, ‘‘পাওয়ার প্লেতে দু’ওভার হয়তো বল করবে বুমরা। কিন্তু পাকিস্তানের সব চেয়ে বড় কাঁটা হতে পারে ভারতীয় স্পিনাররা। কুলদীপ ও বরুণের বল বোঝাই যায় না।’’ যোগ করেন, ‘‘মাঝের ওভারে কোনও বড় নাম নেই যারা এই দুই স্পিনারের বিরুদ্ধে দ্রুত রান তুলতে পারে। আমার মনে হয়, এই দুই স্পিনারই চাপে ফেলবে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের।’’
রবিবারের ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ আর পাঁচটি ম্যাচের মতো নয়। পহেলগাম জঙ্গিহানা ও ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে এই প্রথম বার ক্রিকেটে মুখোমুখি হচ্ছে দুই দেশ। যা নিয়ে চর্চার শেষ নেই।অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সাধারণ মানুষের আবেগকে প্রাধান্য না দিয়ে কেন ক্রিকেট মাঠে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলছে ভারত?
কিন্তু প্রাক্তন পাক অধিনায়ক ওয়াসিম আক্রম মনে করেন, আগামী প্রজন্মকে বোঝানো উচিত, ক্রিকেট ও রাজনীতি এক নয়। দু’টি ক্ষেত্র সম্পূর্ণ আলাদা। ভারত-পাক দ্বৈরথকে আর পাঁচটি ক্রিকেট ম্যাচের মতোই দেখা উচিত। আক্রম বলছিলেন, ‘‘ভারত-পাক ম্যাচকে শুধুমাত্র ক্রিকেট ম্যাচ হিসেবেই দেখা উচিত। আমরা যখন খেলতাম, তখন বিকেল ৫টা বাজলেই মাঠের দ্বৈরথ ভুলে যেতাম। বন্ধুর মতো মিশতাম ক্রিকেটারদের সঙ্গে। কিন্তু বর্তমানে সমাজমাধ্যম রয়েছে। সেখানে দু’দেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে একাধিক কটূ মন্তব্য চোখে পড়ে। যা দু’দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ করে দিচ্ছে। বাইরের শত্রুতা ভুলে ক্রিকেটে মনোযোগ দেওয়া হোক।’’
সমাজমাধ্যমের যুগে কি বর্তমান পরিস্থিতিকে ভুলে গিয়ে শুধুমাত্র ক্রিকেটকে প্রাধান্য দেওয়া সম্ভব? এই পরিস্থিতিতে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর সাক্ষাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকবে না তো? আক্রমের উত্তর, ‘‘এ ধরনের ম্যাচে উত্তেজনা তো থাকবেই। কিন্তু ক্রিকেটারেরা যেন একে অপরকে অসম্মান না করে। তা হলে আগামী প্রজন্মের কাছে খারাপ বার্তা যাবে। মাঠে আগ্রাসন তো আটকানো সম্ভব নয়। সেটা যেন শুধুমাত্র ক্রিকেটীয় আগ্রাসন হয়। ব্যক্তিগত আক্রমণ হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’’
নয়ের দশকে পাক পেস বিভাগে ছিল ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিসের মতো বড় নাম। কয়েক বছর পরে পাক পেস বিভাগে যোগ দেন শোয়েব আখতার। পাকিস্তানের সেই স্বর্ণযুগের পেসাররা রীতিমতো রাতের ঘুম কেড়ে নিতেন ব্যাটসম্যানদের। বর্তমানে যশপ্রীত বুমরাও সে রকমই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন। পাকিস্তানের স্বর্ণযুগের পেসারদের মতোই কিতাঁর প্রতিভা?
আক্রমণ একেবারেই তুলনা করতে চাননি। বলছিলেন, ‘‘১৯৯০ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত ব্যাটসম্যানেরা খুব একটা বড় শট খেলত না। বোলাররা অনেক স্বাধীন ভাবে বল করতে পারত। তারা ভাবতেই পারত না কোনও ব্যাটসম্যান তাদের স্টেপ আউট করে ছক্কা মেরে দেবে। কিন্তু এখন ক্রিকেট একেবারেই বদলে গিয়েছে। টি-টোয়েন্টি, ওয়ান ডে এমনকি টেস্টেও বড় শট নিতে ভয় পায় না ব্যাটসম্যানেরা। সম্প্রতি বোলারদের কাজ অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছে। এই যুগেও বুমরা যে ব্যাটসম্যানের মনে ভয় তৈরি করতে পারছে, এটাই ওকে অনেকটাএগিয়ে রেখেছে।’’
সলমন আলি আঘার নেতৃত্বে পাকিস্তান যে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলছে, তা মানছেন আক্রম। বাবর আজ়ম, মহম্মদ রিজ়ওয়ানকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সহজ ছিল না। এশিয়া কাপে তরুণ দল নিয়ে পাকিস্তান সাফল্য পাবে কি না বলা যাচ্ছে না। কিন্তু তাঁদের আগ্রাসী মনোভাবে খুশি কিংবদন্তি। তাঁর কথায়, ‘‘বাবর ও রিজ়ওয়ানকে অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিজেদের খেলার ধরন বদলায়নি। বর্তমান পাক দলের ক্রিকেটারেরা অনেক বেশি ছক্কা মারছে। শেষ ত্রিদেশীয় সিরিজ়ে ওরা ৪০টি ছক্কা মেরেছে। যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক।’’
রবিবারের ম্যাচে কারা শেষ হাসি হাসে সেটাই এখন দেখার।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)