তিন বছর আগে আইপিএলের মহানিলামে কোনও দলই পাননি তিনি। মরসুমের মাঝপথে পরিবর্ত ক্রিকেটার হিসাবে তাঁকে কিনেছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। সেই রজত পাটীদারই এ বার আইপিএলে নেতৃত্ব দেবেন বিরাট কোহলিকে। বৃহস্পতিবার আরসিবি-র নতুন অধিনায়ক হিসাবে ঘোষণা করা হল মধ্যপ্রদেশের ক্রিকেটারের নাম। স্বয়ং কোহলি তাঁকে নিয়ে বলে দিলেন, “তোমার পাশে আমরা সবাই আছি।”
২০২১ সালে প্রথম বার আইপিএলে সুযোগ পেয়েছিলেন পাটীদার। আরসিবি-ই কিনেছিল তাঁকে। চার ম্যাচে মাত্র ৭১ রান করার পর তাঁকে রাখার প্রয়োজন বোধ করেনি। মহানিলামে কোনও দলই কিনতে আগ্রহ দেখায়নি। মরসুমের মাঝপথে লভনীত সিসৌদিয়া চোট পাওয়ায় তড়িঘড়ি সই করানো হয় পাটীদারকে। কে জানত মরসুমের শেষ পর্বে তিনিই হয়ে উঠবেন নায়ক।
২০২২ সালে করোনার কারণে তিনটি মাঠে আইপিএলের সব খেলা হয়েছিল। তবে দু’টি প্লে-অফ পেয়েছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স। লখনউয়ের বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুর এলিমিনেটর ম্যাচে ইডেন ভরে উঠেছিল কোহলির খেলা দেখতে। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সাফল্য পাননি। কিন্তু কোহলির ব্যর্থতার মঞ্চে নায়ক হয়ে গিয়েছিলেন পাটীদার। ৪৯ বলে তাঁর অপরাজিত ১১২ রানের ইনিংস ছিটকে দিয়েছিল লখনউকে। পরের ম্যাচে রাজস্থানের বিরুদ্ধেও অর্ধশতরান করেছিলেন। তবে গুজরাতের কাছে হেরে ফাইনালে উঠতে পারেনি বেঙ্গালুরু।
আট ইনিংসে একটি শতরান-সহ ৩৩৩ রান করায় পাটীদারকে রেখে দেয় বেঙ্গালুরু। তখন থেকেই তিনি দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে গোড়ালিতে চোট পেয়ে ২০২৩ সালের আইপিএলে খেলা হয়নি তাঁর। তবে আইপিএল এবং ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স চোখ এড়ায়নি নির্বাচকদের। ২০২৩-এর অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ়ে ভারতীয় দলে সুযোগ পান। সে মাসের শেষ দিকে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ়ে শ্রেয়স আয়ারের বিকল্প হিসাবে দলে ঢোকেন। যদিও কোনও সিরিজ়েই অভিষেক হয়নি।
২০২৩-এর ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এক দিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয়। ১৬ বলে ২২ রান করেছিলেন। ২০২৪-এর জানুয়ারিতে কোহলির পরিবর্ত হিসাবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ের প্রথম দু’টি টেস্টে সুযোগ পান। ২ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় টেস্টে অভিষেক হয়। দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৩২ এবং ৯ রান করেন। সেই টেস্ট সিরিজ়ের পরে আর জাতীয় দলে ফিরতে পারেননি। তবে বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক হিসাবে ভাল খেলতে পারলে আবার জাতীয় দলের দরজা খুলে যেতে পারে।
আইপিএলে প্রথম বার অধিনায়কত্ব করতে নামলেও, ঘরোয়া ক্রিকেটে ইতিমধ্যেই নেতৃত্ব দেওয়া হয়ে গিয়েছে পাটীদারের। সৈয়দ মুস্তাক আলি এবং বিজয় হজারে ট্রফিতে মধ্যপ্রদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এর মধ্যে সৈয়দ মুস্তাকে দলকে ফাইনালেও তুলেছিলেন।
আরও পড়ুন:
নেতৃত্ব যে বোঝা নয় পাটীদারের কাছে, এটা তাঁর পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলেই বোঝা যায়। সৈয়দ মুস্তাকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছিলেন তিনি। ন’ইনিংসে ৪২৮ রান করেছিলেন। স্ট্রাইক রেট ১৮৬.০৮। বিজয় হজারেতে ২২৬ রান করেছিলেন।
তবে আইপিএলের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ অন্য রকম হতে চলেছে। এখানে রাজ্য দলের সতীর্থ নয়, সামলাতে হবে দেশ-বিদেশের তারকা ক্রিকেটারদের। কোহলি তো রয়েছেনই। পাশাপাশি ফিল সল্ট, লিয়াম লিভিংস্টোন, ক্রুণাল পাণ্ড্য, টিম ডেভিড, লুনগি এনগিডের মতো বিদেশিদেরও সামলাতে হবে। সেই কাজ পাটীদার কী ভাবে সামলান, সেটাই এখন দেখার।