Advertisement
১৮ মে ২০২৪

চাষজমি থেকে ক্যারাটে, স্বপ্নের দৌড়ে সেরা ডাউয়াগুড়ির শরৎ

সাতসকালে লিজ নেওয়া জমিতে চাষের কাজ। তার পর প্রায় সাত কিমি দৌড়ে ডাউয়াগুড়ির গ্রামের বাড়ি থেকে কোচবিহার শহরের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যাওয়া। নিয়ম করে কঠোর অনুশীলন। বাস ভাড়া বাঁচাতে ফের দৌড়ে বাড়ি ফেরা।

ট্রফি হাতে শরৎ। —নিজস্ব চিত্র।

ট্রফি হাতে শরৎ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৬ ০১:৩৫
Share: Save:

সাতসকালে লিজ নেওয়া জমিতে চাষের কাজ। তার পর প্রায় সাত কিমি দৌড়ে ডাউয়াগুড়ির গ্রামের বাড়ি থেকে কোচবিহার শহরের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যাওয়া। নিয়ম করে কঠোর অনুশীলন। বাস ভাড়া বাঁচাতে ফের দৌড়ে বাড়ি ফেরা। আর্থিক অভাব অনটনের মধ্যে এমনই রুটিন মেনে ঘাম ঝরিয়ে অল বেঙ্গল ফুল কন্ট্র্যাক্ট ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কোচবিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম ডাউয়াগুড়ির যুবক শরৎ রায়। যুবকের এই সাফল্যে খুশির হাওয়া গোটা এলাকায়।

অল বেঙ্গল ফুল কন্ট্রাক্ট ক্যারাটে ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার সহ সভাপতি কাজল দে বলেন, “কোচবিহারের কোনও প্রতিযোগী এ বার প্রথম ও রকম প্রতিযোগিতায় রাজ্য সেরার পুরস্কার পেয়েছেন। ভবিষ্যতে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফল হওয়ার রসদ ওর মধ্যে রয়েছে। এ জন্য নিয়মিত কঠিন অনুশীলনের সুযোগ দরকার। এখন থেকে তা করতে হবে।”

ফুল কন্ট্র্যাক্ট ক্যারাটে ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া সূত্রেই জানা গিয়েছে, ফেডারেশন ও দুলমি নাদিহা ক্যারাটে মার্শাল আর্ট ট্রেনিং ক্লাবের উদ্যোগে ১৮-২০ মার্চ পুরুলিয়ার রবীন্দ্র ভবনে ওই প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আড়াইশোর বেশি প্রতিযোগী যোগ দেন। তাদের মধ্যে ৬০-৭০ কেজি বিভাগে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হন শরৎ। গ্রামের বাসিন্দারা অনেকেই বলছেন, স্রেফ মনের জোর ও অদ্যম ইচ্ছাশক্তি থাকলে লক্ষ্যপূরণ যে অসম্ভব নয় সেই উদাহরণে এটা নতুন সংযোজন। শরৎ যেখানে প্রশিক্ষণ নেন, কোচবিহার পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়ার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের চিফ ইন্সট্রাক্টর অপূর্ব রায় বলেন, “নিয়মিত অনুশীলনে এতটুকু খামতি রাখেনি। অসম্ভব জেদি ও। টাকার অভাবে প্রায় সাত কিমি দৌড়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যাতায়াত করাটাও মুখের কথা নয়। ওর সাফল্যে আমরা ভীষণ খুশি।” আত্মবিশ্বাসকে সম্বল করে আপাতত সেই লক্ষ্যেই এগোতে চান শরৎ। তিন জনের অনটনের সংসার বলতে দাদা, বৌদি ও তিনি। দোকান কর্মী দাদার আয়েই সংসার চলে। শরৎ নিজে লিজ নেওয়া বিঘা দেড়েক জমিতে চাষাবাদ করেন। তাও বছরের নির্দিষ্ট সময়ে। রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েও অবশ্য ধান চাষের কাজে সময় দিচ্ছেন। ওই কাজের ফাঁকেই তিনি বলেন, “বাবা, মা মারা গিয়েছেন। দাদার সামান্য আয়ে সংসার চলে টেনেটুনে। তাই লিজ নিয়ে কিছুটা জমিতে ধান চাষ করছি। যদি তাতে সংসারে কিছুটা সাহায্য করতে পারি। বিকল্প রোজগার নেই। কিন্তু যত প্রতিকূলতা থাক না কেন আরও বড় পুরস্কার জিততে চেষ্টা চালিয়ে যাব।”

ফুল কন্ট্র্যাক্ট ক্যারাটেতে ভবিষ্যতে তিনি আরও বড় সাফল্য পাবেন কিনা পরের কথা। আপাতত শরতের হার না মানা লড়াকু মানসিকতাই সবার মুখে মুখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

development Dreaming Cooch Behar Dauaguri village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE