Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘মনে হচ্ছিল সাদা পোশাকে যেন আইপিএল খেলছি ইডেনে’

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দিনরাতের টেস্ট খেলতে নেমে ঋদ্ধির মনে হয়েছিল, ‘‘এটা টেস্ট, না আইপিএল!’’

 স্মরণীয়: গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্টের সাক্ষী হতে এ ভাবেই ভরে উঠেছিল ইডেন। যে উন্মাদনা দেখে অভিভূত ঋদ্ধিমান। (নীচে) ভারতীয় উইকেটকিপারের দক্ষতায় মুগ্ধ ভারত অধিনায়ক কোহালি। ফাইল চিত্র

স্মরণীয়: গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্টের সাক্ষী হতে এ ভাবেই ভরে উঠেছিল ইডেন। যে উন্মাদনা দেখে অভিভূত ঋদ্ধিমান। (নীচে) ভারতীয় উইকেটকিপারের দক্ষতায় মুগ্ধ ভারত অধিনায়ক কোহালি। ফাইল চিত্র

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:০৮
Share: Save:

ইডেনের ঘাসের সঙ্গে তাঁর অদ্ভুত সম্পর্ক। সাধারণ উইকেটকিপার থেকে তাঁর ‘সুপারম্যান’ হয়ে ওঠার নেপথ্যে সাক্ষী এই নন্দনকানন। এই মাঠে বহু স্মৃতি রয়েছে তাঁর। ক্লাব ক্রিকেটের বড় ম্যাচ থেকে রঞ্জি ট্রফি। বিজয় হজারে থেকে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির নকআউট। একেবারে দর্শকশূন্য গ্যালারির মধ্যে খেলতে হয়েছে তাঁকে। আইপিএলই প্রথম মঞ্চ, যেখানে দর্শক ঠাসা ইডেন গ্যালারির মাঝে খেলার প্রথম অভিজ্ঞতা হয়েছিল ঋদ্ধিমান সাহার।

কিন্তু এই ইডেনেই শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্টে ভারতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আইপিএলের তুলনায় তখন ৫০ শতাংশও মাঠ ভর্তি হতে দেখেননি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দিনরাতের টেস্ট খেলতে নেমে ঋদ্ধির মনে হয়েছিল, ‘‘এটা টেস্ট, না আইপিএল!’’

দুরন্ত ক্যাচে মাহমুদুল্লাকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরে গ্যালারির প্রত্যেক কোণ চেঁচিয়ে উঠেছিল, ‘‘সুপারম্যান... সুপারম্যান...।’’ ব্যাট করতে নেমে প্রথম কভার ড্রাইভ করে চারটি রান কুড়িয়ে নেওয়ার পরে শোনা গিয়েছিল, ‘‘বাংলার শান, ঋদ্ধিমান।’’ টেস্ট ম্যাচ খেলার সময় এ ধরনের অভিজ্ঞতা আগে হয়নি ভারতীয় উইকেটকিপারের। ভারতের প্রথম দিনরাতের টেস্ট ম্যাচ তাঁর কাছে ফিরিয়ে দিল আইপিএলের অনুভূতি। সোমবার ব্যক্তিগত কাজে মুম্বই উড়ে গিয়েছেন ঋদ্ধি। সেখান থেকেই ফোনে আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘‘অসাধারণ অনুভূতি। ইডেনের ৬০ হাজার দর্শকের মধ্যে আগে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা হয়নি। শুরুতে মনে হয়েছিল এ যেন সাদা পোশাকে আইপিএল খেলছি। ফিল্ডিংয়ের সময় প্রত্যেক ‘ডট বল’ (যে বলে রান হয় না)-এর সঙ্গে সমর্থকেরা চেঁচিয়ে উঠছেন। উইকেট পড়লেই শুরু হচ্ছে মেক্সিকান ওয়েভ। এ সব টেস্ট ম্যাচে শেষ কবে ইডেন দেখেছে জানা নেই।’’ যোগ করেন, ‘‘ব্যাট করতে নেমে প্রথম কভার ড্রাইভ মারার পরেই গমগম করে উঠল গ্যালারি। এই অভিজ্ঞতা কখনও ভোলার নয়।’’

প্রথম দিনরাতের টেস্ট উপভোগ করলেও টেস্টের ভবিষ্যৎ হিসেবে দেখছেন না তিনি। কারণ, গোলাপি বলে বেশ কিছু সমস্যার মধ্যেও পড়তে হয়েছে ভারতীয় উইকেটকিপারকে। ঋদ্ধি বলছিলেন, ‘‘নৈশালোকে বল দেখতে কিছুটা অসুবিধা হয়েছে। একেই শীতকাল। কুয়াশার হাল্কা স্তরের মধ্যে গোলাপি বল অনেক সময় হারিয়ে গিয়েছে। আউটফিল্ডে যারা ফিল্ডিং করেছে, তারাও কিন্তু সাধারণের তুলনায় অনেক দেরিতে বল দেখেছে। বাইরে থেকে খেলা দেখলে তা হয়তো বোঝা যাবে না। কিন্তু আমরা বুঝতে পেরেছি, অনেক দেরিতে নড়াচড়া করেছে ফিল্ডারেরা।’’

ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন ঋদ্ধি। তাঁর উপলব্ধি, ‘‘নৈশালোকে এমনিতেই বল সুইং বেশি করে। তার উপরে অজানা কোনও রংয়ের বল হলে তা নজরে রাখতেও বেশ সমস্যা হয়। সাইটস্ক্রিনের রং কিছুটা গাঢ় হলে ভাল হত।’’ কী রংয়ের সাইট স্ক্রিন চান? ‘‘কালো হলে সমস্যা হবে। যদি গাঢ় নীল অথবা বেগুনি সাইটস্ক্রিন হত, তা হলে সমস্যা কিছুটা কম হতে পারত।’’

তা হলে দিনরাতের টেস্ট ম্যাচকে অন্যতম ফর্ম্যাট হিসেবে কত নম্বর দেবেন ঋদ্ধি? ‘‘দর্শক ঠাসা মাঠ দেখতে চাইলে অবশ্যই এটা ভাল বিকল্প। কিন্তু বছরে এক দু’বার হলেই ভাল। ভবিষ্যতেও আমরা হয়তো দিনরাতের টেস্ট খেলব, কিন্তু পরিবেশ ও প্রতিপক্ষ বুঝে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।’’

মাহমুদুল্লার দুরন্ত ক্যাচ নেওয়ার পরে কোহালি তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। কাঁধে উঠে গিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। পুণের পরে রাঁচী, ইনদওর থেকে ইডেন। জায়গা বদলাচ্ছে, কিন্তু ঋদ্ধির হাত থেকে ক্যাচ পড়ছে না। ফের সুপারম্যানের এই দুরন্ত ক্যাচ দেখে কী বললেন অধিনায়ক? ঋদ্ধির কথায়, ‘‘বিরাট সব সময় সেরাটাই চায়। জেতা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না। সেই পরিস্থিতিতে এ ধরনের কোনও চেষ্টা দেখলে বিরাট প্রচণ্ড খুশি হয়। সেটাই চোখে-মুখে ফুটে উঠেছিল ওর।’’

ঋদ্ধি সব চেয়ে উপভোগ করেছেন মহম্মদ শামি, উমেশ যাদব ও ইশান্ত শর্মার বিরুদ্ধে কিপিং করে। বলছিলেন, ‘‘এত আগ্রাসী বোলিং আক্রমণ কখনও দেখিনি। ওদের রীতিমতো ভয় পাচ্ছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা। সেই আগ্রাসন ধরে রাখার কাজ আমার। পিছন থেকে সমানে তাতিয়ে গিয়েছি। বাংলায় চিৎকার করেছি। তবেই না বিপক্ষ এত চাপে পড়ে গিয়েছিল।’’

ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় জার্সিতে ফের দেখা যাবে ঋদ্ধিকে। নিউজ়িল্যান্ড সফরের আগে কোনও টেস্ট ম্যাচ নেই। এই সময়টি তিনি নষ্ট করবেন না। রঞ্জি ট্রফি খেলে নিজেকে তৈরি রাখবেন। ঋদ্ধির কথায়, ‘‘রঞ্জি ট্রফির প্রথম কয়েকটি ম্যাচ আমি খেলব। যেখান থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, তাদের ভুলে গেলে কী করে চলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE