মা বলেন, আমার স্মৃতিশক্তি বরাবরই বেশ ভাল।
ইতিহাসের একটা চ্যাপ্টার পড়ে তা ডিক্টাফোনের মতো গড়গড় করে বলে দিতে পারতাম।
কিন্তু আইপিএলে নেতৃত্ব দেওয়ার চাপ এমন যে মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাসের প্রতি লাইন মুখস্থ রাখা স্মৃতিশক্তিরও দফা রফা করে দিতে পারে।
শনিবার হায়দরাবাদে টস করতে যাওয়ার সময় যা হল।
আমাদের প্রথম এগারোয় যে তিন নম্বর পরিবর্তনও হয়েছে, তা বলতে বেমালুম ভুলেই গেলাম! এই চেঞ্জটা শুধু এই ম্যাচের জন্য নয়, সম্ভবত গোটা টুর্নামেন্টের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাকশন বদলে সুনীল নারিন যে মরসুমের প্রথম ম্যাচটা খেলতে নামল, সেটা বলতে ভুলেই গেলাম!
পরে ব্যাপারটা মনে পড়তেই আমি আর ওদের ক্যাপ্টেন ওয়ার্নার, দু’জনে মিলে যা হাসাহাসি করলাম, কী বলব। এই ম্যাচে আমার কাছে সুনীলের বোলিং দেখাটাই বেশি তৃপ্তিদায়ক মুহূর্ত। প্রথমবার বল করতে যাওয়ার সময় ওকে সদ্য হাঁটতে শেখা একটা শিশুর মতো লাগছিল, যে নার্ভাস আর অনিশ্চিত। কিন্তু আমি জানতাম, ভিতরে ভিতরে ও বেশ আত্মবিশ্বাসী। এমনিতে বল হাতে পিচে হোক বা প্লে স্টেশনে ফুটবল খেলার সময়, ও কিন্তু সবসময়ই চুপচাপ।
শনিবার আমাদের জয়ে কিন্তু ওর ৪ ওভারে ২৬ রানের স্পেলটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হ্যাঁ, এটা ঠিকই যে, একটাও উইকেট পায়নি ও। কিন্তু আমাদের এই চ্যাম্পিয়ন বোলারকে দেওয়ার মতো প্রচুর সময় আছে কেকেআরের হাতে।
আর একটা স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দিল আমাদের ‘মোহক ম্যান’ আন্দ্রে রাসেল। ও আর পীযূষ চাওলা মিলে যে ভাবে ক্যাচটা নিয়ে নমন ওঝাকে ফিরিয়ে দিল, তা গোটা দলটাকে তাতিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। আইপিএলের ওয়েবসাইটে গিয়ে বারবার ওই মুহূর্তটা দেখতে রাজি আছি আমি। সত্যিই বারবার।
ম্যাচের শেষে আমাকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ বাছা হল ঠিকই। কিন্তু শনিবারের জয়ের মঞ্চটা কিন্তু সাজিয়ে দেয় আমাদের ফাস্ট বোলাররা।
উমেশ যাদব বরাবরই ভারতীয় দলের আন্ডার-রেটেড বোলার, যাকে নিজের জায়গা পাকা করার লড়াইটা সব সময় করে যেতে হয়। ওর বোলিংয়ে গতিটা তো আছেই। এ বার দেখা যাচ্ছে, অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়েও ও মাঠে নামছে এবং তা কাজেও লাগাচ্ছে। যার ফলে উমেশের সেই আগের আপ অ্যান্ড ডাউন বোলিং বিদায় নিয়েছে। বরং ওর বোলিংয়ে এখন অনেক বেশি বৈচিত্র দেখা যাচ্ছে।
মর্নি মর্কেল এমন একজন পেস বোলার, যে একটা কমলালেবুকেও শর্ট অব লেংথ থেকে বাউন্স করাতে পারে। ওই রকম একটা নিখুঁত বাউন্সারেই তো শিখরের উইকেটটা তুলে নিল ও। রাসেল ওকে দারুন সাপোর্ট দিয়েছে। ওদের জন্যই ৫০-৪ থেকে নিজেদের বার করে আনার কাজটা সানরাইজার্সের পক্ষে খুব কঠিন ছিল।
শনিবার দিনের শুরুটা কিন্তু আমাদের খুব একটা ভাল হয়নি। টিম মিটিংয়ে জানতে পারি জন হেস্টিংস ও ব্র্যাড হগ খেলতে পারবে না। দলের প্রধান প্লেয়ারদের না পাওয়াটা যে একজন ক্যাপ্টেনের কাছে কত বড় দুঃস্বপ্ন, তা আর কী বলব। আর এখানে একজন নয়, দু’জনকে একসঙ্গে পাব না শুনে আমার যে কী হাল হয়েছিল, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। হেস্টিংসের চোটটা বেশ গুরুতর। আর ব্র্যাড হগ ফুড পয়জনে কাবু। কিন্তু একজন ক্যাপ্টেনের তো আর তার সতীর্থদের সামনে নার্ভাসনেসটা প্রকাশ করলে চলে না। তাই ওদের যথাসম্ভব সাহস জুগিয়ে পাক্কা পেশাদারদের মতো সবার মাথায় ম্যাচ জেতার কথা ঢুকিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হল।
নিজের ব্যাটিংয়ে আমি খুশি ঠিকই। কিন্তু আগে কোনও এক কলামে যেমন লিখেছিলাম, আজও ফের সেই কথাই লিখছি। এখনও কিন্তু আমি মনে করি, আমার ব্যাটিং ‘ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস’ পর্যায়ে রয়েছে। লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কাজটা চলছে। তবে এ কথা বলতেই হবে যে, শনিবারের ম্যাচে সেই লক্ষ্যের কাছে পৌঁছনোর দিকে কয়েক পা এগিয়ে গিয়েছি।
আমাদের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এখন সবচেয়ে ভাল ফর্মে আছে রবিন উথাপ্পা। শনিবারও ওর দাপট ছিল দেখার মতো। কিন্তু মুস্তাফিজুর রহমানের ওই বলটা ওর হাতে লাগার পরই রবিনের মনঃসংযোগে চিড় ধরে। আমি নিশ্চিত, ‘রবিন ফ্যাক্টরি’-তে একটা বড় ইনিংস তৈরি হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতের জন্য।
যাই হোক। শনিবার যে স্মরণীয় জয়টা পেলাম, তা কলকাতায় উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় মৃতদের উৎসর্গ করলাম। যতই হোক কলকাতা আমার ‘সেকেন্ড হোম’। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ঈশ্বর শক্তি দিন, এই কামনাই করি।
আরও পড়ুন:
আইপিএলের সময়সূচি
আইপিএলের পয়েন্ট টেবল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy