ইতিহাস ঘাঁটলে এমন ভারত-পাক মহারণ সত্যিই কি আর পাওয়া যাবে!
যেখানে ভারতীয় ক্রিকেট অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে কোচ এবং অধিনায়কের সম্পর্ক নিয়ে। ভারত অধিনায়ককে জবাব দিতে হচ্ছে বিতর্ক নিয়ে। ড্রেসিংরুমের অন্তর্কলহ নিয়ে। আর পাক অধিনায়ক হাসতে হাসতে তাঁর কোচকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে যাচ্ছেন! বিদেশি কোচ মিকি আর্থার ক্যাপ্টেনের ডাকনাম ধরে আদর করে ডাকছেন আর পাক অধিনায়ক সরফরাজ আমেদ খুশিতে ডগমগ হয়ে মাথা নাড়ছেন!
এজবাস্টনে রবিবাসরীয় মহারণের আগে এ সব দেখেশুনে মনে হবে ভারতই যেন পাকিস্তান। আর পাকিস্তান হয়ে গিয়েছে ভারত। ক্রিকেটীয় দক্ষতার দিক দিয়ে না হলেও আশেপাশের আবহের বিচারে তো বটেই। বিরাট কোহালি যেন পাক অধিনায়ক। যাঁকে প্রশ্ন করা হল, আপনার সঙ্গে কোচের ঝামেলা নিয়ে কী বলবেন? আর এত কালের পাক অধিনায়কদের ঢঙে কোহালি বিতর্ক উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে গেলেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে অনেক কিছুই বলা হয়েছে। এমন লোকেরা (লক্ষ্য সংবাদমাধ্যম) লিখছে, যারা ড্রেসিংরুমের অংশ নয়। তাদের জানারও কথা নয়, কী চলছে ড্রেসিংরুমের ভিতরে।’’ জোরালো ভঙ্গিতে যোগ করলেন, ‘‘আমার এমন কোনও ঝামেলার কথা জানা নেই। আমি জানতেও চাই না। আমাদের ফোকাস ক্রিকেটের ওপর। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ওপর।’’
বোঝা গেল, পাকিস্তান ম্যাচের আগে প্রথম শটটি নিয়ে ফেললেন ভারত অধিনায়ক। পাক বোলারদের খেলার আগে কোচ-বিতর্কের বিষাক্ত বলটিকে নিষ্ক্রিয় করতে চেয়েছেন তিনি। অন্তত এটুকু করতে যে তাঁকে রাজি করানো গিয়েছে, সেটাও দারুণ সাফল্য। ভারতীয় দলের মধ্যে যে অস্বস্তির বাতাবরণ রয়েছে, তা অবশ্য কিছুক্ষণ প্র্যাকটিস দেখলেই বোঝা যাবে। ফিল্ডিং করতে এল দল। কোচ এবং অধিনায়কের মধ্যে দু’চারটে মাত্র কথা হতে দেখা গেল।
সাধারণত পাকিস্তান ম্যাচের আগে কোচ-অধিনায়কের দু’টো মাথা এক হয়ে যায়। মাঠে প্রাক-ম্যাচ মহড়াতেই বারবার তাঁদের কথা বলতে দেখা যায়, দলের আরও সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে আলোচনার বৃত্ত তৈরি হয়। সে সব কিছু দেখা গেল না এ দিন। বরং সাড়ে তিন ঘণ্টার ওপর প্র্যাকটিসে কোচ এবং অধিনায়কের ব্যবধানই প্রকট হল বারবার।
এজবাস্টনে মূল মাঠের পাশে গাছপালা ঘেরা পরিবেশে প্র্যাকটিস চলাকালীন দেখা গেল, কুম্বলে অনেক সময়েই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন। দেখে মনে হবে, তিনিও সাবধানে পদক্ষেপ করছেন। অধিনায়কও নিজে থেকে কোচের দিকে ঘেঁষার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। বোর্ড সূত্রেও নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে, কোচ কুম্বলের ভবিষ্যৎ সেই মেঘে ঢাকাই রয়েছে।
কিন্তু পাকিস্তান মানে এমনই ব্লকবাস্টার ম্যাচ যে, কোনও ব্যক্তিগত সংঘাতও প্রাধান্য পাবে না। দুই ব্যক্তির নামও যে অনিল কুম্বলে এবং বিরাট কোহালি। এক জনের ঐতিহাসিক দশ উইকেট পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। অন্য জন এশিয়া কাপ থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, হালফিলে সর্বত্র পাক-বধের বিরাট নায়ক।