Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বিপর্যয় সত্ত্বেও ছয় পয়েন্টের আশা ডিন্ডাদের

মরসুমের শুরুতেই বাংলার মেন্টর অরুণ লাল বলেছিলেন, ‘‘বোলারকে প্রথম এক ঘণ্টা সময় দাও। দিনের শেষে নায়ক হয়ে বেরিয়ে এসো।’’ কিন্তু এই প্রথম এক ঘণ্টাই বোলারদের কেউ দিতে পারছেন কোথায়!

সফল: ৫৬ রান করে বাংলাকে লড়াইয়ে রাখলেন সুদীপ। নিজস্ব চিত্র

সফল: ৫৬ রান করে বাংলাকে লড়াইয়ে রাখলেন সুদীপ। নিজস্ব চিত্র

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৮
Share: Save:

ফের ব্যাটিং বিপর্যয়। ফের প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে পড়ল বাংলা। মরসুমের সপ্তম ম্যাচ খেলছেন মনোজ তিওয়ারিরা। তবুও তাঁদের ব্যাটিংয়ে উন্নতি চোখে পড়ছে না। যা প্রমাণ করে দিল সোমবারের স্কোরবোর্ডও। প্রথম ইনিংসে ২৪০ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল দিল্লি। বাংলার কাছে সুবর্ণ সুযোগ ছিল প্রথম ইনিংসে বড় রান করে বিপক্ষকে বড় লক্ষ্যের সামনে ফেলার। কিন্তু ভুল শট নেওয়ার প্রবণতার জন্যই মাত্র ২২০ রানে শেষ হয়ে গেল বাংলার ইনিংস। তবুও মনোজদের কাছে ম্যাচটি জেতার সুযোগ এখনও নষ্ট হয়নি। কারণ, দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে ৪১ রানেই দুই উইকেট হারিয়েছে দিল্লি।

মরসুমের শুরুতেই বাংলার মেন্টর অরুণ লাল বলেছিলেন, ‘‘বোলারকে প্রথম এক ঘণ্টা সময় দাও। দিনের শেষে নায়ক হয়ে বেরিয়ে এসো।’’ কিন্তু এই প্রথম এক ঘণ্টাই বোলারদের কেউ দিতে পারছেন কোথায়! বাংলার অভিযোগ, ব্যাটিংয়ের সময় তিনটি সিদ্ধান্ত তাঁদের বিপক্ষে দিয়েছেন আম্পায়ার। তবুও, তাঁরা যে সব শট নিতে গিয়ে বোলারের ফাঁদে পড়েছেন, সেগুলোই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বিপজ্জনক।

এমনিতেই নবদীপ সাইনি ও বিকাশ মিশ্রকে ছাড়া নেমেছিল দিল্লি। কিন্তু কুলবন্ত খেজরোলিয়া ও সুবোধ ভাটির বিরুদ্ধেও কাঁপতে দেখা যায় বঙ্গ ব্যাটসম্যানদের। তিনটি করে উইকেট নেন কুলবন্ত ও সুবোধ। দুই উইকেট বাঁ হাতি স্পিনার বশিষ্ঠের। একটি উইকেট নেন অফস্পিনার শিবম শর্মা।

দিনের শুরু থেকেই আউটসুইং করাচ্ছিলেন বাঁ হাতি পেসার কুলবন্ত। তা বুঝেও ছয় ওভারের মাথায় স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে আউট হন অভিষেক রামন (১১)। সেখান থেকে ৬৩ রানের জুটি গড়ে বাংলাকে লড়াইয়ে রাখে অভিমন্যু ঈশ্বরন ও সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের জুটি। কিন্তু ২১তম ওভারে স্পিনারকে কাট করতে গিয়ে কিপার অনুজ রাওয়াতের তালুবন্দি হন ঈশ্বরন। যদিও আউটটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মাঠ ছাড়ার সময় একেবারেই সন্তুষ্ট দেখায়নি ঈশ্বরনকে।

কিন্তু বাংলার আরও একটি ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনেই রানে ফিরলেন দলের সহ-অধিনায়ক। মরসুমের প্রথম হাফসেঞ্চুরিটি সুদীপ পেলেন দিল্লির বিরুদ্ধেই। ৫৬ রান করে বছর শেষ করেন তিনি। কিন্তু তাঁর ব্যাটিং নিয়ে সন্তুষ্ট নন দলের মেন্টর। ইনিংসের শুরুতেই খেজরোলিয়ার বলে তাঁর ক্যাচ ওঠে দ্বিতীয় স্লিপে। ফিল্ডার হিসেবে ছিলেন হিতেন দালাল। ক্যাচটি মনঃপুত না হওয়ায় থার্ড আম্পায়ারের সাহায্য নেন আম্পায়ার অনিল ডান্ডেকার। ‘সফ্ট সিগন্যাল’-এ নটআউটের সিদ্ধান্ত দেন। টিভি আম্পায়ার অভিজিৎ দেশমুখ ভুল করে লাল আলো জ্বালিয়ে দেওয়ায় মাঠ ছাড়তে শুরু করেন সুদীপ। কিন্তু অনিলের সঙ্গে ওয়াকি টকিতে কথা বলে সুদীপকে থামান অভিজিৎ। ফের সবুজ আলো জ্বালিয়ে নটআউট ঘোষণা করেন তিনি। তার পরেও ৪৭ রানের মাথায় সুযোগ দেন সুদীপ। কিন্তু বোলার সুবোধ ভাটি তা তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন। অবশেষে ৫৬ রানে ভাটির বলে খোঁচা দিয়েই প্যাভিলিয়নে ফেরেন সুদীপ। অরুণ বলেন, ‘‘বাইরের বল কেন ও ডিফেন্ড করতে গেল বুঝতে পারলাম না। ক্রিকেট খেলার নিয়ম, যে বল তোমার উইকেটে লাগতে পারে সেটা ডিফেন্ড করো। বাইরের বল হয় মারো, নয় ছেড়ে দাও।’’

সুদীপের আউটটি মানা গেলেও ম্যাচের সব চেয়ে অবাক করা আউট হতে দেখা গেল অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি (১৫)-কে। ‘রাউন্ড দ্য উইকেট’ থেকে ইনসুইং করাচ্ছিলেন কুলবন্ত। প্রত্যেকটি বলই মনোজের ভেতরের দিকে আসছিল। তার পরেও বল ছাড়তে গিয়ে বিপদ ডেকে আনলেন অধিনায়ক। তাঁর অফস্টাম্প ছিটকে পড়ে। অনুষ্টুপ মজুমদার (৪)-ও আউট হন কুলবন্তের বলেই। ৩৩তম ওভারে বাঁ হাতি পেসারের বাইরের বল স্কোয়ার ড্রাইভ করতে গিয়ে টেনে আনলেন নিজের উইকেটে। ১৩১ রানে চার উইকেট হারাল বাংলা। তার পর থেকে সুদীপ, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়, আমির গনিরা একে, একে ফিরে গেলেন প্যাভিলিয়নের উদ্দেশে। যদিও ঋত্বিক ও গনির আউট নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু দু’জনের ভুল একটাই, তাঁরা বাইরের বল তা়ড়া করে ফাঁদে পড়েছেন।

ব্যাটসম্যানদের বিপর্যয় দেখেও ছয় পয়েন্টের আশা হারাচ্ছেন না অরুণ। বলেন, ‘‘তিন পয়েন্ট না পেয়ে সুবিধাই হয়েছে। এ বার ছেলেরা একেবারে ছয় পয়েন্টের জন্য ঝাঁপাবে। কাল সকালে দু’টি উইকেট ফেলে দিতে পারলেই ম্যাচ ঘুরে যাবে।’’

অরুণের কথা অনুযায়ী, নতুন বছরের প্রথম দিন বাংলার কাছে ‘হ্যাপি’ হয় কি না সেটাই দেখার।

স্কোরকার্ড
দিল্লি ২৪০ ও ৪১-২
বাংলা ২২০

বাংলা (প্রথম ইনিংস)
অভিষেক রামন ক অনুজ বো কুলবন্ত ১১
অভিমন্যু ঈশ্বরন ক অনু়জ বো বশিষ্ঠ ৪০
সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ক অনুজ বো ভাটি ৫৬
মনোজ তিওয়ারি বো কুলবন্ত ১৫
অনুষ্টুপ মজুমদার বো কুলবন্ত ৪
ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় ক অনুজ বো ভাটি ১৭
অগ্নিভ পান ক জন্টি বো শিবম ১৪
আমির গনি ক অনুজ বো ভাটি ৬
প্রদীপ্ত প্রামাণিক ন. আ. ৩৭
অশোক ডিন্ডা ক অনুজ বো বশিষ্ঠ ৪
মুকেশ কুমার রান আউট ২
অতিরিক্ত ১৪
মোট ২২০
পতন: ১-১৮ (রামন, ৬.২), ২-৮১ (ঈশ্বরন, ২০.৬), ৩-১১২ (মনোজ, ২৭.৩), ৪-১৩১ (অনুষ্টুপ, ৩২.৬), ৫-১৪৭ (সুদীপ, ৪১.৪), ৬-১৬২ (ঋত্বিক, ৪৫.১), ৭-১৬৮ (গনি, ৪৭.১), ৮-১৮৬ (অগ্নিভ, ৫২.৪), ৯-১৯৮ (ডিন্ডা, ৫৬.৪), ১০-২২০ (মুকেশ, ৫৮.৪)।
বোলিং: কুলবন্ত খেজরোলিয়া ১৯-২-৮৭-৩, সুবোধ ভাটি ১৪-২-২৮-৩, আকাশ সুদান ১২-৩-৪০-০, শিবাঙ্ক বশিষ্ঠ ৭.৪-১-২৪-২, শিবম শর্মা ৬-১-২৭-১।

দিল্লি (দ্বিতীয় ইনিংস)
কুণাল চাণ্ডেলা ব্যাটিং ১৫
হিতেন দালাল এলবিডব্লিউ বো ডিন্ডা ১১
অনুজ রাওয়াত ক মনোজ বো ডিন্ডা ১০
নীতীশ রানা ব্যাটিং ৫
অতিরিক্ত ০
মোট ৪১-২
পতন: ১-১৯ (দালাল, ৬.৫), ২-৩১ (অনুজ, ১২.৫)।
বোলিং: অশোক ডিন্ডা ৮-২-২২-২, মুকেশ কুমার ৫-২-৭-০, প্রদীপ্ত প্রামাণিক ৩-১-৫-০, আমির গনি ৩-০-৭-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Ranji Trophy Bengal Andhra Pradesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE