Advertisement
E-Paper

জোড়া সেঞ্চুরি আর বুম বুম বুমরায় জয় কোহালিদের

যে ভাবে শুরু করেছিল, রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহালি, তা দেখার মতো। দুই ব্যাটিং শিল্পীর যুগলবন্দি দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল কোনও ধ্রুপদী সঙ্গীতের আসরে বসে রয়েছি।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০৫:০৩
সিরিজ জেতার পরে হার্দিকের সঙ্গে বিরাট। রবিবার।

সিরিজ জেতার পরে হার্দিকের সঙ্গে বিরাট। রবিবার।

ওয়ান ডে ক্রিকেটের সব দিকই রবিবার দেখে নিল কানপুরের গ্রিনপার্কের ক্রিকেটপ্রেমীরা। দুর্দান্ত ব্যাটিং, অসাধারণ স্লগ বোলিং এবং শেষে টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে ভারতের ৬ রানে জয়। এর চেয়ে ভাল ক্রিকেট প্যাকেজ আর কী হতে পারে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে?

ভারতের দুই সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহালি ও রোহিত শর্মার অসাধারণ ২৩০ রানের পার্টনারশিপ এই ম্যাচে ভারতের জয়ের ভিত গড়ে দেয় ঠিকই। কিন্তু তার পরে যে পাল্টা চ্যালেঞ্জের সামনে পড়েছিল ভারত, তা সামলে দিল কিন্তু একজনই। যশপ্রীত বুমরা। গ্রিনপার্কে ব্যাটসম্যানদের স্বর্গেও যে ভাবে শেষ কাজটা করে দিল গুজরাতের এই পেসার, তার প্রশংসা যত করা যায়, ততই কম।

তবে নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা যে ভাবে রানটা তাড়া করে, তা অসাধারণ বললেও বোধহয় কম বলা হবে। সেই লাথাম, রস টেলররাই ভারতীয় বোলারদের হিমশিম খাওয়াল। তার উপর আবার কলিন মুনরো, কেন উইলিয়ামসনরাও আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিল। নেহাত শেষ দিকে গ্র্যান্ডহোমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে লাথাম রান আউট হয়ে যায়। তা না হলে ওই ঘটনাটাই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারত ভারতের কাছে। নিউজিল্যান্ডকে ‘হ্যাটস অফ’।

যে ভাবে শুরু করেছিল, রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহালি, তা দেখার মতো। দুই ব্যাটিং শিল্পীর যুগলবন্দি দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল কোনও ধ্রুপদী সঙ্গীতের আসরে বসে রয়েছি। একা রোহিত বা একা বিরাটের ইনিংসই দেখে তৃপ্তিতে মন ভরে যায়। এ তো ‘ডাবল ধামাকা’। কানপুরের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের ভাগ্যবান বলতে হবে যে ওরা ভারতীয় দলের দুই সেরা ব্যাটিং শিল্পীকে সেরা ফর্মে দেখল একসঙ্গে। ব্যাটসম্যানদের তিনটে ‘টি’ হল আসল— টেম্পারামেন্ট, টেকনিক, ও ট্যালেন্ট। বিরাট ও রোহিতের টেম্পারামেন্ট লেভেল একই হতে পারে। কিন্তু শেষ দুটো ব্যাপারে কোহালি কিন্তু ওর চেয়ে বেশ এগিয়ে। দু’জনকে আজ পাশাপাশি দেখে, সেটা আরও স্পষ্ট ভাবে বোঝা হয়ে গেল।

টিম সাউদিকে শুরুর দিকে একটা কভার ড্রাইভ করে বিরাট। ওটাই ম্যাচের সেরা শট। ওদের পার্টনারশিপটাই ভারতকে জয়ের দিকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যায় বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু যে ভাবে নিউজিল্যান্ড পাল্টা ব্যাটিং করল, তাতে ওদের টি টোয়েন্টি সিরিজে সমীহ না করে উপায় নেই।

তারকা ত্রয়ী: সেঞ্চুরি: ১০৬ বলে ১১৩ । কোহালির ৩২তম শতক। সেঞ্চুরি: ১৩৮ বলে ১৪৭। ম্যাচের সেরা রোহিত। শিকারি: ব্যাটিং পিচে মাত্র ৪৭ রানে তিন উইকেট।

ব্যাটসম্যানদের এই মঞ্চে দু’দলের দুই বোলার ভুলে যেতে চাইবে এই দিনটা। ভুবনেশ্বর ও ট্রেন্ট বোল্ট। প্রথমজন এ দিন ১০ ওভারে ৯২ রান দিল। আর বোল্ট দিল দশ ওভারে ৮১। ভুবি শেষ দিকে হেনরি নিকোলসের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটা নেয়। কিন্তু বোল্ট কোনও উইকেট পায়নি এ দিন। এই উইকেটে রোহিত-বিরাটের পরে বরং জয়ের আরও দুই স্থপতি বলা যেতে পারে বুমরা ও যুজবেন্দ্র চহালকে। বুমরা যেমন স্লগে কামাল দেখিয়েছে, তেমনই মাঝের ওভারগুলোতে বিধ্বংসী মেজাজে থাকা মুনরো ও উইলিয়ামসনকে আউট করে দিয়ে নিজের কাজটা করে যায় চহাল। নিউজিল্যান্ডের একটা বড় পার্টনারশিপ দরকার ছিল। তিনটে ভাল পার্টনারশিপ শুরু হয়েও তা বড় হতে দিল না আমাদের বোলাররা। এটাই ওদের কৃতিত্ব। বুমরাকে এখন নিঃসন্দেহে বিশ্বের সেরা ডেথ বোলার বলা যাবে।

তবে হার্দিক পাণ্ড্যকে জানতে হবে কোন সময় ঠিক কোন বলটা করতে হবে। সঠিক লাইনে বল করতে হবে ওকে। ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা বুঝে নিয়ে তাকে সেই মতো বোলিং না করলে সাফল্য যে আসবে না, তা বুঝতে হবে ওকে। এ দিন যেমন রস টেলরকে অনেকবার পায়ে বল করেছে, যা উচিত হয়নি। কারণ, টেলরকে এই ধরনের বল দিয়ে ওকে জব্দ করা কঠিন।

আসলে এই সিরিজে ভারতকে অনেক কিছু শেখাল নিউজিল্যান্ড। একটা ‘ওয়েক আপ কল’ দিয়ে গেল যেন। এই শিক্ষাগুলোই তো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে বিরাট ও তার দলের ছেলেদের।

স্কোরকার্ড

ভারত ৩৩৭-৬ (৪৬)

নিউজিল্যান্ড ৩৩১-৭(৫০)

ভারত

রোহিত শর্মা ক সাউদি বো স্যান্টনার ১৪৭

শিখর ধবন ক উইলিয়ামসন বো সাউদি ১৪

কোহালি ক উইলিয়ামসন বো সাউদি ১১৩

হার্দিক পাণ্ড্য ক সাউদি বো স্যান্টনার ৮

এমএস ধোনি ক মুনরো বো মিলনে ২৫

কেদার যাদব ক গাপ্টিল বো মিলনে ১৮

দীনেশ কার্তিক ন.আ. ৪

অতিরিক্ত ৮

মোট ৩৩৭-৬

পতন: ২৯-১ (শিখর, ৬.১), ২৫৯-২ (রোহিত, ৪১.২), ২৭৩-৩ (হার্দিক, ৪৩.২), ৩০২-৪ (কোহালি, ৪৬.৪), ৩৩১-৫ (ধোনি, ৪৯.১), ৩৩৭-৬ (কেদার, ৪৯.৬)।

বোলিং: টিম সাউদি ১০-০-৬৬-২, ট্রেন্ট বোল্ট ১০-০-৮১-০, অ্যাডাম মিলনে ১০-০-৬৪-২, কলিন ডে গ্র্যান্ডহোম ৮-০-৫৭-০, মিচেল স্যান্টনার ১০-০-৫৮-২, কলিন মুনরো ২-০-১০-০।

নিউজিল্যান্ড

গাপ্টিল ক কার্তিক বো বুমরা ১০

কলিন মুনরো বো চহাল ৭৫

কেন উইলিয়ামসন ক ধোনি বো চহাল ৬৪

রস টেলর ক কেদার বো বুমরা ৩৯

টম লাথাম রান আউট ৬৫

হেনরি নিকোলস বো ভুবনেশ্বর ৩৭

কলিন ডে গ্র্যান্ডহোম ন.আ. ৮

মিচেল স্যান্টনার ক ধবন বো বুমরা ৯

টিম সাউদি ন.আ. ৪

অতিরিক্ত ২০

মোট ৩৩১-৭

পতন: ৪৪-১ (গাপ্টিল, ৫.১), ১৫৩-২ (মুনরো, ২৪.২), ১৬৮-৩ (উইলিয়ামসন, ২৮.৪), ২৪৭-৪ (টেলর, ৪০.১), ৩০৬-৫ (নিকোলস, ৪৬.৫), ৩১২-৬ (লাথাম, ৪৭.৫), ৩২৬-৭ (স্যান্টনার, ৪৯.৪)।

বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ১০-০-৯২-১, যশপ্রীত বুমরা ১০-০-৪৭-৩, হার্দিক পাণ্ড্য ৭-০-৪০-০, অক্ষর পটেল ১০-১-৫৪-১, কেদার যাদব ৮-০-৫৪-০, যুজবেন্দ্র চহাল ১০-০-৪৭-২।

ভারত জয়ী ৬ রানে

ম্যাচের সেরা রোহিত শর্মা ১৪৭ রান

ছবি: এএফপি।

Cricket Virat Kohli Rohit Sharma Jasprit Bumrah বিরাট কোহালি রোহিত শর্মা যশপ্রীত বুমরা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy