Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

খেতাবের স্বপ্ন কার্যত শেষ ইস্টবেঙ্গলের

রবিবার রাত থেকেই হঠাৎ করে বদলে গিয়েছে বঙ্গের আবহাওয়া। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শীত প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের ভাগ্যাকাশ মেঘাচ্ছন্নই থেকে গেল।

হতাশ: ম্যাচ ড্র। মাথায় হাত রালতের। পাশে ব্র্যান্ডন। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

হতাশ: ম্যাচ ড্র। মাথায় হাত রালতের। পাশে ব্র্যান্ডন। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

শুভজিৎ মজুমদার
শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৯
Share: Save:

তীরে এসে তরী ডোবার সেই পুরনো কাহিনি।

গত পনেরো বছর ধরে এ ভাবেই বারবার স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়েছেন লাল-হলুদ সমর্থকেরা। এ বারও তার ব্যতিক্রম হল না।

রবিবার রাত থেকেই হঠাৎ করে বদলে গিয়েছে বঙ্গের আবহাওয়া। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শীত প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের ভাগ্যাকাশ মেঘাচ্ছন্নই থেকে গেল। আই লিগে অবনমনের আওতায় থাকা দল আইজল এফসি-র বিরুদ্ধে জবি জাস্টিনেরা কোনও মতে হার বাঁচাতেই সফল হলেন, খেতাবের স্বপ্ন নয়।

যুবভারতীতে ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘাসে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়েছিলেন ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা, বোরখা গোমেস পেরেসেরা। কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়া কোনও মতে তাঁদের টেনে তুলে দাঁড় করালেন। নিয়ে গেলেন গ্যালারির সামনে দর্শকদের অভিবাদন গ্রহণ করতে। ক্লান্ত শরীর, বিধ্বস্ত মনে কোনও মতে দর্শকদের দিকে হাত নেড়েই ড্রেসিংরুমের দিকে পা বাড়লেন তাঁরা। ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের শরীরী ভাষাই বলে দিচ্ছিল— অঙ্কের বিচারে যতই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা বেঁচে থাকুক, বাস্তব ছবিটা সম্পূর্ণ উল্টো।

ইস্টবেঙ্গল পরের তিনটি ম্যাচ জিতলে শেষ করবে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে। সেখানে একটি ম্যাচ জিতলেই চেন্নাই সিটি এফসি-র পয়েন্ট হবে ৪৩। সাংবাদিক বৈঠকে আলেসান্দ্রো বলেই দিলেন, ‘‘এই পরিস্থিতি থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়া খুব কঠিন।’’

লাল-হলুদ শিবিরে অবশ্য রবিবার রাত থেকেই শোকের আবহ। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে চেন্নাইয়ের জয় দেখেই মানসিক ধাক্কা খেয়েছিলেন ফুটবলারেরা। তার প্রভাব আইজল ম্যাচে বারবার ফুটে উঠেছে। পাসিং ফুটবলে বিপক্ষের ঘুম কেড়ে নেওয়া খাইমে সান্তোস কোলোদা, এনরিকেরা, এ দিন খেলতেই পারলেন না। জবিকে খুঁজেই পাওয়া গেল না আইজল কোচ স্ট্যানলি রোজারিয়োর নিখুঁত রণনীতিতে। আলেসান্দ্রো বললেন, ‘‘মনে হয় না চেন্নাইয়ের জয়ের প্রভাব ছেলেদের মধ্যে পড়েছে।’’ এর পরেই তিনি যোগ করেছেন, ‘‘তবে মরিয়া ভাবটা ছিল না ছেলেদের মধ্যে।’’ লাল-হলুদের প্রাক্তন তারকা শ্যাম থাপাও এক মত তাঁর সঙ্গে। হিমাচল প্রদেশে ছুটি কাটানোর ফাঁকেও চোখ রেখেছিলেন টিভিতে। ফোনে তিনি বললেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যে তাগিদটা থাকা দরকার, তা ফুটবলারদের কারও মধ্যেই দেখলাম না। খেলায় কোনও ছন্দও খুঁজে পেলাম না। ইস্টবেঙ্গল যে হারেনি, সেটাই অনেক।’’ প্রায় এক দশক আগে আই লিগের মাঝপথেই ইস্টবেঙ্গল বরখাস্ত করেছিল স্ট্যানলিকে। সোমবারের যুবভারতীতে পুরনো দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে কাঁটা ছড়িয়ে দিয়ে তার মধুর প্রতিশোধ নিলেন তিনি। ম্যাচের আগের দিন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, ফুটবলে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। এ দিন ঠিক সেটাই করে দেখালেন তিনি। এক) আলফ্রেড জারিয়ানকে দিয়ে ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠের ছন্দটা নষ্ট করে দিলেন। ফলে গোল করার বলই পেলেন না এনরিকেরা। দুই) আনসুমানা ক্রোমা ও জ়িকাহি দোদোজ়কে সামনে রেখে সামনে রেখে প্রতিআক্রমণে জনি আকোস্তা-হীন লাল-হলুদ রক্ষণে চাপ বাড়িয়ে যাওয়া। ফলশ্রুতি—২৩ মিনিটে দোদোজ়ের গোলে আইজলের এগিয়ে যাওয়া। যদিও ইস্টবেঙ্গল শিবিরের দাবি, গোল করার সময়ে অফসাইডে ছিলেন মহমেডানে খেলে যাওয়া এই স্ট্রাইকার।

৭০ মিনিটে জবিকে ফাউলের পরে মারামারি করে লাল কার্ড (দ্বিতীয় হলুদ কার্ড) দেখে প্রধান স্টপার করিম ওমোলোজা বেরিয়ে যাওয়ার পরেও পরিকল্পনা বদলাননি স্ট্যানলি। বলছিলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের মতো শক্তিশালী দলকে খেলতে দেওয়ার ভুল কেউ করে? তবে আমরা এ দিন জিততেও পারতাম।’’

আইজল কোচ ঠিকই বলেছেন। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষক রক্ষিত ডাগার বল ছুড়তে গিয়ে ক্রোমার গায়ে মারেন। সেই বল ধরে গোল করেন গত মরসুমে লাল-হলুদ জার্সিতে খেলে যাওয়া স্ট্রাইকার। যদিও রেফারি গোল বাতিল করেন। ক্ষুব্ধ স্ট্যানলি বললেন, ‘‘ক্রোমার গোলটা বাতিল কেন হল বুঝলাম না।’’ গোলরক্ষকের ভুলের মাসুল অবশ্য চলতি মরসুমে বারবারই দিতে হয়েছে।।

ইস্টবেঙ্গল ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করল দ্বিতীয়ার্ধে। মাঝমাঠে লালডানমাওয়াইয়া রালতের পরিবর্তে টোনি দোভাল। রক্ষণে নড়বড়ে মনোজ মহম্মদের জায়গায় সামাদ আলি মল্লিককে নামান আলেসান্দ্রো। ৬৫ মিনিটে বঙ্গ ডিফেন্ডারের সেন্টার থেকেই হেডে গোল করে সমতা ফেরান এনরিকে। কিন্তু তাঁর সতীর্থ জবি ছয় গজ বক্সের মধ্যে থেকে যে হেড করলেন, তা শুধু পোস্টেই ধাক্কা খায়নি, ইস্টবেঙ্গলকেও কার্যত খেতাবি দৌড় থেকে ছিটকে দিল।

আইজলের বিরুদ্ধে প্রথম পর্বে ২-৩ হেরেছিল ইস্টবেঙ্গল। এ দিন ঘরের মাঠে ড্র। যন্ত্রণার রাতেও লাল-হলুদ শিবিরে একমাত্র স্বস্তি ২৮ ফেব্রুয়ারি রিয়াল কাশ্মীরের বিরুদ্ধে ম্যাচ শ্রীনগরে খেলতে হবে না। আলেসান্দ্রো বললেন, ‘‘আমাদের এখন লক্ষ্য শেষ তিনটি ম্যাচ জেতা। কিন্তু কাশ্মীরের যা পরিস্থিতি তাতে খেলায় মনঃসংযোগ করা কঠিন হত। দিল্লিতে ম্যাচ সরিয়ে দেওয়ায় আমরা খুশি। মানুষের প্রাণের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই নয়।’’

লাল-হলুদ সমর্থকদের কাছে অবশ্য এখন সবই মূল্যহীন।

ইস্টবেঙ্গল: রক্ষিত ডাগার, লালরাম চুলোভা, বোরখা গোমেস পেরেস, সালামরঞ্জন সিংহ (ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা), মনোজ মহম্মদ (সামাদ আলি মল্লিক), লালডানমাওয়াইয়া রালতে (টোনি ডোভাল), লালরিনডিকা রালতে, কাশিম আইদারা, খাইমে সান্তোস কোলাদো, জবি জাস্টিন ও এনরিকে এসকুয়েদা।

আইজল এফসি: লালওয়ামপুইয়া, মিংথান মাওয়াইয়া, করিম ওমোলাজা, রিচার্ড কাসাগা, ভানলালদুয়াতসাঙ্গা, আলফ্রেড জারিয়ান, পল রামফাংজ়ুয়াভা, লালরিনচানা (লালখাওপুইমাওয়াইয়া), লালরেমসাঙ্গা (লালরামমুনমাওয়াইয়া), জ়িকাহি দোদোজ় ও আনসুমানা ক্রোমা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football I League 2018-19 East Bengal Aizawl FC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE