ইচ্ছেপূরণ হচ্ছে না ডুডু ওমাগবেমির!
আইএসএল ফাইনালে ময়দানের একদা গোলমেশিনের দল এফসি গোয়া উঠলেও আফসোস করে চলেছেন ডুডু ওমাগবেমি!
ডুডুর আফসোসটা কী?
সেই রহস্য বৃহস্পতিবার ফোনে নিজেই ফাঁস করলেন ইস্ট-মোহনের প্রাক্তন নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার।
‘‘আটলেটিকো যদি ফাইনালে উঠত তবে ওদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মজাটা অন্য রকম হত। কিন্তু সেটা আর হল না। আফসোস এটাই।’’
আটলেটিকো দে কলকাতার উপর এখনও যে সমান চটে রয়েছেন ডুডু, সেটা তাঁর সঙ্গে কথা বলেই টের পাওয়া গেল। বিশেষত কোচ হাবাসের উপর মারাত্মক ক্ষিপ্ত জিকোর টিমের তারকা ফুটবলার। ফোনেই গজগজ করছিলেন তিনি, ‘‘আমার সঙ্গে চূড়ান্ত কথাবার্তা হয়ে যাওয়ার পরেও আটলেটিকো কোচ শেষ মুহূর্তে বাতিল করেছিলেন আমাকে। অথচ ততক্ষণে আমি নাইজিরিয়া থেকে কলকাতায় আসার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছি। আটলেটিকোর জার্সিতে খেলার সমস্ত মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। এ রকম অপমানের কথা কী করে ভুলব বলুন! তাই ফাইনালে আটলেটিকোর বিরুদ্ধে গোল করে যদি গোয়াকে জেতাতে পারতাম, তার চেয়ে আমার কাছে আনন্দের কিছু গত না। সেটাই হত এ বার আমার সেরা ক্রিসমাস উপহার।’’
এখানেই থেমে থাকেননি গরগরে ডুডু। হাবাসের উপর রাগের আঁচটা আরও বেশি টের পাওয়া গেল যখন ডুডু উত্তেজিত ভাবে বললেন, ‘‘আরে সাফল্য পেতে গেলে নিজের প্লেয়ারদের সম্মান করতে হয়। শুধু প্লেয়ার কেন, টিমের সঙ্গে থাকা সবাইকেই সম্মান করতে হয়। নয়তো সাফল্য পাওয়া যায় না।’’ গোদা বাংলায় হাবাসের নাম না করে একহাত নিলেন।
এই প্রসঙ্গে জিকোর উদাহরণ টেনে আনলেন ডুডু। ‘‘আমাদের গোয়া দলের কোচ তো হাবাসের চেয়ে অনেক হাইপ্রোফাইল। কিন্তু কী আন্তরিক ব্যবহার! অথচ শুধু দলের ফুটবলারই নয়, সাপোর্ট স্টাফদেরও সম্মান দিয়ে কথা বলেন সব সময়। হয়তো সে জন্যই আজ আমরা ফাইনালে,’’ বলে দিলেন তিনি।
এর আগে বুধবার যখন কলকাতা বনাম চেন্নাই চলছে, ফেসবুকে আনন্দবাজারের সঙ্গে চ্যাটিং-এ ডুডু কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করে মন্তব্য করেন, ‘‘পস্টিগাকে আজ অন্তত আঠারো জনের দলে রাখা উচিত ছিল আটলেটিকোর। কেন যে রাখলেন না ওদের কোচ! পস্টিগার মতো জেনুইন স্ট্রাইকারকে রাখলে কিন্তু চেন্নাইয়ের উপর চাপ আরও বাড়ত।’’ এর পর যখন ফিকরু গোল করলেন, তখন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ডুডুর মন্তব্য ছিল, ‘‘ফিকরু বোধহয় নিজের পুরনো জ্বালাটা মিটিয়ে নিল।’’ কিন্তু আপনার যন্ত্রণাটা তো মেটানোর সুযোগ পেলেন না? এ বার ডুডুর জবাব, ‘‘পরের বার যদি আইএসএল খেলি আর হাবাসের মুখোমুখি হই, বুঝিয়ে দেব ডুডু কী!’’
শুধু হাবাস বা আটলেটিকোই নয়, কলকাতার দুই প্রধানের উপরও এখনও রাগ কমেনি ডুডুর। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান নিয়ে কথা উঠতেই ক্ষুব্ধ গলায় বলে দিলেন, ‘‘এফসি গোয়া আমাকে প্রমাণ করার সুযোগ দিয়েছে। যারা আমার পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাতিল করেছিল, তাদের দেখিয়ে দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে, ডুডু ফুরিয়ে যায়নি।’’
এ বার আইএসএলে ছয় ম্যাচ খেলে চার গোল করে ফেলেছেন ডুডু। সেমিফাইনালেও গোল আছে। জানালেন, ফাইনালে যদি খেলার সুযোগ পান তবে গোল করে টিমকে জেতানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। ‘‘গত বার ফাইনাল খেলার সুযোগ ঘটেনি। এ বার সেই সুযোগ এসেছে। জিকো যদি রবিবার খেলান, নিজেকে নিংড়ে দেব। অপমানের জবাব তো প্লেয়ারকে মাঠেই দিতে হয়, তাই না!’’
যদিও তাৎপর্যের, ফাইনালে ডুডু এগিয়ে রাখছেন মাতেরাজ্জির চেন্নাইয়ানকে! গোয়ার মাঠে ফাইনাল হওয়ায় যেখানে সিংহভাগের ফেভারিট জিকোর এফসি গোয়া, সেখানে ডুডু বলছেন ‘‘মনে রাখবেন সেমিফাইনালের দু’টো ম্যাচই কিন্তু চেন্নাই অ্যাওয়ে খেলেছে। তাই ফাইনালেও ওদের বাইরের মাঠের চাপ সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া চেন্নাইয়ের বন্যাবিধ্বস্ত মানুষও ওদের একটা বড় মোটিভেশন। তা ছাড়া মেন্ডোজারা দারুণ ছন্দেও আছে। আমাদের তাই কোচ বলে দিয়েছেন, আরও অনেক বেশি সতর্ক থাকতে ফাইনালে।’’
ফাইনালে তাই জো়ড়া চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামবেন ডুডু। এক দিকে, বাড়তি ‘মোটিভেটেড’ চেন্নাইকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। অন্য দিকে, হাবাসকে দেখিয়ে দেওয়া, তাঁকে বাতিল করে কতটা ভুল করেছিলেন কলকাতা কোচ। দেখার ইচ্ছেপূরণ না হোক, লক্ষ্যপূরণে কত দূর সফল হন ডুডু ওমাগবেমি!