Advertisement
০২ মে ২০২৪

ডাফিকে দেখে কেটে গেল সনির জেট ল্যাগও

লেক মার্কেটের এক দল তামিল মোহনবাগান সমর্থক বসেছিলেন রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সের একদম ডান দিকে।

রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে শুক্রবারের ডাফি।

রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে শুক্রবারের ডাফি।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০২
Share: Save:

মোহনবাগান-২ (ডাফি-২)

লাজং এফসি-০

লেক মার্কেটের এক দল তামিল মোহনবাগান সমর্থক বসেছিলেন রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সের একদম ডান দিকে।

ড্যারেল ডাফির দ্বিতীয় গোলের পর তাঁদের একজন গ্যালারিতে মেলে ধরলেন ইংরেজিতে লেখা তামিল কথাটা— সিঙ্গম সিংলা থান ভারুম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কথাটা রজনীকান্তের একটা ছবির জনপ্রিয় সংলাপ। বাংলা করলে দাঁড়ায়— যা বলেছি তা করে দেখাবই। যা বলিনি সেটাও করে দেখাব।

শুক্রবারে পাহাড়ি দল টপকানোর নায়ক ড্যারেল ডাফিও যে সেরকমই বললেন! বাগানের জনৈক সিকি কর্তা ডাফিকে সমর্থকদের দেখিয়ে নাকি বলেন, ওই দেখো ওরা তোমার নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছে। যা শুনে স্কটিশ তারকা ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পথে উল্টে তাঁকেই প্রশ্ন করে বসেন, ‘‘এরাই বারাসতে গত সপ্তাহে আমাকে আওয়াজ দিচ্ছিল?’’

লাজং কোচ থাংবই সিনতো ততক্ষণে বলে দিয়েছেন, ‘‘ডাফির কাছেই আজ হেরে গেলাম। আমার ডিফেন্সের ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে গেল।’’ মিডিয়া এনক্লোজারে সাংবাদিকদের থেকে যা শুনে প্রায় রজনীর মতোই বলে দিলেন ডাফি, ‘‘বলে‌ছিলাম আজ গোল করব। গত বছর আই লিগে এগারো গোল করেছিলাম। এ বার তার চেয়েও বেশি গোল করব।’’

কলকাতা লিগে সেভাবে সফল নন। কিন্তু আই লিগের দ্বিতীয় ম্যাচেই ডাফি বুঝিয়ে দিলেন সনি, কাতসুমিদের বাগানে তিনি গোল-মালা হয়ে মনোরঞ্জন করতেই হাজির। জেট ল্যাগের জন্য এ দিনও সনিকে গাড়িতে ঝিমোতে দেখা গিয়েছে। সরোবরে ডাফির জোড়া গোল দেখে ঘুম উধাও বাগান হার্ট থ্রবের। ফেরার গাড়িতে ওঠার সময় তাই মুখে তৃপ্তির হাসি সনির। সব দেখেশুনে সঞ্জয় সেনের প্রতিবেশীর ঈর্ষা আমার গর্ব মার্কা প্রতিক্রিয়া, ‘‘সবাই এখন বুঝবে ডাফিকে কেন আই লিগের জন্য রেখে দিয়েছি।’’

বাগান কোচ এ কথা বলতেই পারেন। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি নিজেদের ডিফেন্সিভ থার্ড থেকে কিংশুকের বাড়ানো বল চমৎকার রিসিভ করে নিখুঁত ইনসাইড টার্নিংয়ে চিঙ্গলেনসানাকে পিছনে ফেলে বাঁ পায়ের প্লেসিংয়ে প্রথম গোল ডাফির।

ভাঙা হাত নিয়েই দলকে তাতালেন বাগান কোচ।

দ্বিতীয় গোলের সময় বলবন্তের পা থেকে বেরেনো পাস চকিতে ধরে এ বার ডান পায়ের প্লেসিংয়ে বল লাজং জালে পাঠান ডাফি। দু’টোতেই প্রকৃত বক্স স্ট্রাইকারের গুণ স্পষ্ট। দ্বিতীয়টার সময় তো যেন গোলের গন্ধ আগেই পেয়ে গিয়েছিলেন। যদিও খেলার গতির বিরুদ্ধে ডাফির গোল থেকে বাগানের ছয় পয়েন্টে পৌঁছনো বাদ দিলে কিন্তু ম্যাচটা থেকে সবুজ-মেরুনের প্রাপ্তির ঘর প্রায় শূন্যই।

বাগান কোচ জানতেন, বিপক্ষের পাহাড়ি ছেলেরা দৌড়াবেন। উইং বরাবর বিপক্ষের ডিফেন্সিভ থার্ডে এসে বল ভাসাবে নিজেদের ব্রাজিল-ক্যামেরুন ফরোয়ার্ড জুটি পেনা-দিপান্দার জন্য। প্রথমার্ধের মিনিট পনেরো বাদ দিলে এ দিন তাই বাগানের দুই সাইডব্যাকের ওভারল্যাপ প্রায় দেখাই গেল না। মাঝমাঠে কাতসুমি নিজের সাধ্যমতো ওয়ার্কলোড নিলেও দুই সেন্ট্রাল মিডিও সৌভিক চক্রবর্তী ও শেহনাজ গড়বড় করছিলেন বারবার। প্রথম জন ফাইনাল পাস দিতে গিয়ে মিস করছিলেন। দ্বিতীয় জনের প্রায় সব বলেই ফাইনাল ট্যাকল যেন বাঁধা!

বাগানের এই ভুলভ্রান্তির সুযোগ লাজং কোচ তাই দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে নিতে শুরু করেছিলেন। বিপক্ষ ফরোয়ার্ডদের চেয়ে কিংশুক-আনাসের উচ্চতা কিছুটা কম হওয়ায় লাজং এই সময় ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে পেনা। কিন্তু ডাফির দ্বিতীয় গোল বাগানের গা থেকে সেই চাপ ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নেয়। এর পর সঞ্জয় আর দেরি না করে প্রণয়-প্রবীরকে নামাতে ফের ঝলমলে সবুজ-মেরুন জার্সি।

সরোবরে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাচ আয়োজন করতে হয়েছিল বাগান কর্তাদের। যাতে তাঁদের দশের মধ্যে ছয় দিতেই হবে। হাজার তিনেক দর্শক মাঠে দু’ঘণ্টা আগে থাকতে হাজির প্রিয় দলের খেলা দেখতে। আদালতের নির্দেশে বাজি ফাটানো, মাইক বাজানো নিষেধ। তাতে কী? ভুভুজেলা, ফ্যান ক্লাবের কোরাস, স্লোগান তো আছে। ছিলও এ দিন স্টেডিয়ামে।

তবু জনাকয়েক সবুজ-মেরুন সমর্থকের প্রশ্ন, ‘‘জেজে এত দেরিতে কেন?’’ বাগান কোচ যার উত্তর না দিয়ে বলছেন, ‘‘গোল খাইনি। পুরো ছ’পয়েন্ট এসেছে। পরের হোম ম্যাচও জিততে হবে। তা হলে অ্যাওয়ে ম্যাচে আর চাপ থাকবে না।’’

মোহনবাগান: দেবজিৎ, প্রীতম, কিংশুক, আনাস, শৌভিক ঘোষ, রেইনার (প্রবীর), শৌভিক চক্রবর্তী, শেহনাজ (প্রণয়), কাতসুমি, বলবন্ত (জেজে), ডাফি।

ছবি: উৎপল সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Duffy Sanjay Sen Mohun Bagan I-League
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE