Advertisement
১১ মে ২০২৪

র‌্যান্টিতেই থমকে থাকল জোড়া মাইলফলকের নজির

দু’হাত ছুড়ে ছুটলেন। নাচলেন। গোলের উৎসবেও মাতলেন। পার্থক্যের মধ্যে ইনি র‌্যান্টি মার্টিন্স নন! বরং তাঁরই দেশোয়ালি সতীর্থ ডুডু। শনিবাসরীয় শুনশান যুবভারতীতে সেটাই একমাত্র আফসোস নয়। আফসোস—আই লিগ ইতিহাসে যে মাইলফলক গড়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন র‌্যান্টি তাতে শুধু ইস্টবেঙ্গলেরই নয়, নিজের ‘ডাবল সেঞ্চুরি’টাও সেরে ফেলতে পারতেন।

খেলছে লাল-হলুদ। গ্যালারিতে নেই মশাল জ্বালানোর একজনও।

খেলছে লাল-হলুদ। গ্যালারিতে নেই মশাল জ্বালানোর একজনও।

প্রীতম সাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৫
Share: Save:

মুম্বই এফসি-১ (জোসিমার-পেনাল্টি)
ইস্টবেঙ্গল-১ (ডুডু)

দু’হাত ছুড়ে ছুটলেন। নাচলেন। গোলের উৎসবেও মাতলেন। পার্থক্যের মধ্যে ইনি র‌্যান্টি মার্টিন্স নন! বরং তাঁরই দেশোয়ালি সতীর্থ ডুডু।
শনিবাসরীয় শুনশান যুবভারতীতে সেটাই একমাত্র আফসোস নয়। আফসোস—আই লিগ ইতিহাসে যে মাইলফলক গড়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন র‌্যান্টি তাতে শুধু ইস্টবেঙ্গলেরই নয়, নিজের ‘ডাবল সেঞ্চুরি’টাও সেরে ফেলতে পারতেন। কিন্তু সেটা তো হল-ই না। উল্টে তাঁরই ‘বদান্যতায়’ জোড়া মাইলফলক ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হল লাল-হলুদ। দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি নষ্ট করে ‘এক ভিলেন’ হয়ে মাঠ ছাড়লেন আই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা। আর কী কাকতালীয়! যাঁর ক্যাপ্টেন্সিতে ইস্টবেঙ্গলের এ দিনই আই লিগে দুশো ম্যাচ জেতার কথা, সেই হরমনজ্যোৎ সিংহ খাবরার হ্যান্ডবল থেকে প্রাপ্ত পেনাল্টিতেই প্রথমার্ধে এগিয়ে যাওয়া প্রতিপক্ষ মুম্বই এফসির!
এখন যেন মনে হচ্ছে, লাল-হলুদ ফুটবলারদের সৌভাগ্য যে ম্যাচটা ফাঁকা গ্যালারিতে ছিল। নইলে যে ভাবে পেনাল্টি নষ্ট হল আর হজম করল লাল-হলুদ তাতে সমর্থকদের কটুক্তির হাত থেকে বোধহয় নিস্তার পেতেন না এলকোর ছেলেরা! ম্যাচ শেষে এক লাল-হলুদ ফুটবলার বলছিলেন, ‘‘এত খারাপ পেনাল্টি কিক আগে কখনও দেখিনি। আজ তো মাঠ ভরা থাকলে র‌্যান্টি হাড়ে হাড়ে টের পেত!’’
তবে র‌্যান্টির দিকেই শুধু আঙুল তুললে কি ইস্টবেঙ্গলের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? অনেকেই এখন হয়তো বলবেন, ফাঁকা মাঠে যেখানে সমর্থকদের চাপ নেই, সেখানেই পেনান্টি মিস করলেন র‌্যান্টি! তা হলে ভরা মাঠে কী করবেন? তবে পেনাল্টি মিসও তো খেলার অঙ্গ। সেখানে ইস্টবেঙ্গল একাধিক গোল করতে পারল না কেন? পুণেতে ঝড় তুলে যুবভারতীতে ফিরতেই দলের কঙ্কাল বেরিয়ে এল কেন? উত্তর একটাই— ফিটনেসের অভাব। যুবভারতীর তুলনায় পুণের বালেওয়াড়ি স্টেডিয়াম বেশ ছোট। তার উপর ওখানে ঘাসের মাঠ। সল্টলেক স্টেডিয়ামের কৃত্রিম ঘাসে শুরুতে গতি তুললেও শেষের কুড়ি-পঁচিশ মিনিট দৌড়তেই পারছেন না মেহতাবরা। তার উপর বৈশাখের গরমে কৃত্রিম মাঠ তড়াতাড়ি তেতে উঠছে। লাল-হলুদ কোচ ম্যাচের পর সাফ বলে দিলেন, ‘‘এই টিম ৬০-৬৫ মিনিট পুরোদমে খেলতে পারবে। তার পরেই শেষ। একটা চ্যাম্পিয়ন টিমের সঙ্গে এটাই আমাদের পার্থক্য। কঠিন সময়ে দলকে জেতানোর লোক নেই।’’ ময়দানের ডাচ কোচ ফুটবলারদের ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে নিজে ঝাড়া হাত-পা থাকার চেষ্টা করলেও অনেক প্রশ্ন উঠছে তাঁর ফুটবল-দর্শন নিয়েও। ‘গ্রাউন্ড পাস, পজেশনাল ফুটবল, ওয়াল প্লে’—সারাক্ষণ চেঁচাচ্ছেন তিনি। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হচ্ছে কি? এ দিন ইস্টবেঙ্গলের বলপজেশন ছিল ৭৫ শতাংশ। ওয়াল প্লে, গ্রাউন্ড পাসও হল। তা হলে একটা গোল আর একটার বেশি গোলের সুযোগ (শেষের দিকে লোবোর শট ক্রস বারে লাগল) তৈরি হল না কেন?

উঁকিঝুঁকি। যুবভারতীর মূল গেটের বাইরে দর্শনধারীরা।

হল না কোচের ভুলে। ঔদ্ধত্যে। শহরে পুরভোটের দিন কিছু কিছু বুথ জ্যামের মতো মুম্বই এফসি শুরু থেকেই পাঁচ জন লম্বা চেহারার ডিফেন্ডারে নিজেদের ছোট বক্স জ্যাম করেছে দেখেও ইস্টবেঙ্গল কোচ খেলার স্টাইল বদলালেন না। কেবল ব্যাক পাস আর স্কোয়ার পাস। কোনও ফরোয়ার্ড পাস নেই। আর যদিও বা সেটা এক-আধটা হচ্ছে, তাও মিস পাস। আসলে মুম্বই এফসি কোচ খালিদ জামিল ডাগ আউটে না থাকলেও গ্যালারি থেকেই দলের খেলা নিয়ন্ত্রণ করলেন। ম্যাচ কমিশনারের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেও! শুরুতেই ডুডু-র‌্যান্টির পিছনে স্টিফেন আর চিকাওয়ালিকে ‘পুলিশম্যান’ রেখে বিপক্ষের বলের সাপ্লাই কেটে দিলেন। সঙ্গে দুই অভিজ্ঞ ফুটবলার ক্লাইম্যাক্স আর কাট্টিমানিকে ডিফেন্সিভ ব্লকার দাঁড় করিয়ে ইস্টবেঙ্গলের গোটা খেলাটাই ঘেঁটে দিলেন। তরুণ ভারতীয় কোচের ‘খেলতে না পারি, খেলতেও দেব না’-র স্ট্র্যাটেজির কাছে আটকা পড়ে গেলেন অভিজ্ঞ ডাচ কোচ। ইস্টবেঙ্গলের একমাত্র গোলটাও সেট পিস থেকে। কোনও ফাইনাল পাস, থ্রু বা ভাল ক্রস থেকে নয়।
লাল-হলুদের অন্দরেই এলকোর স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ফের ক্ষোভ। মুম্বই-ডিফেন্স টপকাতে কেন শেষের দিকে উঁচু বলের আশ্রয় নেওয়া হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যা শুনে আবার বিরক্ত এলকো সাংবাদিক সম্মেলন শুরুই করলেন এই বলে, ‘‘কোচিং কী ভাবে করতে হয়, সেটা আমাকে যেন কেউ না শেখায়!’’ তার পরে আরও বিস্ফোরক তিনি— ‘এখানকার ফুটবলারদের ডিএনএতে একটা কথা ইনজেক্ট করা আছে— লং বল ছাড়া ফুটবল হয় না! দেখি, কত দিনে এই মানসিকতা বদলাতে পারি।’’
কী দাঁড়াল? র‌্যান্টির ‘বদান্যতা’ আর কোচের ‘জেদে’ দশ দিনেই শেষ ইস্টবেঙ্গলের মিনি মধুচন্দ্রিমা!

ছবি:উৎপল সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

east bengal vs mumbai fc ranty martins sports news
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE