Advertisement
০২ মে ২০২৪
আই লিগ

আবার ভয়ঙ্কর এনরিকে, খেতাবের স্বপ্ন ইস্টবেঙ্গলে

মোহনবাগানের বিরুদ্ধে আই লিগের প্রথম ডার্বির আগে পাঁজরে চোট নিয়ে যখন মেক্সিকো ফিরে গিয়েছিলেন লাল-হলুদ স্ট্রাইকার, প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে। এমনকি, এনরিকে-র পরিবর্তে নতুন বিদেশি সই করানোর পরামর্শ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়াকে অনেকেই দিয়েছিলেন।

উচ্ছ্বাস: জোড়া গোলের নায়ক এসকুয়েদাকে নিয়ে উৎসব জবির। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

উচ্ছ্বাস: জোড়া গোলের নায়ক এসকুয়েদাকে নিয়ে উৎসব জবির। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

শুভজিৎ মজুমদার
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩১
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল ২ • নেরোকা ১

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন।

ইস্টবেঙ্গলের, এনরিকে এসকুয়েদার!

মোহনবাগানের বিরুদ্ধে আই লিগের প্রথম ডার্বির আগে পাঁজরে চোট নিয়ে যখন মেক্সিকো ফিরে গিয়েছিলেন লাল-হলুদ স্ট্রাইকার, প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে। এমনকি, এনরিকে-র পরিবর্তে নতুন বিদেশি সই করানোর পরামর্শ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়াকে অনেকেই দিয়েছিলেন। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল কোচ শোনেননি। তিনি অপেক্ষা করেছেন দলের সেরা স্ট্রাইকারের ফেরার জন্য। আলেসান্দ্রো বিশ্বাস করেন, এই মরসুমে এনরিকের কোনও বিকল্প হয় না। বৃহস্পতিবারের যুবভারতীতে নেরোকার বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে কোচের সেই আস্থারই মর্যাদা দিলেন ২০০৫ সালে ব্রাজিলকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন মেক্সিকো দলের সদস্য।

আই লিগে ইস্টবেঙ্গলের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছিল নেরোকা ম্যাচের উপরে। অথচ শুরুতেই বিপর্যয়। লাল-হলুদ গোলরক্ষক রক্ষিত ডাগারের ভুলে তিন মিনিটে গোল করে নেরোকাকে এগিয়ে দিলেন চেঞ্চো গেলতসেন। এর পরেই শুরু হল গোল নষ্টের প্রতিযোগিতা। কখনও জবি জাস্টিন। কখনও লালডানমাউইয়া রালতে, আন্তোনিয়ো রদ্রিগেস (টোনি) দোভাল। শুধু তাই নয়। দু’বার গোল বাতিল হল অফসাইডে। একের পর এক গোলের সুযোগ নষ্ট হচ্ছে, আর আতঙ্ক বাড়ছে গ্যালারিতে হাজির প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার দর্শকের মধ্যে। ডার্বির পরের ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের হোঁচট খাওয়ার রোগ কি তা হলে ফিরে এল? নেরোকার বিরুদ্ধে জিততে না পারার অর্থ, রিয়াল কাশ্মীর ও চেন্নাই সিটি এফসি-র ফুটবলারদের বলে দেওয়া, ‘‘দেখো ভাই, খেতাবি দৌড়ে আমরা আর নেই। তোমরাই এ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য লড়াই করো।’’

শেষ পর্যন্ত হয়তো সেটাই হত। কিন্তু হল না এক জনের জন্য। তিনি, এনরিকে। ৫৮ মিনিটে টোনির পরিবর্তে লাল-হলুদ স্ট্রাইকারকে নামালেন আলেসান্দ্রো। নয় মিনিটের মধ্যেই কোলাদোর সেন্টার থেকে হেডে অসাধারণ গোল করে সমতা ফেরালেন আলেসান্দ্রোর ‘সুপার সাব’।

অথচ গোলের পরে আশ্চর্যরকম ভাবে উচ্ছ্বাসহীন এনরিকে। শুধু তাই নয়। সতীর্থদেরও উৎসব করতে দিলেন না। হয়তো বললেন, সমতা ফিরিয়েছি। আমাদের আসল লক্ষ্য নেরোকা-কে হারানো। আগে জিতি, তার পরে উৎসব। দ্বিতীয় গোলের পরে জবি, কোলাদো-দের নিজেই ডেকে নিলেন নাচার জন্য। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে এক দর্শককে দেখা গেল ফেন্সিং টপকে মাঠে ঢুকে চুম্বন করছেন তাঁর বুটে!

এনরিকের প্রত্যাবর্তন ও পেশাদারিত্বের কাহিনিও কম আকর্ষণীয় নয়। চোট পেয়ে দেশে ফিরেই ব্যক্তিগত ফিজিক্যাল ট্রেনারের কাছে ছুটেছিলেন। প্রথমে রিহ্যাব, তার পরে ফিটনেস ট্রেনিং। আই লিগের ফিরতি ডার্বির আগে যখন কলকাতায় ফিরলেন, এনরিকের ফিটনেস দেখে আলেসান্দ্রোও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তবুও দলের সেরা স্ট্রাইকারকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে শুরু থেকে খেলানোর ঝুঁকি নেননি রিয়াল মাদ্রিদে জোসে মোরিনহোর সঙ্গে কাজ করা আলেসান্দ্রো।

সেনাপতিরা যেমন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অস্ত্রভাণ্ডার থেকে সেরা অস্ত্র বার করেন না, লাল-হলুদ কোচও ঠিক সে ভাবে এনরিকে-কে ব্যবহার করছেন আই লিগে। দ্বিতীয় গোল ইস্টবেঙ্গল স্ট্রাইকার করলেন ম্যাচ শেষ হওয়ার চার মিনিট আগে। সামাদ আলি মল্লিকের অসাধারণ সেন্টারে মাথা ছুঁইয়ে। নেরোকার স্প্যানিশ কোচ ম্যানুয়েল ফারাইলে বলেই ফেললেন, ‘‘এনরিকে, এনরিকে, এনরিকে...ওর কাছেই হারলাম আমরা!’’

নেরোকা-কে হারিয়েই আই লিগে অভিযান শুরু করেছিল ইস্টবেঙ্গল। মণিপুরে সেই ম্যাচেও জোড়া গোল করেছিলেন এনরিকে। বৃহস্পতিবারের যুবভারতীতেও তাই। হাসতে হাসতে লাল-হলুদের জয়ের নায়ক বললেন, ‘‘আমি ভাগ্যবান বলেই হয়তো নেরোকার বিরুদ্ধে দু’টো ম্যাচেই গোল করলাম।’’ দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের রহস্য কী? এনরিকে বলছেন, ‘‘আমি পেশাদার। তাই সুস্থ হওয়ার পরে এক দিনও সময় নষ্ট না করে ট্রেনিং শুরু করে দিয়েছিলাম।’’ চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ার পরে কী ভাবে নিজেকে অনুপ্রাণিত করেতেন? এনরিকের জবাব, ‘‘পরিবারই আমার অনুপ্রেরণা। ওদের সঙ্গে নিয়েই কলকাতায় ফিরেছি।’’

পিছিয়ে পড়ে দুরন্ত জয়ে উচ্ছ্বসিত আলেসান্দ্রোও। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমার্ধে আমরা ভালই খেলেছি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে অসাধারণ খেলেছে ছেলেরা। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোটাই আমাদের ছিল।’’ চলতি আই লিগে এটাই কি সেরা জয়? লাল-হলুদ কোচ বলছেন, ‘‘ফিরতি ডার্বিতে জেতাটাই এখনও পর্যন্ত সেরা।’’

নেরাকা-কে হারিয়ে ১৪ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের চতুর্থ স্থানে থাকলেও এগিয়ে থাকা দলগুলোর সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান কিছুটা কমেছে। তা সত্ত্বেও লাল-হলুদ শিবিরে স্বস্তি নেই! পরের ম্যাচেই যে প্রতিপক্ষ ১৬ ম্যাচে ৩২ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে লিগ টেবলের শীর্ষে থাকা রিয়াল কাশ্মীর। খেলতে হবে শ্রীনগরের প্রবল ঠান্ডায়। চিন্তিত আলেসান্দ্রো বললেন, ‘‘শ্রীনগরে প্রচণ্ড ঠান্ডা। তার উপরে কৃত্রিম ঘাসের মাঠে খেলা। চেষ্টা করব প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে যাওয়ার।’’

ইস্টবেঙ্গল: রক্ষিত ডাগার, লালরাম চুলোভা, জনি আকোস্তা, বোরখা গোমেস পেরেস, কমলপ্রীত সিংহ (সামাদ আলি মল্লিক), লালডানমাউয়া রালতে (ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা), আন্তোনিয়ো রদ্রিগেস দোভাল (এনরিকে এসকুয়েদা), কাশিম আইদারা, লালরিন্দিকা রালতে, খাইমে সান্তোস কোলাদো ও জবি জাস্টিন।

নেরোকা: ললিত থাপা, ভারনে কেলন (ফেলিক্স চিডি), অশোক সিংহ, সেবাস্টিয়ান থানমুয়াংসাং, এদুয়ার্দো ফেরেইরা, মালেনগানবা, আব্দুল সালাম, কাতসুমি ইউসা, গ্লেন উইলিয়ামস, সুভাষ সিংহ (রোনাল্ড সিংহ) ও চেঞ্চো গেলতসেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE