Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ইস্টবেঙ্গলের স্বপ্নের জয়ে ‘মনাদা মেথড’

কলকাতা লিগে বড় দল বিরতিতে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থাকলে তাদের স্টপার বা স্ট্রাইকারের মনের অবস্থা কী হয়? বুধবার নিজেদের মাঠে ইস্টবেঙ্গল যখন সেনাদের বিরুদ্ধে দু’গোলে পিছিয়ে, হাফটাইমে মেহতাব-বেলোরা যখন ড্রেসিংরুমে ঢুকছেন লাল-হলুদ সদস্য গ্যালারিতে অসংখ্য দর্শকের ভিড়ে দু’জনের নাম শিশির ঘোষ এবং মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য।

গোল করার পথে ডং। বুধবার ইস্টবেঙ্গল মাঠে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

গোল করার পথে ডং। বুধবার ইস্টবেঙ্গল মাঠে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২৪
Share: Save:

আর্মি একাদশ-২ (লালিয়ানমইয়া, জৈন)

ইস্টবেঙ্গল-৩ (ডং-২, সৌমিক)

কলকাতা লিগে বড় দল বিরতিতে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থাকলে তাদের স্টপার বা স্ট্রাইকারের মনের অবস্থা কী হয়?

বুধবার নিজেদের মাঠে ইস্টবেঙ্গল যখন সেনাদের বিরুদ্ধে দু’গোলে পিছিয়ে, হাফটাইমে মেহতাব-বেলোরা যখন ড্রেসিংরুমে ঢুকছেন লাল-হলুদ সদস্য গ্যালারিতে অসংখ্য দর্শকের ভিড়ে দু’জনের নাম শিশির ঘোষ এবং মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। আশি-নব্বইয়ের দশকের দুই প্রধানের দুই মহাতারকা স্ট্রাইকার ও ডিফেন্ডার স্মৃতিচারণায় ব্যস্ত। শিশির বলছিলেন, ‘‘এ রকম পরিস্থিতিতে প্রায় পাগল হয়ে যেতাম। মনে হত কখন মাঠে নেমে গোল করব। এটাই তো সময় নিজেকে উদ্বুদ্ধ করার।’’

শিশিরের মনাদার (মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য) আবার মন্তব্য, ‘‘বহু লিগ ম্যাচে এ রকম পিছিয়ে থেকেছি। তখন অসম্ভব একটা রাগ হয়। মনে হত, মাঠে নেমে পরের পঁয়তাল্লিশ মিনিটে সব ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করে ফিরব। টিমের জুনিয়রদের গালমন্দ, বকাঝকা করে মোটিভেট করতাম।’’

০-২ পিছিয়ে পড়া ম্যাচ নাটকীয় ৩-২ জিতে ফিরে ইস্টবেঙ্গল কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যও যে এ দিন ‘মনাদা মেথড’-ই তুলে ধরলেন! ‘‘চুরাশির লিগে এরিয়ান ম্যাচে দু’গোলে হারছিলাম। দশ মিনিট বাকি। ফ্ল্যাগ নেমে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমরাই ৪-২ জিতেছিলাম। তখন মনাদারা টিমকে চাগানোর জন্য এমন গা জ্বালানো কথা বলত, মাঠে নেমে জান দিয়ে দিতাম। আজ কোচ হিসেবে আমিও সেটাই করলাম।’’

কী করলেন? শত অনুরোধেও বলতে রাজি হলেন না বিশ্বজিৎ। শুধু বললেন, ‘‘ভুল করেছিল এক জন। তার সামনেই বকলাম অন্য জনকে। তাতে কী হল সেটা তো মাঠেই দেখলেন।’’ যদিও লাল-হলুদ ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এল সেই গল্প। বিরতিতে বিশ্বজিৎ নাকি ড্রেসিংরুমে ঢুকেই বকাঝকা করেন স্টপার দীপক মণ্ডলকে। ‘‘প্রথম গোলটা তোমার জন্যই হয়েছে। তোমাকেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।’’

দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর মুখে এ দিনের ‘বার্থডে বয়’ বেলো রজ্জাককে দেখা গেল টিমকে জড়ো করে পেপটক দিতে। ম্যাচ জিতে উঠে তিনি বলে গেলেন, ‘‘তখন কী বলছিলাম জানেন? আমাদের গোটা ডিফেন্সের ভুলভ্রান্তি হয়েছে। দীপক একা কেন বকা খাবে? চলো, সবাই এর জবাব দেবো মাঠে।’’

তাই বিশ্বজিতের প্ল্যান বি-র পাশাপাশি তাঁর ‘মনাদা-মেথড’ আর বেলোর পেপটকও থাকছে ইস্টবেঙ্গলের হারা ম্যাচ জিতে লিগ টেবলে এক নম্বরে উঠে আসার পিছনে।

সার্ভিসেস দলের পাঁচজনপুষ্ট আর্মি একাদশের শদীপ রাই, পি জৈনদের সামনে প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট লাল-হলুদ জার্সি গায়ে দুই তরুণ তুর্কি— উইং হাফ প্রহ্লাদ আর সাইড ব্যাক সামাদ ছন্দ পাচ্ছিলেন না। বিশ্বজিৎ ডান দিকে প্রহ্লাদকে তুলে নামিয়ে দিলেন তুলুঙ্গাকে। ডং সেই টালিগঞ্জ ম্যাচের মতোই চলে এলেন সেই দিকে। রফিকের সঙ্গে মুহুর্মুহু আক্রমণে উঠতে লাগলেন ময়দানের মামা। আর ময়দানের কোরিয়ান নায়ক ডং তখন উইথড্রল। এবং এতেই কেল্লাফতে। প্রচুর ফাঁকফোকর তৈরি হতে শুরু করল সেনা রক্ষণে।

হঠাৎ-ই প্রাণ ফিরে পেলেন এতক্ষণ নিষ্প্রভ থাকা মেহতাব, লোবো, রফিকরাও। নিটফল, আঠারো মিনিটের মধ্যে ইস্টবেঙ্গলের তিন গোল। ডং চার ম্যাচে পাঁচ গোল করে ফেলে লিগে হায়েস্ট স্কোরার। তিনটেতে ম্যাচের সেরা। এ দিন সৌমিকের জয়ের গোলটিও এল ডং পা ঘুরে। আর জয়ের গোল সৌমিকের। যে সেনারা প্রায় গোটা প্রথমার্ধটা দাপাচ্ছিলেন ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সে, তাঁরাই পুরো দ্বিতীয়ার্ধ লাল-হলুদ সুনামির সামনে অসহায় বাঁধ দিতে ৮-১-১ ছকে!

দুরন্ত প্রত্যাবর্তনে এ দিন জিতলেও ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সকে কোনও এক মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায় টিভিতে কতটা মেপে রাখলেন সেটাও অবশ্যম্ভাবী প্রশ্ন হিসেবে সামনের চার দিন থাকবে। রবিবার মরসুমের দ্বিতীয় মিনি ডার্বিতে মহমেডান কোচ যে বিপক্ষের এই ফাঁকফোকরগুলোকে টার্গেট করবেন তা মৃদুলকে জিজ্ঞেস না করেই লিখে ফেলা যায়।

রোজ রোজ তো আর ‘দক্ষিণপন্থী’ ডংয়ের সৌজন্যে আর দীপকদের গনগনে রাগ খুঁচিয়ে ম্যাচ বার করা সম্ভব নয়!

ইস্টবেঙ্গল: ব্যারেটো, সামাদ, দীপক, বেলো, সৌমিক, প্রহ্লাদ (তুলুঙ্গা), মেহতাব, লোবো, বিকাশ, রফিক, ডং।

বৃহস্পতিবারে কলকাতা ফুটবল লিগ

মহমেডান: সাদার্ন সমিতি (মহমেডান ৩-৩০)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE