Advertisement
E-Paper

নিরাপত্তায় স্বস্তির মাঝে নতুন দুশ্চিন্তা সামি

এগুলো নিছকই ক্রিকেটীয় বক্তব্য। তার আগে দিনের শিরোনামটাও দিয়ে ফেলেছেন পাক অধিনায়ক। বলে দিয়েছেন, ‘‘ভারত আমাকে যতটা ভালবাসা দিয়েছে, ততটা পাকিস্তান থেকেও পাইনি। এই ভালবাসা সারা জীবন মনে রাখব। এ জন্যই ভারতে খেলাটা সবচেয়ে উপভোগ করি।’’

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত ও রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০৩:৫৯

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম বল পড়ার আগেই কি ০-১ হয়ে গেল পাকিস্তান?

বিশ্বকাপ অভিযানের প্রথম দিনই বড়সড় দুর্ঘটনা পাকিস্তান শিবিরে। যা অবস্থা, তাতে সামনের বুধবার টিমের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অনিশ্চিত ডান হাতি পেসার মহম্মদ সামি।

এ দিন সকালে নেটে ব্যাট করার সময় স্থানীয় বোলারের ডেলিভারি এসে লাগে সামির পায়ে। চোট যে বেশ গুরুতর, বোঝা গেল যখন সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে শুয়ে পড়েন সামি। ছুটে আসেন ফিজিও। কিছুটা ট্রিটমেন্টও নেন তিনি। পাকিস্তান শিবিরের খবর, চোট পুরোপুরি সারতে অন্তত দু’দিন লেগে যেতে পারে। কিন্তু মনে করা হচ্ছে, বুধবারের ম্যাচে তাঁর না খেলার দিকেই পাল্লা ঝুঁকে।

বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ম্যাচে সামনে বাংলাদেশ? যাদের কাছে এই মাসেই এশিয়া কাপ ম্যাচে হারতে হয়েছে শাহিদ আফ্রিদিদের? না কি অঘটন ঘটিয়ে মূলপর্বে উঠে আসবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ওমান? গোটা দিন এই জল্পনা ভাল মতোই ছিল পাক শিবিরে। রবিবার সন্ধেয় ধর্মশালায় যখন ওমান-বাংলাদেশ মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ চলছে, আফ্রিদিরা ছিলেন টিম হোটেলের ঘরেই। অনেকেরই চোখ ছিল টিভিতে, ধর্মশালার ম্যাচে।

তার আগে সকালের সাংবাদিক সম্মেলনে পাক অধিনায়ক বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলে গিয়েছেন, ‘‘প্রথম ম্যাচটা যে কোনও টুর্নামেন্টেই গুরুত্বপূর্ণ। ওই ম্যাচ থেকেই ছন্দটা ধরে নিতে হবে। আর ইডেনের পিচ-পরিবেশ সব তো আমাদেরই পক্ষে। শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রথম দুটো ম্যাচই আমাদের কাছে খুব জরুরি।’’

এগুলো নিছকই ক্রিকেটীয় বক্তব্য। তার আগে দিনের শিরোনামটাও দিয়ে ফেলেছেন পাক অধিনায়ক। বলে দিয়েছেন, ‘‘ভারত আমাকে যতটা ভালবাসা দিয়েছে, ততটা পাকিস্তান থেকেও পাইনি। এই ভালবাসা সারা জীবন মনে রাখব। এ জন্যই ভারতে খেলাটা সবচেয়ে উপভোগ করি।’’

আফ্রিদির মুখে যতই ভারত প্রেম থাকুক, পাক মিডিয়া সেশনেও ছিল দু’দেশের রাজনৈতিক চাপানউতোরের রেশ। কোনও রকম বিতর্কের আঁচ যাতে না পড়ে, তা দেখতে তৎপর ছিলেন পাকিস্তান মিডিয়া ম্যানেজার। আফ্রিদিকে রাজনীতি-ঘেঁষা প্রশ্ন করা হলে তার পরে শোয়েব মালিকের মিডিয়া সেশন শুরুর আগেভাগেই ম্যানেজার আগা আকবর বলে দিলেন, ‘‘শোয়েব নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বা রাজনীতিবিদ নন। দয়া করে ওঁকে ক্রিকেট সংক্রান্ত প্রশ্ন করবেন।’’

তখনও তিনি জানতেন না, গোটা দিন ধরেই যে তাঁর টিম ঘিরে নাটক চলবে। সকাল ন’টায় প্র্যাকটিসে আবির্ভাব এবং দুপুর দেড়টা নাগাদ মাঠ ছাড়া— মাঝের এই সময়টা টিম কাটাল নিরাপত্তার নিশ্ছিদ্র বলয়ে। টিম মাঠে আসার ও মাঠ থেকে বেরনোর আগে ও পরে ইডেনের সামনের গোটা রাস্তা ‘নো এন্ট্রি’ জোন করে দেওয়া হয়। আফ্রিদিরা প্র্যাকটিস করার সময়ও দেখা গেল জনা তিনেক ব্ল্যাক ক্যাট কমান্ডো সতর্ক দৃষ্টি নিয়ে সারা মাঠ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মিডিয়া সেন্টারে বসে সরফরাজ আহমেদ, ওয়াহাব রিয়াজরা যখন ভারত ম্যাচ নিয়ে হুঙ্কার ছাড়ছেন, নীচের তলায় টহল দিচ্ছে স্নিফার ডগ।

টিম হোটেলের ছবিটাও এক। যে ফ্লোরে রাখা হয়েছে আফ্রিদিদের, সেখানে চব্বিশ ঘণ্টা চলছে কমান্ডোর টহলদারি। অসংখ্য পুলিশকর্মীর ভিড়। সন্ধেয় এক পাক ক্রিকেটারের জন্য একজোড়া নতুন জুতো আসে হোটেলের বাইরে থেকে। যে ভাবে পরীক্ষা করে সেটা হোটেলের ভেতরে যেতে দেওয়া হয়, তা নাকি অভূতপূর্ব।

এ সবের মধ্যেই তেইশের তরুণ মহম্মদ আমের এবং তাঁর কয়েক জন সতীর্থ আবদার করেছিলেন, স্থানীয় মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে যাবেন। আমেরদের পছন্দের সিনেমা? প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার ‘জয় গঙ্গাজল’। স্থানীয় ম্যানেজার অনেক চেষ্টা করেও রবিবারের বাজারে একসঙ্গে ছাব্বিশটা টিকিট জোগাড় করতে পারেননি। পার্ক সার্কাসের এক শপিং মলের মাল্টিপ্লেক্সে রাতের শো-এ ডজনখানেক টিকিটের বন্দোবস্ত করা গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাক টিম ম্যানেজার ইন্তিখাব আলমের আপত্তিতে সিনেমা দেখার প্ল্যান ভেস্তে যায়। একসঙ্গে টিমের এত জন সিনেমা দেখতে বেরিয়ে যাবেন, সেই ঝুঁকি নাকি নিতে চাননি ইন্তিখাব।

ততক্ষণে পুলিশও তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছে। পাক টিম রাত সাড়ে দশটায় হোটেলের বাইরে গেলে যে পরিমাণ নিরাপত্তা দরকার, এত কম সময়ের মধ্যে তার আয়োজন করা অসম্ভব, জানায় পুলিশ। দলের সঙ্গে থাকা এক গোয়েন্দা অফিসার জানান, অন্তত পনেরো ঘণ্টার আগাম নোটিশ ছাড়া এ ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্ভব নয়।

নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বানচাল হয়ে গেল বাংলা বনাম পাকিস্তান প্রস্তুতি ম্যাচও। প্রথমে ঠিক ছিল, ১২ মার্চ ইডেনে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলবে মনোজ তিওয়ারির বাংলা এবং পাকিস্তান। কিন্তু ১২ মার্চ রাতেই শহরে পৌঁছন আফ্রিদিরা। যুগ্মসচিব অভিষেক ডালমিয়ার ইচ্ছাতেই নাকি ম্যাচটা পিছিয়ে আজ, সোমবার করার চেষ্টা করেছিল সিএবি। একটা সময় চূড়ান্ত হয়ে যায় যে, সোমবার পাক-শ্রীলঙ্কা ওয়ার্ম আপ ম্যাচের পরে দশ বা পনেরো ওভারের ম্যাচ খেলবেন মনোজরা। সেই মতো তাঁদের ফোনও করে দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আইসিসি প্রতিনিধিকে জানিয়ে দেন, ম্যাচটা হচ্ছে।

শোনা গেল ঘণ্টাখানেক পর পুলিশের আপত্তিতেই নাকি বাতিল হয়ে যায় ম্যাচটা। তাদের আপত্তি, সূচি অনুযায়ী পাক-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের নিরাপত্তা তারা দিচ্ছে। কিন্তু তার পর পনেরো ওভারের ম্যাচ হলেও অন্তত আড়াই ঘণ্টা বাড়তি নিরাপত্তা দরকার। এত কম সময়ের মধ্যে যার আয়োজন করা কঠিন। সিএবির তরফে অবশ্য রবিবার রাত পর্যন্ত সরকারি ভাবে ম্যাচ বাতিল হওয়ার ঘোষণা আসেনি, কিন্তু শোনা যাচ্ছে ম্যাচটা করা প্রায় অসম্ভব। বঙ্গ ক্রিকেটারদের নাকি পরে ফোন করে সেটা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।

ভারতে নিজের বা পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে অবশ্য খুব চিন্তিত নন শোয়েব মালিক। সানিয়া মির্জার স্বামী এ দিন বলছিলেন, নিরাপত্তা ছাড়াই বহু বার ভারত এসেছেন। শ্বশুরবাড়ির দেশ তাঁর খুব প্রিয়। এ দিন মাঠ থেকে বেরনোর আগে শোয়েব সিএবির এক কর্তাকে বলে যান, ১৯ মার্চ ভারত-পাক ম্যাচ দেখতে ইডেনে আসতে চান সানিয়ার মা-বাবা-বোন। তাঁদের যেন কোনও অযত্ন না হয়। সানিয়া নিজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খেলছেন বলে আসতে পারবেন না। তবে তাঁর বাবা ইমরান মির্জা সিএবির এক কর্তাকে ফোন করে কথা বলে নেন।

এমনই ‘ফিল গুড’ হাওয়া পাক শিবিরে যে স্টিভ স্মিথদের ড্রেসিংরুম ছেড়ে দিতে হওয়ায় এ দিন মাঠে লাঞ্চ করার সময় না পেয়েও নাকি আফ্রিদিরা ক্ষুব্ধ নন। পুরো টিমের জন্য রাখা খাবার প্যাক করে টিম হোটেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং হোটেলেই লাঞ্চ সারেন তাঁরা।

pakistan india t-20 world cup wt20
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy