Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
একান্ত সাক্ষাৎকারে কর্তাদের তোপ মহেশের

কিংবদন্তিদের সরিয়েছে, আমি তো ছোট এক নাম

নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন থাকি বা না-থাকি, সব সময়ই আমি ছেলেদের সঙ্গে থেকেছি। পাশে থেকেছি। সব সময় আমাদের মধ্যে যোগাযোগ থেকেছে। সেটা তেমনই চলতে থাকবে। 

হতাশ: মহেশ ভূপতি।

হতাশ: মহেশ ভূপতি।

সুমিত ঘোষ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১৬
Share: Save:

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ডেভিস কাপের টাইয়ে পাকিস্তান যাওয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। পুরস্কার? তাঁকে নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের পদ থেকেই সরিয়ে দেওয়া হল! ডাবলসে দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে পঁচিশ বছর ধরে নানা গর্বের মুহূর্ত উপহার দিয়েও জুটল চরম অপমান। নিরাপত্তার অভাবে পাকিস্তান থেকে টাই সরিয়ে নিল আন্তর্জাতিক টেনিস সংস্থা, তবু সর্বভারতীয় টেনিস ফেডারেশন (এআইটিএফ) গোঁ ধরে বসে আছে, তিনি নন, নতুন নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনই টিম নিয়ে যাবেন। জাতীয় সংস্থার সঙ্গে চলতে থাকা বিবাদ এবং তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে মুখ খুলে বৃহস্পতিবার রাতে মহেশ ভূপতি একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।

প্রশ্ন: ডেভিস কাপ নিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি তা হলে কী?

মহেশ ভূপতি: বর্তমান পরিস্থিতিটা হচ্ছে, পাকিস্তান টাইয়ের জন্য রোহিত (রাজপাল) নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন। আর দলটা ওরা ঘোষণা করবে ১০ বা ১১ নভেম্বর। আমি সে রকমই জানি।

প্র: গত কয়েক ঘণ্টায় আপনার সঙ্গে সর্বভারতীয় টেনিস ফেডারেশন (এআইটিএ) থেকে আর কেউ কি যোগাযোগ করেছিল?

মহেশ: হ্যাঁ, গতকাল সন্ধ্যায় (অর্থাৎ বুধবার সন্ধ্যায়) আমি একটা ফোন পাই এআইটিএ থেকে। ওরা জানায়, রোহিতকেই নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন করে টিম যাবে। এটাই এআইটিএ-র সিদ্ধান্ত।

প্র: আপনার অবস্থানটা তা হলে কী?

মহেশ: আমি নিজেও জানি না। কখনও বলিনি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করব না। বলেছিলাম, পাকিস্তান যেতে অসুবিধা আছে নিরাপত্তাজনিত কারণে। বলেছিলাম, ছেলেরাও খুব একটা স্বস্তিতে নেই পাকিস্তান যাওয়া নিয়ে। সেটা তো নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হিসেবে জানাতেই পারি। আর সবাই তো দেখছে পাকিস্তানে কী পরিস্থিতি!। ক’টা দলই বা ওখানে খেলতে গিয়েছে! তা হলে আমি আর অন্য রকম কী বললাম!

প্র: এআইটিএ নিজেরা জানিয়েছে, ওরাও ভাবেনি পাকিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন (আইটিএফ) ডেভিস কাপের টাই সরিয়ে নেবে...

মহেশ: সেটা আমি শুনলাম। ওরা বোধ হয় প্রেস কনফারেন্স করে বলেছে কথাটা। সেই তো পাকিস্তান থেকে ম্যাচ সরিয়েই নেওয়া হল নিরপেক্ষ কেন্দ্রে নিরাপত্তার কারণে। তার মানে খুব খারাপ কথা আমি বা খেলোয়াড়রা বলিনি। আমি কালকের মতোই আবার বলছি, আমাকে সরিয়ে দেওয়ার হলে সরিয়ে দেওয়াই যেত। কর্তারা যদি কেউ আমার সঙ্গে কথা বলে পরিষ্কার করে বলতেন, মহেশ, নতুন কাউকে দেখার সময় হয়েছে। আমি অবশ্যই সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতাম।

প্র: ব্যাপারটা ঠিক কী ঘটল?

মহেশ: আমাকে ফেডারেশন কর্তারাই বললেন, তুমিই নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হবে। তার পর দল নির্বাচনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হলাম। এমনকি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ কেন্দ্রে খেলার আবেদন করার কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েও গেলাম। ১৫ অক্টোবরও আমাকে সভায় ডাকা হয়েছিল। তার পর কী ঘটল? আমিও জানি না। এখনও সম্পূর্ণ ধোঁয়াশায় আমি। এআইটিএ বলছে, ওদের আর অপেক্ষা করার মতো হাতে সময় ছিল না। কিন্তু সকলেই বুঝতে পারছিল, পাকিস্তানে খেলা হবে কি না, তা নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে আন্তর্জাতিক টেনিস সংস্থা। তা হলে সময় ছিল না কথাটার মানে কী?

প্র: প্রথম যখন শুনলেন আপনাকে নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, কী মনে হল?

মহেশ: আমি খুবই হতাশ হয়েছি। আবার বলছি, হতাশাটা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে নয়। যে ভঙ্গিতে গোটা ব্যাপারটা ঘটানো হল, সেটা মানতে পারছি না। এটা কোনও প্রক্রিয়া হল? যাক গে, সবাই তো আর সমান হয় না!

প্র: ব্যাপারটা তো শুধু পাকিস্তান টাইয়ে আর সীমাবদ্ধ নেই। আপনার কথাতেই ইঙ্গিত, আপনাকে নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের পদ থেকে সরিয়েই দেওয়া হয়েছে। এটা কেউ আপনাকে জানাল না বুঝে নিতে হল?

মহেশ: জানি না, ওরা (এআইটিএফ) যোগাযোগ বলতে কী বোঝাতে চাইছে। তবে আমি যোগাযোগ বলতে যা বুঝি, পরিষ্কার করে কখনওই তা আমার সঙ্গে করে বলা হয়নি, ঠিক কী ঘটতে চলেছে। এটা হতেই পারে যে, আমাকে আর রাখতে চাইছে না ফেডারেশন। খুব ভাল কথা। সেটা বলে দিলেই মিটে যায়। একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারছি না। পাকিস্তানে যাওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলাম। এই মুহূর্তে পাকিস্তানে খেলতে গেলে নিরাপত্তা সম্পর্কে আমরা সকলে নিশ্চিত ছিলাম না। আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন আমাদের কথা শুনল, ওরা পাকিস্তান থেকে ম্যাচ সরিয়ে নিরপেক্ষ কেন্দ্রে টাই নিয়ে গেল। নিজেদের দেশের টেনিস সংস্থার তা হলে এটাকে আপত্তিজনক লাগল কেন?

প্র: দেশের হয়ে এত বছর সুনামের সঙ্গে খেলার পরে এটাই কি প্রাপ্য আমার? এই প্রশ্ন কি আসছে মনে?

মহেশ: না। গত দু’দিন ধরে বরং ভাবছিলাম, আমি তো ছোটখাটো এক জন খেলোয়াড়। কিংবদন্তিদের সঙ্গে ওরা এ রকমই করেছে। জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, নরেশ কুমার, আনন্দ অমৃতরাজ, রমেশ কৃষ্ণণ। সকলের সঙ্গেই এ রকম আচরণ করেছে। এআইটিএফের দিক থেকে দেখতে গেলে, এটাই স্বাভাবিক। মহেশ ভূপতিকে সরানোটা আর নতুন কী!

প্র: কিন্তু কতটা ব্যথিত আপনি?

মহেশ: আমি ব্যথিত নই। তবে হতাশ হয়েছি এআইটিএফের আচরণে। ছেলেদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। ওদের সঙ্গে আজও কথা হয়েছে। মনেপ্রাণে চাই, পাকিস্তানকে হারিয়ে আসুক ওরা। সেটাই আসল লক্ষ্য। যখন খেলেছি, তখন যেমন টিমের লক্ষ্যটাই আমার লক্ষ্য ছিল, ২০১৭ থেকে নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হওয়ার সময় থেকেও তা-ই থেকেছে। আমাকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছিল। মনে হয়েছিল, দেশকে সেবা করার আর একটা সুযোগ পাচ্ছি। দেশের দারুণ দারুণ সব প্রতিভাকে সাহায্য করতে ভাল লাগবে। তাই দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছিলাম। দেশের জন্য কখনও দায়িত্ব এড়িয়ে যাইনি, যেটা পাকিস্তানে না যাওয়া নিয়ে আমার বিরুদ্ধে বলা হল। বরং বরাবরই দায়িত্ব নিতে এগিয়ে এসেছি।

প্র: সামনের রাস্তাটা তা হলে কী?

মহেশ: নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন থাকি বা না-থাকি, সব সময়ই আমি ছেলেদের সঙ্গে থেকেছি। পাশে থেকেছি। সব সময় আমাদের মধ্যে যোগাযোগ থেকেছে। সেটা তেমনই চলতে থাকবে।

প্র: যদি কর্তারা ফের এসে বলেন, পাকিস্তান ম্যাচের পরে আবার আমরা তোমাকে নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন চাই, আপনি তাঁদের কথা শুনবেন?

মহেশ: খোলা মনে ওদের সঙ্গে কথা বলে দেখব। তার পর যেটা সব চেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত, সেটাই নেওয়ার চেষ্টা করব।

প্র: যিনি নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হিসেবে যাচ্ছেন সেই রোহিত রাজপাল বলেছেন, আপনার সঙ্গে বসতে চান...

মহেশ: রোহিত আর আমি খুব ভাল বন্ধু। আমরা পরস্পরকে কুড়ি বছর ধরে চিনি। ওকে নিয়ে আমার কোনও সমস্যাই নেই। সোমবার এবং মঙ্গলবার, দু’দিন লম্বা কথা হয়েছে ওর সঙ্গে। আমরা খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এই ঘটনায় রোহিতের কিছু করার নেই।

প্র: এই ডেভিস কাপ টিমের অনেক খেলোয়াড়ের খুব ঘনিষ্ঠ আপনি। তাঁদের সঙ্গে কথা হচ্ছে?

মহেশ: শুনুন, ডেভিস কাপই শুধু ভারতীয় টেনিস নয়। বছরে দু’সপ্তাহ ডেভিস কাপ হয়। এর বাইরেও অনেক ঘটনা ঘটে। যেগুলো ভারতের টেনিস খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। এ দিনই আমি সুমিত নাগালকে (যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে রজার ফেডেরারের বিরুদ্ধে একটি সেট জিতে যিনি টেনিস বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন) প্র্যাক্টিস করালাম মুম্বইয়ে। দেশের যে কোনও ছেলের আমার সাহায্য বা পরামর্শ দরকার হলে আমি সব সময় আছি। তা সে আমি নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন থাকি আর না থাকি। এর জন্য আমার কোনও পদ দরকার নেই।

প্র: তবু যদি ওঁরা কথা বলেন?

মহেশ: আমি পদ তাড়া করতে চাই না। সকলেই জানে, আমি কী করতে পারি। যদি কেউ সাহায্য চায় বা জানতে চায়, আমার দরজা সব সময় খোলা। সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ছেলেরা খুব ভাল করে এটা জানে যে, আমার দরজা ওদের জন্য সব সময় খোলা। সেটাই আসল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE