Advertisement
E-Paper

এমসিসি ক্যাপ্টেন্সি ম্যানুয়ালে ধোনি কিছু পাতা যোগ করে ফেলল

বক্তা খেলা ছাড়ার এগারো বছর বাদেও ক্রিকেটবিশ্বে ধুরন্ধর নেতা হিসেবে প্রসিদ্ধ। অনেকে মনে করেন তিনি যুদ্ধোত্তর ইংল্যান্ডের সেরা অধিনায়ক। তেন্ডুলকর রেটিং দিয়েছেন, তাঁর দেখা সেরা ক্যাপ্টেন। তিনি, নাসের হুসেন বুধবার বিকেলে ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ দিলেন এবিপি-কে...বক্তা খেলা ছাড়ার এগারো বছর বাদেও ক্রিকেটবিশ্বে ধুরন্ধর নেতা হিসেবে প্রসিদ্ধ। অনেকে মনে করেন তিনি যুদ্ধোত্তর ইংল্যান্ডের সেরা অধিনায়ক। তেন্ডুলকর রেটিং দিয়েছেন, তাঁর দেখা সেরা ক্যাপ্টেন। তিনি, নাসের হুসেন বুধবার বিকেলে ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ দিলেন এবিপি-কে...

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০৪:৫৪

প্রশ্ন: আপনি আর্ট অব ক্যাপ্টেন্সি নিশ্চয়ই পড়েছিলেন?

নাসের: হ্যাঁ, শুধু পড়িনি সেটা পড়ে অনুকরণেরও চেষ্টা করেছি।

প্র: কিন্তু এখন তো মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আর্ট অব ক্যাপ্টেন্সির নতুন বই লিখে বসে রয়েছেন। যার সঙ্গে পুরনো বইয়ের কোনও মিল নেই।

নাসের: (হাসি) আমার মনে হয় না ধোনি নতুন কোনও বই লিখেছে বলে। ও এমসিসির পুরনো ক্যাপ্টেন্সি ম্যানুয়াল হিসেবে যেটা ভাবা হয়, তারই বেশ কিছু পাতা বাড়িয়েছে।

প্র: কোথায়? ধোনি তো এমসিসি বা মাইক ব্রিয়ারলি— কোনও ঘরানাতে বিশ্বাসী নন। তিনি প্ল্যানিং বা টিম মিটিং এ সবে বিশ্বাস করেন না। পুরো স্টাইলটাই তাত্‌ক্ষণিক।

নাসের: তাই তো হবে। বড় ক্যাপ্টেনরা অনেকেই তাত্‌ক্ষণিক। ধোনি যেটা অ্যাড করেছে সেটা হল সম্পূর্ণ শান্ত, অনুত্তেজিত থেকে একজন লিডার কী ভাবে তার লক্ষ্যের দিকে এগোতে পারে। মাইল ব্রিয়ারলিও মাথা ঠান্ডা করে ইয়ান বোথামের মতো ক্যারেক্টারকে সামলাতেন। কিন্তু ভারতে যে ধরনের পাগলামি ক্রিকেট নিয়ে ঘটে সেখানে একজন ক্যাপ্টেনের এতটা ঠান্ডা থাকতে পারা অবিশ্বাস্য। ধোনি যখনই গত আট বছরে এক-আধ মিনিটের জন্য মাথা গরম করেছে তখনই সেটা খবর হয়েছে। বললাম তো ইন্ডিয়া টিমকে লিড করে এই রেকর্ড ভাবাই যায় না!

প্র: এ বারের বিশ্বকাপে ধোনির ক্যাপ্টেন্সি কি আপনার খুব ভাল লেগেছে?

নাসের: শুধু এ বারের বিশ্বকাপ নয়। সাধারণ ভাবে ওয়ান ডে ক্রিকেটে ধোনি অতুলনীয়। অদ্ভুত একটা ধরন আছে। এমন সব জায়গায় ফিল্ডার রাখে যা নিয়ে কোনও যুক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। যেমন প্রায়ই ও লেগ স্লিপ রাখে। কিন্তু সেটা রেখে আবার ও এত সফল যে তর্ক করবেন কী করে? সম্পূর্ণ নিজস্ব একটা ধারা আছে ওর যা চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেওয়ার মতো।

প্র: বিশ্বকাপে আর কার ক্যাপ্টেন্সি ভাল লেগেছে আপনার?

নাসের: ম্যাকালাম ভাল করছে। ও একটা দারুণ ইমেজারি তৈরি করে দিতে পারে। হঠাত্‌ করে চার স্লিপ একটা গালি করে দিল। ব্যাটসম্যান তো অবাক হয়ে গেল। এতটা কি সুইং করছে নাকি? কিন্তু ওই যে বিপক্ষের স্তম্ভিত ভাবটা এনে দিতে পারা, ওটাই গুড ক্যাপ্টেন্সি। তবে ম্যাকালাম ভাল ক্যাপ্টেন্সি করছে এক বছর। ধোনি করে যাচ্ছে আট বছর ধরে। ফ্লেমিংকেও আমার ভাল লাগত। বেশ ভাল ক্যাপ্টেন ছিল ও। কিন্তু ওই যে এত বছর ধরে ধারাবাহিক নয়। তাই আমার মতে ম্যানুয়ালের নতুন পাতা ধোনিই জুড়েছে। আধুনিক সময়ে আর কেউ নয়।

প্র: আপনি কি ইংল্যান্ড অধিনায়ক হিসেবে সচেতন ভাবে ডগলাস জার্ডিনকে অনুসরণ করতেন?

নাসের: (অবাক) না তো। কেন?

প্র: সে সময় বলা হত আপনাদের দু’জনেরই জন্ম ভারতে। দু’জনেই চেয়েছেন বিপক্ষ যাতে আপনাদের যথাসম্ভব ঘৃণা করে।

নাসের: ও ইয়েস। সেটা নিয়ে আমার কোনও সঙ্কোচই নেই। আমি বরাবর চেয়েছি অপোনেন্টকে আমার সম্পর্কে উত্তেজিত রাখতে। ক্যাপ্টেন্সি মোটেও ভোটে জেতা জাতীয় জনপ্রিয় হওয়ার কোনও প্রক্রিয়া নয়। ক্যাপ্টেন্সি মানে শক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া। কেবল দলের স্বার্থ মাথায় রাখা— বাকি পৃথিবীকে গোল্লায় দিয়ে।

প্র: খেলোয়াড়জীবনে ভারতীয় প্লেয়াররা আপনাকে ঘৃণা করতেন। এখন দেখি সেই সচিন, সেই সৌরভের সঙ্গেই আপনার গভীর বন্ধুত্ব।

নাসের: তাই তো! ওদের সঙ্গে যেটা হয়েছিল সেটা মঠে খেলা জেতার জন্য। ব্যক্তিগত কোনও শত্রুতা তো ছিল না। সচিনকে বেঙ্গালুরুতে ওই ফিল্ডটা সাজিয়ে দিয়েছিলাম ওর রান বন্ধ করব বলে। সেটাই দরকার ছিল পরিস্থিতি বিচারে। শেন ওয়ার্নের সঙ্গে তো আমার কত গণ্ডগোল হয়েছে। ও আমাকে কী পরিমাণ স্লেজ করেছে। আজ তো আমরা বন্ধু। একসঙ্গে আড্ডা মারি। টিভি কমেন্ট্রি করি। কোথাও কোনও সমস্যা নেই।

ক্রিকেটজীবনটা আলাদা। ক্যাপ্টেনের ক্ষেত্রে তো আরওই আলাদা। আপনাদের সৌরভকে দেখুন না। ইন্ডিয়া ওর আগে সব ভদ্র ভদ্র ক্যাপ্টেন পেয়েছিল। যারা মিষ্টি মিষ্টি কথা বলত। তাদের ওপর লোকে যা শোষণ করত, সেগুলো দিব্যি মেনে নিত। সৌরভ প্রথমেই এটা বদলালো। বলল, ভদ্র হওয়ার কোনও দরকার নেই। যেটার জন্য যতটা রুক্ষ হতে হয় ততটাই হবে। ঠিক বলেছিল একদম।

প্র: কিন্তু সৌরভের সঙ্গে তো আপনার খুব খারাপ সম্পর্ক ছিল?

নাসের: অবশ্যই ছিল। কিন্তু ওকে মনে মনে শ্রদ্ধা করতাম এই মাস্তানিটার জন্য। কখনও প্রকাশ করিনি সেই সময়।

প্র: সৌরভের ন্যাটওয়েস্ট ফাইনালের পর জামা খোলার ঘটনাটা নিয়ে তখন কী মনে হয়েছিল? আপনি তো ছিলেন বিপক্ষ টিমের ক্যাপ্টেন!

নাসের: আমার তখন ওটা নিয়ে ভাবার সময় ছিল না। আমি মূহ্যমান হয়ে ভাবছিলাম কী করে ম্যাচটা হারলাম? আমার জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক হারের মধ্যে একটা বিশ্বকাপে পোর্ট এলিজাবেথে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারা। আর একটা ওই ন্যাটওয়েস্ট।

প্র: কিন্তু ওই জামা খোলাটা ক্রিকেটবিশ্বকে বিভক্ত করে দিয়েছিল। ঠিক কাজ হয়েছে, না হয়নি? দু’দিকেই প্রচুর ভোট ছিল!

নাসের: আমি খারাপ কিছু দেখিনি...ফ্লিনটফ যা করেছিল সৌরভ তার বদলা নিয়েছিল জামা খুলে। বেশ করেছে।

প্র: এ বারের বিশ্বকাপে আসি। নিউজিল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা কে জিতবে?

নাসের: বলা শক্ত। টাফ ম্যাচ হবে।

প্র: ভারতীয় দলকে বিশ্বকাপে কেমন দেখছেন?

নাসের: খুব ভাল বিশেষ করে— ধোনির পেসাররা।

প্র: তিন পেসার কি সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া পড়লেও কাজ করবে বলে মনে করেন?

নাসের: সেটাই দেখার যে ইন্ডিয়ার তিন পেসার রিয়েল বড় টিমের বিরুদ্ধে কাজ করে কি না? আমার মনে হয় ওয়ার্ল্ড কাপের ভাগ্য এইখানেই নির্ভর করে আছে।

world cup 2015 gautam bhattacharya nasser hussein
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy