Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Sports News

‘বাবার মৃত্যুই বিরাটকে পরিণত করে দিয়েছিল’

সেই ছোট্ট বিরাট কোহালিকে হাতে ধরে ক্রিকেট শিখিয়ে আজ গর্বিত কোচ যে কোনও পরিস্থিতিতে বাজি ধরতে পারেন ছাত্রকে নিয়ে। তাই জন্মদিনের সকালে দিল্লি থেকে বেশ খানিকটা দূরে বিলাসপুরে বসেও ছাত্রকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ভুললেন না। সেখান থেকেই কথা বললেন আমাদের সঙ্গেও।

ছোটবেলার কোচ রাজ কুমার শর্মার সঙ্গে বিরাট কোহালি।

ছোটবেলার কোচ রাজ কুমার শর্মার সঙ্গে বিরাট কোহালি।

সুচরিতা সেন চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৫৬
Share: Save:

আগের রাতেই নিউজিল্যান্ডের কাছে দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে হারটা অনেকটাই ফিকে করে দিয়েছে অধিনায়কের জন্মদিনের সকালকে। যখনই খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন সবার আগে মনে পড়েছে ছোটবেলার কোচের কথা। সে শুধু ক্রিকেটার বিরাটই হোক বা অধিনায়ক বিরাট সব সময়ই আশ্রয় নিয়েছেন কোচ রাজকুমার শর্মার। এই তো কিউইদের বিরুদ্ধে দিল্লিতে প্রথম টি২০ খেলতে গিয়ে কোচের সঙ্গে দেখা করতে ভোলেননি। সেই ছোট্ট ছেলেটাকে হাতে ধরে ক্রিকেট শিখিয়ে আজ গর্বিত কোচ যে কোনও পরিস্থিতিতে বাজি ধরতে পারেন ছাত্রকে নিয়ে। তাই জন্মদিনের সকালে দিল্লি থেকে বেশ খানিকটা দূরে বিলাসপুরে বসেও ছাত্রকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ভুললেন না। সেখান থেকেই কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে।

আরও পড়ুন

দ্বিতীয় টি২০-তে ভারতের প্রথম একাদশ

ভারতের বিশ্রী হারে কোহালির জন্মদিনের আনন্দ ম্লান

শুভেচ্ছা জানালেন ছাত্রকে?

রাজকুমার: না, এখনও জানাইনি। অবশ্যই জানাব।

ম্যাচ শেষে সতীর্থদের সঙ্গে বিরাট কোহালির জন্মদিন পালন।

একদম ছোটবেলা থেকে যাঁকে হাতে ধরে তৈরি করেছেন আজ সে-ই ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, অনুভূতিটা ঠিক কেমন?

রাজকুমার: অসাধারণ। গর্ব হয় ওর জন্য। কোথা থেকে নিজেকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে।

এই উত্থানের পিছনে বিশেষত্বটা কী?

রাজকুমার: ও ছোটবেলা থেকেই খেলা নিয়ে আবেগপ্রবণ।

ঠিক কেমন?

রাজকুমার: যেমন সব ম্যাচ শেষে ও নিজে সেই ম্যাচের কাটাছেঁড়া করে। খারাপ হলে বোঝার চেষ্টা করে ভুলটা কোথায় হল। ও সব সময়ই নিজের ভুল থেকে শেখে।

খেলা না থাকলে পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটাতে ভালবাসেন।

ছোটবেলা থেকেই কি এই রকম মেজাজের ছিলেন বিরাট?

রাজকুমার: একদম। ও সব সময় ঝুঁকি নিতে ভালবাসে। যদি খুব চাপে থাকে ওকে দেখে কেউ বুঝবে না। ও মনে মনে প্রস্তুতি নেবে দলকে চাপমুক্ত করে কাজটা হাসিল করার। সব সময় প্রস্তুত ও।

আপনি কী ভাবে পাশে থাকেন?

রাজকুমার: আমাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। এখন ও অনেক অভিজ্ঞ। দরকার হয় না সব কিছু আলোচনা করার। কিন্তু যখন দরকার হয় আমার সঙ্গেই কথা বলে।

শুনেছি সব বিদেশ ট্যুরের আগে আপনি সেখানকার মতো পিচ তৈরি করে দেন বিরাটের অনুশীলনের জন্য?

রাজকুমার: হ্যাঁ (হেসে)। সব ট্যুরের আগে আমি আমার অ্যাকাডেমিতে সেই দেশের মতো পিচ তৈরি করি আর বিরাট সেখানে নিরন্তর পরিশ্রম করে।

ছোটবেলায় সব খেতাম। ফিটনেসকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া বিরাট নিজের ছোটবেলার ছবি পোস্ট করে লেখেন।

যেমন, এক-দু’টো উদাহরণ যদি দেন?

রাজকুমার: যখন অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিল তার আগে আমি এখানে বাউন্সি উইকেট বানিয়ে দিয়েছিলাম। ইংল্যান্ড ট্যুরের আগে হালকা ভিজে আর সিমিং উইকেট বানিয়েছিলাম। এ রকম অনেকটা।

অধিনায়ক বিরাটকে কোথায় রাখবেন?

রাজকুমার: ও ভাল ক্যাপ্টেন কারণ, কখনও ভয় পায় না আর সব সময় চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। সারাক্ষণ মাথায় পরিকল্পনা ঘোরে আর সেটা সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়িত করে ফেলতে পারে।

কিন্তু এই সবের মধ্যেও কী পরিবর্তন আনতে চান বিরাটের মধ্যে?

রাজকুমার: আমার মনে হয় ওর একটাই পরিবর্তন দরকার সেটা হল, প্রত্যাশা। সতীর্থদের থেকে ওর প্রচুর প্রত্যাশা। ও ভাবে ও যেটা পারে সবাই সেটাকেই লক্ষ্য করবে বাস্তবায়িত করবে। আসলে ও হারতে চায় না।

বিরাটকে কেক খাওয়াচ্ছেন শিখর ধবন।

বিরাটের আক্রমণাত্মক মনোভাবের জন্য মাঝে মাঝে তো সমালোচিত হতে হয়?

রাজকুমার: এটাই ওর স্বাভাবিক চরিত্র। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আর এক অধিনায়ক হিসেবেও। আমি জানি ধোনির কুলনেসের সঙ্গে তুলনা হয়। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে দু’জন ভিন্ন মানুষ। এই আক্রমণাত্মক মনোভাবটাই ওর শক্তি। এই জন্যই ও সফল।

চোখে চোখ রেখে জবাব দেওয়ার কথা বলছেন?

রাজকুমার: হ্যাঁ, আগে যেমন অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে গেলে ওদের স্লেজিংয়ের সামনে মাথা নিচু করে চলে আসতাম। কিন্তু ও মনে করে চোখে চোখ রেখে জবাব দেওয়া উচিত। যেটা ভারতীয় ক্রিকেটে শুরু করেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

বিরাট যে বাকিদের থেকে আলাদা প্রতিভা এটা কবে বুঝতে পেরেছিলেন?

রাজকুমার: আমার কাছে এসেছিল ন’বছর বয়সে। ১৫-২০ দিন অনুশীলন করার পরই বুঝতে পেরেছিলাম ও কিন্তু বাকিদের থেকে আলাদা। ‘গড গিফটেড’ প্রতিভা ছিল। ওকে কিছু শেখাতে হত না সে ভাবে। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ছিল। সঙ্গে খাটতে কোনও ক্লান্তি ছিল না। যখন যা বলা হত তাই করত। ছোটবেলা থেকেই খুব পরিণত।

শুভ জন্মদিন বিরাট কোহালি।

ছোটবেলা থেকে এতটা পরিণত হয়ে ওঠার পিছনে কোনও কারণ আছে?

রাজকুমার: অবশ্যই কারণ আছে। ১৭-১৮ বছরের একটি ছেলের মাথার উপর থেকে যখন বাবার হাত উঠে যায় তখন সে হঠাৎ করেই অনেকটা বড় হয়ে যায়। দায়িত্ববধ বেড়ে যায়। সেটাই হয়েছিল ওর।

সম্প্রতি বিরাটের ফিটনেস খুবই চর্চিত বিষয়?

রাজ কুমার: ও চিরকালই ফিট ছিল। কিন্তু ত ৫-৬ বছরে সেটাকে অনুশীলনের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। যার জন্য অনেক ভাললাগা খাওয়াও ছেড়ে দিয়েছে। এটা ওর নিজের ভাবনা। কেউ বলেনি।

জন্মদিনের দিন কী উপদেশ দেবেন ছাত্রকে?

রাজকুমার: এ ভাবেই খেলে যাক। আরও অনেকদিন খেলুক। দেশকে সাফল্য এনে দিক। নিজের সেরাটা ধরে রাখুক। আর দেশকে ম্যাচ জেতাক। সব ফর্ম্যাটে দেশকে এক নম্বর জায়গায় নিয়ে যাক।

সব ছবি বিরাট কোহালির ফেসবুক পেজ থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE