Advertisement
০২ মে ২০২৪

বাবার ট্রফিটাই প্রেরণা বিশ্বসেরা সৌরভের

দক্ষিণ কলকাতার সাউথ সিটি গার্ডেনের সাততলায় তাঁর ফ্ল্যাটে যাওয়ার পরে দেখা গেল শুভেচ্ছার স্রোতে ভাসছেন।

দুরন্ত: বিশ্বসেরা পিতা-পুত্র। মনোজ ও সৌরভ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দুরন্ত: বিশ্বসেরা পিতা-পুত্র। মনোজ ও সৌরভ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

শমীক সরকার
শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৩১
Share: Save:

দক্ষিণ কলকাতার সাউথ সিটি গার্ডেনের সাততলায় তাঁর ফ্ল্যাটে যাওয়ার পরে দেখা গেল শুভেচ্ছার স্রোতে ভাসছেন। সদ্য বিলিয়ার্ডস বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সৌরভ কোঠারি তার মধ্যেই আড্ডা দিলেন আনন্দবাজারের সঙ্গে। পাশে ২৮ বছর আগে আর এক বিলিয়ার্ডস বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তাঁর বাবা মনোজ কোঠারি, আর মা নীতা।

এর আগেও অনেক পুরস্কার জিতেছেন। এ বার কলকাতায় ফেরার পরে কি রকম অভ্যর্থনা পেলেন, একটু অন্য রকম মনে হচ্ছিল?

সৌরভ বললেন, ‘‘অর্জুন পুরস্কার পেয়েছি, এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, কিন্তু এ বার কলকাতায় ফেরার পরে একেবারে অন্য রকম মনে হচ্ছিল। এত মানুষের শুভেচ্ছা পেয়ে আমি আপ্লুত। বুঝতে পারছিলাম ২৮ বছর আগে যখন বাবা বিশ্ব খেতাব জিতেছিলেন, তখন ওঁর কী রকম অনুভূতি হচ্ছিল। তবে আমার সবচেয়ে বড় পুরস্কার ফেরার পরে বাবা-মার মুখের হাসিটা।’’

বাবার পরে বিশ্বখেতাব জেতাটা ছেলে হিসেবে কতটা কঠিন ছিল?

সৌরভ বলে দেন, ‘‘বাবার ২৮ বছর আগে জেতা বিশ্বখেতাবটাই আমার প্রেরণা। কিন্তু একসময় আমি এয়ারপোর্টে বসে বসে কেঁদেছি। সামনে থেকে যে বিমানে আমার যাওয়ার কথা, চলে গিয়েছে, খেয়াল করতে পারিনি। এতটাই হতাশ ছিলাম। তখন অনেক প্রতিযোগিতায় কোয়ার্টার, সেমিফাইনালে উঠলেও সাফল্য আসছিল না। এই প্রত্যেকটা ব্যর্থতা থেকে শিখেছি। শিখেছি কখনও হারতে নেই। দশ-বারো বছর বয়স থেকে সবাই বলে আসছে, আমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো প্রতিভাবান। কিন্তু সেই জায়গায় আসতে পারছিলাম না। তবে আমার বাবা-মা সব সময় পাশে থেকেছে। কখনও ব্যর্থতার পরে আমাকে নিরুৎসাহ করেনি। কখনও বকাবকি করেনি। বাবা-মায়ের এই সমর্থনটাই আমাকে সবসময় এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।’’

সৌরভ আরও বলেন, ‘‘শুধু বাবার উৎসাহই নয়, ২০১৪ থেকে বাবা আমায় যে পরামর্শগুলো দিয়ে এসেছেন। সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে এসেছি। এর পর থেকেই অনেক উন্নতি করেছি। একের পর এক খেতাব পেয়েছি।’’ পাশ থেকে মনোজ কোঠারি বলে ওঠেন, ‘‘২০০৮ এ বিশ্বখেতাব জেতার সুযোগ ছিল সৌরভের। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে ও হেরে যায়। কিন্তু এ বার আমার মনে হচ্ছিল সৌরভ অন্য একটা মাত্রায় নিজেকে নিয়ে যেতে পারবে। কারণ এ বার ও দারুণ ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিল। আমি একটা কথা মানি। যদি কেউ একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে ‘প্রাইম ফোকাস’ করতে পারে, তা হলে তাঁকে আর কিছু করতে হবে না। প্রাইম ফোকাস মানে, সবকিছু উজাড় করে দিয়ে অনুশীলন। সৌরভ এ বার সেটা করেছে। আট ঘণ্টা টানা প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছে দিনের পর দিন। তার ফলই পেল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে’’

বিলিয়ার্ডস, স্নুকার এখনও ভারতে অতটা জনপ্রিয় নয়, বিশ্বখেতাব জিতে তরুণ প্রজন্মকে কী ভাবে উৎসাহিত করতে পারবেন বলে মনে হয়, প্রশ্ন করলে সৌরভ বলেন, ‘‘নেলসন ম্যান্ডেলা একটা কথা বলেছিলেন এক বার, ‘আমার ভিতরের আলো থাকলে, সেটা অন্যদেরও আলোকিত করবে।’ আমিও মনে করি, যদি আমি ভাল কিছু করতে পারি। তা হলে সেটা দেখে অন্যরাও এগিয়ে আসবে।’’ সৌরভ আরও বলেন, ‘‘লিডসে আমায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে দেখে, আমি নিশ্চিত ওখানকার ভারতীয় খেলোয়াড়রাও নিশ্চয়ই মনে মনে ভাবছিল, তাঁদেরও এক দিন এ ভাবে জিততে হবে। আমি নিজেও যেটা অনুভব করেছি। এ ভাবে যদি আমি এক জনকেও কিছুটা উৎসাহ দিতে পারি, তার চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Billiards Motivation Sourav Kothari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE