Advertisement
E-Paper

‘শতাব্দীর সেরা’ যুদ্ধে চাঁদের হাট লাস ভেগাস, তবু ভরিল না চিত্ত

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিমানবন্দর কোনটা? রবিবার কয়েক ঘণ্টার জন্য উত্তরটা স্রেফ লাস ভেগাস। পাখির চোখে দেখলে বিমানবন্দরে দাঁড়ানো প্রাইভেট জেটের সারির সঙ্গে সাইকেল স্ট্যান্ডের পার্থক্য পাওয়া যাবে না। মোট ৩০ কোটি ডলার। মানে, ১৯১১ কোটি টাকা! ‘শতাব্দীর সেরা’ তকমা পাওয়া বক্সিং-যুদ্ধের মোট মূল্য। ফ্লয়েড মেওয়েদার বনাম ম্যানি প্যাকিয়াও। লড়াই-পূর্ববর্তী চুক্তি অনুযায়ী দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ভাগ হয়েছে এই ৩০ কোটি। প্যাকিয়াও পেয়েছেন প্রায় ১০ কোটি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০৪:২৩
মেওয়েদারের কাছে হার মানলেন প্যাকিয়াও (ডান দিকে)। লাস ভেগাসে রবিবার। ছবি: এএফপি

মেওয়েদারের কাছে হার মানলেন প্যাকিয়াও (ডান দিকে)। লাস ভেগাসে রবিবার। ছবি: এএফপি

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিমানবন্দর কোনটা? রবিবার কয়েক ঘণ্টার জন্য উত্তরটা স্রেফ লাস ভেগাস। পাখির চোখে দেখলে বিমানবন্দরে দাঁড়ানো প্রাইভেট জেটের সারির সঙ্গে সাইকেল স্ট্যান্ডের পার্থক্য পাওয়া যাবে না। মোট ৩০ কোটি ডলার। মানে, ১৯১১ কোটি টাকা! ‘শতাব্দীর সেরা’ তকমা পাওয়া বক্সিং-যুদ্ধের মোট মূল্য। ফ্লয়েড মেওয়েদার বনাম ম্যানি প্যাকিয়াও। লড়াই-পূর্ববর্তী চুক্তি অনুযায়ী দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ভাগ হয়েছে এই ৩০ কোটি। প্যাকিয়াও পেয়েছেন প্রায় ১০ কোটি। আর মেওয়েদার প্রায় ২০ কোটি ডলার (ফলাফল যা-ই হোক, এই টাকাটাই পেতেন দু’জনে)! খেলাধুলোর দুনিয়ায় স্রেফ একটা বক্সিং বাউটে এত টাকা কোনও দিন পেয়েছেন কেউ? লিওনেল মেসির সারা বছরের মাইনে পাঁচ মিনিটে বা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর এক সপ্তাহের মাইনে মাত্র চার সেকেন্ডে জেতার সুযোগ কখনও এসেছে? উত্তর— ‘না’।

সেটাই এ বার করে দেখালেন মেওয়েদার। বারো রাউন্ডের লড়াইয়ের পর টানা ৪৭ ম্যাচ অপরাজিত এই মার্কিন বক্সারের কাছেই শেষ পর্যন্ত হার মানলেন ফিলিপিন্সের ‘হৃৎস্পন্দন’ প্যাকিয়াও। ওয়েল্টারওয়েট বক্সিংয়ে যিনি ৮টি বিভাগে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তবে ৩৬ মিনিটের যুদ্ধের শেষে পরিসংখ্যান গেল মেওয়েদারের পক্ষে— ১১৮-১১০, ১১৬-১১২, ১১৬-১১২।

অবশ্য যুদ্ধটা শুধু মেওয়েদার জিতলেন বললে ভুল হবে। একটা বক্সিং ম্যাচ ঘিরে দুনিয়া-জোড়া এমন উন্মাদনা সেই টাইসন-হোলিফিল্ড যুগের পর খুব একটা দেখা যায়নি। আর দুই চ্যাম্পিয়ন বক্সার? তাঁরাও তো কেরিয়ারের সায়াহ্নে। গত পাঁচ বছর ধরে দু’জনকে রিংয়ে নামানোর চেষ্টা চলেছে, প্রবল চাপ এসেছে ভক্তদের তরফেও। তবু ব্যাপারটা হতে হতেও হয়ে ওঠেনি। রবিবার যে শেষ পর্যন্ত হল, তার কৃতিত্বটা সংগঠকরাই পাচ্ছেন। ৩০ কোটি ডলার উঠেছে। তারকা-সমাবেশেও উৎসাহের সুনামি। আর কী চাই?

অস্কার, গ্র্যামি, এমি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেরা তিনটে উৎসবের দ্যুতি যোগ করুন। যে জৌলুস ধরা পড়বে, তার সঙ্গেই তুলনা হচ্ছিল রবিবারের এমজিএম এরিনাকে। অভিনয়, ফ্যাশন, ক্রীড়া, সঙ্গীত জগতের হু’জ হু-দের কে ছিলেন না রবিবারের ‘সিন সিটি’তে— ডেনজেল ওয়াশিংটন, বেন অ্যাফ্লেক, রবার্ট ডি নিরো, ড্রিউ ব্যারিমোর, জাস্টিন বিবার, বিয়ন্সে, জেজে, প্যারিস হিলটন, স্টেফি গ্রাফ, আন্দ্রে আগাসি... ইত্যাদি ইত্যাদি।

আয়োজনের ত্রুটি ছিল না। কিন্তু এর পরেই অবধারিত যে প্রশ্নটা উঠবে— মহাযুদ্ধের পয়সা উসুল হল কি? খোঁচাটা এখানেই। কোনও সার্বিক মুগ্ধতার প্রতিচ্ছবি কিন্তু নেই। ‘মানি’ বনাম ‘প্যাকম্যান’ (যথাক্রমে মেওয়েদার ও প্যাকিয়াওয়ের প্রসিদ্ধ ডাকনাম) লড়াই শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আছড়ে পড়ল মাইক টাইসনের গরগরে টুইট— ‘এই ম্যাচটার জন্য পাঁচ বছর অপেক্ষা করেছিলাম... চূড়ান্ত হতাশ।’’ অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী ভারতের বক্সার বিজেন্দ্র সিংহ বললেন, ‘‘যে হাইপ উঠেছিল সে রকম বাউট হয়নি।’’ কেউ লিখলেন, ‘মেওয়েদার অসাধারণ লড়ে। কিন্তু এই লড়াইটা প্রচণ্ড একঘেয়ে লেগেছে।’ কেউ আবার লিখলেন, ‘এ বার কি বিয়ন্সে পারফর্ম করবে? না হলে তো...।’

ঠিক ফ্লপ শো না হলেও লড়াইটা যে ‘মাঝারি’ মানের হয়েছে, এ ব্যাপারে খুব একটা দ্বিমত নেই। কিন্তু এমনটাই কি হওয়ার ছিল?

গত সপ্তাহে প্যাকিয়াওয়ের ট্রেনার ফ্রেডি রোচ বলেছিলেন, ‘এটা ঠিকই যে, ওরা এখন সেরা সময় পেরিয়ে এসেছে। কিন্তু সেটাই কিন্তু আরও বড় ব্যাপার হয়ে উঠতে পারে।’’ আটত্রিশের মেওয়েদার দু’দশক আগে আটলান্টা অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। তাঁর আর ছত্রিশের প্যাকম্যানের বছর পাঁচেক আগে যখন মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল, তখন দু’জনই কেরিয়ারের তুঙ্গে। কিন্তু লড়াইটা হয়নি, দু’পক্ষেই কিছু বিষয় নিয়ে মতান্তর থাকায়। মেওয়েদার শিবিরের দাবি ছিল, যখন খুশি ডোপ পরীক্ষার নিয়ম মানতে হবে প্যাকিয়াওকে। কিন্তু শরীরে সুচ ফোটানো নিয়ে তীব্র ভয় থাকা ফিলিপাইন বক্সার তাতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত গত জানুয়ারিতে এক বাস্কেটবল ম্যাচে দর্শকাসনে দু’জনের দেখা হয়। তার পরই রিংয়ে মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারটা আবার ওঠে। দু’পক্ষই এ বার রাজি হয়ে যান।

মেওয়েদারকে একটাই প্রশ্ন তাড়া করে বেরিয়েছিল এত দিন। কেন তিনি প্যাকিয়াওয়ের মুখোমুখি হতে চান না? উত্তরটা লড়াইয়ে নামার আগে দিয়েছিলেন মেওয়েদার— ‘‘দর্শকদের চাপে বাধ্য না হলে রিংয়ে ওর মুখোমুখি হব না ঠিক করেছিলাম। আর পাঁচ বছর আগে হলে এই লড়াইটা লড়েই আমি পেতাম ৫ কোটি আর প্যাকিয়াও ২ কোটি।’’ তা হলে কি কেরিয়ারের শেষে বড় দাঁও মারবেন বলেই এত দিন অপেক্ষা করছিলেন? গভীর তাৎপর্যপূর্ণ শোনাচ্ছে মার্কিন বক্সারের ডাকনাম, ‘মানি’। যাঁর শখ সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের একটা বিশেষ ‘পোজ’-এর ছবি পোস্ট করা— টাকার বিছানায় শুয়ে! রবিবারের পর ‘মানি’র অপরাজিত রেকর্ড দাঁড়াল দাঁড়াল ৪৮-০। আগেই বলেছিলেন এর পর আর একটা শেষ লড়াইয়ে নামবেন। তার পরই অবসর। তবে অনেকেই, বিশেষত ফিলিপিন্সের অনেকেরই অভিযোগ, নিজের অপরাজিত রেকর্ডটা ধরে রাখবেন বলেই সেরা সময়ের প্যাকিয়াওকে এড়িয়ে গেলেন মেওয়েদার।

ফিলিপিন্সবাসীর চোখে অবশ্য জিতেছেন তাঁদের নায়কই। ৪০ ডিগ্রির গরমেও স্টেডিয়াম, পার্ক, সিনেমা হলের স্ক্রিনে প্যাকিয়াওয়ের লড়াই দেখতে ভিড় করেছেন তাঁরা। প্যাকম্যান তো শুধুই বক্সার নন— একাধারে ফিলিপিন্সের সাংসদ, গায়ক, বাস্কেটবল কোচ (এমনকী সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দৌড়ে রয়েছেন)। ম্যানিলার বছর উনিশের ছাত্র থেকে চল্লিশের শপিংমল কর্মচারীও ক্ষোভে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন, ‘আমরা একেবারেই এই ফল মানছি না। প্যাকম্যান তো একাই লড়াই করে গেল। বদলে কিছুই পেল না। আমরা চাই লড়াইটা ফের হোক।’ দাবিটা প্যাকম্যানের টিমের তরফেও উঠেছে। তাঁদের বক্তব্য, ডান কাঁধে চোটের জন্য একটা হাত প্রায় নাড়াতেই পারেননি প্যাকিয়াও। চোটটা কিছুদিন আগেই লেগেছিল। দিন দু’য়েক জিমেও যেতে পারেননি। তাই সম্পূর্ণ সুস্থ প্যাকিয়াওয়ের সঙ্গে ফের মেওয়েদারের লড়াইয়ের দাবি জোরালো হচ্ছে। এ দিকে পাক বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বক্সার আমির খান বলে দিয়েছেন, তিনি চ্যালেঞ্জ করতে চান মেওয়েদারকে।

মেওয়েদারের কেরিয়ারের শেষ লড়াই তা হলে কোনটা? আমির খান না আবার প্যাকিয়াও? যে-ই হোন, নতুন লড়াইয়ের কাউন্টডাউন কিন্তু শুরু হয়ে গেল।

Floyd Mayweather vs Manny Pacquiao result Floyd Mayweather vs Manny Pacquiao fight fight of the century lasvegas fight Manny Pacquiao lost Floyd Mayweather won abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy