Advertisement
E-Paper

কর্তা-মন্ত্রীদের ঘেরাটোপে মেসি! চড়া দামে টিকিট কেটেও বঞ্চিত দর্শকেরা, যুবভারতীতে বোতল পড়ল মাঠে, ভাঙল চেয়ার-ফেন্সিং

লিয়োনেল মেসি যুবভারতীতে পৌঁছোতেই অন্তত ৭০-৮০ জন মানুষের ভিড় ঘিরে ধরে তাঁকে। ফলে গ্যালারি থেকে তাঁকে দেখা যাচ্ছিল না। টিকিট কেটে মেসিকে দেখতে যাওয়া ফুটবলপ্রেমীদের ভরসা ছিল স্টেডিয়ামের তিনটি জায়ান্ট স্ক্রিন।

অনির্বাণ মজুমদার ও শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৫৭
picture of Lionel Messi

যুবভারতীতে লিয়োনেল মেসির সঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র।

যুবভারতীতে ঢোকা থেকেই লিয়োনেল মেসিকে ঘিরে রইলেন কর্তা-মন্ত্রীরা। মোটা টাকায় টিকিট কেটে গিয়েও প্রিয় তারকাকে দেখতে না-পাওয়া দর্শকদের ক্ষোভ আছড়ে পড়ল মাঠে। বোতল পড়ল। গ্যালারির চেয়ার ভেঙে ভেঙে মাঠে ফেলা হল। ফেন্সিংয়ের গেট ভেঙে শয়ে শয়ে দর্শক ঢুকে পড়লেন মাঠে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাঁদের ফেরানোর চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। কার্যত রণে ভঙ্গই দিতে হয়েছে নিরাপত্তারক্ষীদের। সব মিলিয়ে লন্ডভন্ড যুবভারতী স্টেডিয়াম।

শনিবার ঠিক সকাল ১১.৩০ মিনিটে যুবভারতীর মাঠে ঢোকে মেসির গাড়ি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ় এবং রদ্রিগো ডি’পল। ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনা দেখে উচ্ছ্বসিত দেখায় মেসিকে। তবে গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু মানুষ ঘিরে ধরেন তাঁকে। ফলে গ্যালারি থেকে শুধু মেসিকে নয়, লুইস সুয়ারেজ় এবং রদ্রিগো ডি’পলকেও দেখা যায়নি। এক সময় ক্ষুব্ধ ফুটবলপ্রেমীরা ‘উই ওয়ান্ট মেসি’ স্লোগান দিতে শুরু করেন।

ক্ষুব্ধ ফুটবলপ্রেমীদের দখলে যুবভারতীর মাঠ।

ক্ষুব্ধ ফুটবলপ্রেমীদের দখলে যুবভারতীর মাঠ। — নিজস্ব চিত্র।

মেসি যুবভারতীতে পৌঁছোতেই অন্তত ৭০-৮০ জন মানুষের ভিড় ঘিরে ধরে তাঁকে। মূলত মন্ত্রী, কর্তারাই ঘিরে ধরেন মেসিকে। অনেকে প্রায় প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের মতো এলএম টেনের শরীরে ঘেঁষে ছিলেন। মেসিকে ভাল করে হাঁটার জায়গাটুকুও দিচ্ছিলেন না কেউ কেউ! ক্যামেরা এবং মোবাইল হাতে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মেসিকে ঘিরে রাখেন নিরাপত্তারক্ষীরা। অপ্রীতিকর কোনও পরিস্থিতি তৈরি না হলেও তাঁরা আয়োজকদের ভিড় সরানোর অনুরোধ করেন। গ্যালারি থেকে তাঁকে দেখা যাচ্ছিল না। টিকিট কেটে মেসিকে দেখতে যাওয়া ফুটবলপ্রেমীদের ভরসা ছিল স্টেডিয়ামের তিনটি জায়ান্ট স্ক্রিন।

মোহনবাগান এবং ডায়মন্ড হারবারের প্রাক্তন ফুটবলারদের সঙ্গে মেসি পরিচিত হওয়ার সময়ও ভিড় ঘিরে ছিল তাঁকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং প্রধান আয়োজক শতদ্রু দত্তকে মাইক্রোফোনে ঘোষণা করতে হয়। তাতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। কারণ, মেসি যে ১৬-১৭ মিনিট মাঠে ছিলেন, সেই সময় গ্যালারি থেকে এক বারও দেখা যায়নি তাঁকে।

গ্যালারির চেয়ার যুবভারতীর মাঠে।

গ্যালারির চেয়ার যুবভারতীর মাঠে। — নিজস্ব চিত্র।

১১.৫২ মিনিটে মেসিকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয়। তখনও পর্যন্ত মাঠে এসে পৌঁছোননি মুুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শাহরুখ খান বা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আর্জেন্টিনার তারকা মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মোটা টাকায় টিকিট কিনে মাঠে এসেও মেসিকে দেখতে না পাওয়ায় ফুটবলপ্রেমীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শুরু হয় গ্যালারিতে লাগানো হোর্ডিং ভাঙচুর। পরে গ্যালারির চেয়ার ভেঙে মাঠে ছুড়তে শুরু করেন ক্ষুব্ধ ফুটবলপ্রেমীরা। মাঠে পড়তে শুরু করে বোতল। এই সময় গ্যালারিতে কোনও পুলিশকর্মীকে দেখা যায়নি। মেসিকে দেখতে না পাওয়ার হতাশায় ক্রমশ বাড়তে থাকে উত্তেজনা। এক সময় মাঠের ধারে ফেন্সিংয়ের গেট ভেঙে হু-হু করে মাঠে লোক ঢুকতে শুরু করে। প্রথমে পুলিশ ছিল দিশাহারা। কিছুটা পর সম্বিত ফেরে পুলিশকর্মীদের। লাঠি উঁচিয়ে ক্ষুব্ধ জনতাকে তাড়া করে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ফুটবলপ্রেমীরা আবার মাঠে ফিরে আসেন। সব মিলিয়ে যুবভারতী রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়।

মাঠের দখল নিয়ে নেয় অন্তত হাজার দুয়েক লোক। মাঠে ঢুকে কেউ ডিগবাজি খেয়েছেন, কেউ নিজস্বী তুলেছেন, কেউ আবার লাফিয়েছেন। কয়েক জনের হাতে দেখা গিয়েছে গেরুয়া পতাকাও। বলা ভাল, যুবভারতীর মাঠে যে যা খুশি করেছেন। শেষ পর্যন্ত র‌্যাফ নামাতে হয় গ্যালারিতে। ব্যবহার করতে হয় কাঁদানে গ্যাস। পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। মেসি বিমানবন্দরের পথে রওনা হয়ে যাওয়ার পরও যুবভারতীয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি পুলিশ-প্রশাসন।

ফুটবলপ্রেমীদের ক্ষোভ মূলত নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। তাঁরা ফুটবলের রাজপুত্রকে ঘিরে থাকার জন্যই গ্যালারি থেকে তাঁকে দেখা যায়নি। চড়া দামে টিকিট কিনেও মেসিকে তাঁদের দেখা হল না। অনেকের বক্তব্য, ফাঁকা মাঠে কয়েক জন নিরাপত্তারক্ষীকে দিয়ে মেসিকে মাঠের চার দিকে মিনিট পাঁচেক ঘোরালেই সকলে ভাল করে দেখতে পেতেন। কিন্তু তেমন কোনও ব্যবস্থাই করা হয়নি। মাঠের মাঝখানে ৭০-৮০ জন লোক মেসিকে ঘিরে রেখে সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের বঞ্চিত করেছেন। অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু পরিকল্পনাহীনতার ছাপ দেখা গিয়েছে। সব মিলিয়ে মেসির সফর ঘিরে লজ্জায় পড়তে হল কলকাতাকে।

Lionel Messi Yuba Bharati Krirangan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy