Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Qatar World Cup 2022

মাঠে নাচ থামবে না তাঁর দলের, হুঙ্কার তিতের কণ্ঠে

বৃহস্পতিবার দুপুরে দোহার কাতার কনভেনশন সেন্টারে তিতে ঢুকলেন হাতে দশ নম্বর লেখা একটি ব্যাগ নিয়ে, কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে।

সাধনা: শেষ আটের চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে নেমার। বৃহস্পতিবার।

সাধনা: শেষ আটের চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে নেমার। বৃহস্পতিবার। ছবি রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:০০
Share: Save:

দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে ৪-১ গোলে জয় নাকি নেমার দা সিলভা স্যান্টোস জুনিয়রের রূপকথার প্রত্যাবর্তন? ব্রাজিলের বদলে যাওয়ার আসল রহস্য কী?

আজ, শুক্রবার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে শেষ আটের দ্বৈরথে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের প্রতিপক্ষ গত বারের রানার্স ক্রোয়েশিয়া। অথচ ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে ব্রাজিলের কোচ ও ফুটবলারদের দেখে তা বোঝার উপায় নেই।

প্রতিপক্ষকে নিয়ে আলোচনার চেয়েও তিতে বেশি আগ্রহী ছিলেন নাচ নিয়ে ক্রমাগত বিতর্ক তৈরি করে চলা সংবাদমাধ্যমের একাংশকে ব্রাজিলীয় সংস্কৃতির পাঠ শেখাতে! জানিয়ে দিলেন যতই সমালোচনা হোক, তিনি আবার ফুটবলারদের সঙ্গে নাচবেন!

বৃহস্পতিবার দুপুরে দোহার কাতার কনভেনশন সেন্টারে তিতে ঢুকলেন হাতে দশ নম্বর লেখা একটি ব্যাগ নিয়ে, কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে। মঞ্চে উঠে নিজের চেয়ারে না বসে তিনি ডেকে নিলেন পরিচিত সাংবাদিককে। তাঁর হাতেই তুলে দিলেন ব্যাগ। কী ব্যাপার? আপ্লুত ব্রাজিলের সেই সাংবাদিক বলছিলেন, ‘‘দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের পরেই তিতের কাছে ব্রাজিলের জার্সি চেয়েছিলাম। আমাকে বলেছিলেন, ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের আগে সাংবাদিক বৈঠকে নিয়ে আসবেন। ভাবতে পারিনি ওঁর মতো ব্যস্ত কোচ আমার কথা মনে রাখবেন। আমার জীবনের সেরা পুরস্কার পেলাম। ধন্যবাদ তিতে।’’

ব্রাজিল ফুটবলে তিতেকে ‘প্রফেসর’ বলে ডাকেন সকলে। ব্যতিক্রম নন ফিফার আধিকারিকরাও। প্রখর ফুটবলবুদ্ধি ও কড়া মানসিকতার জন্যই তাঁর এই নামকরণ, জানালেন ব্রাজিলের সাংবাদিকরা। এই কারণেই বৃহস্পতিবার মিশরের এক সাংবাদিক যখন প্রশ্ন করলেন, ব্রাজিলের উৎসবের ভঙ্গি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এর পরেও কি আপনি ফুটবলারদের সঙ্গে নাচবেন? প্রশ্ন কর্তার দিকে সরাসরি তাকিয়ে তিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘কী যেন নাম আপনি বললেন? মনে পড়েছে, মাহমুদ। আপনাকে বলতে চাই, ব্রাজিলের ইতিহাস, সংস্কৃতি, জীবনযাপন সম্পর্কে যাঁদের কোনও ধারণা নেই, তাঁরাই অকারণে বিতর্ক তৈরি করছেন। ব্রাজিলীয়রা সবার ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করে। এটাই ব্রাজিলের সংস্কৃতি।’’ এর পরেই যোগ করেন, ‘‘সম্ভব হলে আমি আবারও নাচব। তবে আমাকে আরও অনুশীলন করতে হবে। কারণ, কাঁধ এখনও শক্ত হয়ে রয়েছে। নাচার মতো নমনীয় নয়। আমার বয়স ৬১। আমাদের দলে ২০-২১ বছর বয়সি ফুটবলার যারা রয়েছে, তারা আমার নাতির মতোই। ওদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য যদি আমাকে নাচতে হয়, তা হলে ভবিষ্যতেও তাই করব। ব্রাজিলের স্কুলে ছোটবেলা থেকেই ছেলে-মেয়েদের সাম্বা শেখানো হয়।’’

তার আগে ভিনিসিয়াসও বলে দিয়েছেন, ‘‘আমরা ব্রাজিলীয়রা আনন্দ করতে ভালবাসি। জীবন উপভোগ করি। ফুটবলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল করা। বিশ্বকাপে তা আরও বেশি। গোলের মুহূর্তটা শুধু ফুটবলারদের নয়, সমগ্র ব্রাজিলবাসীর কাছেও উৎসবের মতো। আমাদের আরও অনেক উৎসব বাকি রয়েছে। এই কারণেই ভাল খেলা ও ফুরফুরে মেজাজে থাকাটা জরুরি।’’

তিতের জবাবে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি হতে পারেননি মাহমুদ। আশা করেছিলেন ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ়্লাতকো দালিচ নিশ্চয়ই তাঁর পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু তিনিও হতাশ করলেন। বলে দিলেন, ‘‘ব্রাজিলের ফুটবলাররা নিজেদের সংস্কৃতি অনুযায়ী উৎসব করেছে। আমি এর মধ্যে অন্যায়ের কিছু দেখি না। তা ছাড়া ওদের নাচ বেশ উপভোগই করেছি।’’ যোগ করেন, ‘‘তবে আমার দলের ছেলেরা এ ভাবে উৎসব করলে ভাল লাগত না।’’

নাচের ছন্দেই শুক্রবার ক্রোয়েশিয়াকে উড়িয়ে শেষ চারে ওঠার পরিকল্পনা ব্রাজিলের। কোনও রকম রাখঢাক না রেখেই তিতের পাশে বসে ডিফেন্ডার দানিলো বললেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তুলে গোল করে এগিয়ে যাওয়া। যাতে চাপমুক্ত হয়ে বাকি ম্যাচটা খেলা যায়।’’

ব্রাজিলের এই রণকৌশল নিয়েই উদ্বেগ বাড়ছে ক্রোয়েশিয়া শিবিরে। অধিনায়ক লুকা মদ্রিচ বলছিলেন, ‘‘বিশ্বকাপে সব সময়ই খেতাবের অন্যতম দাবিদার হিসেবে খেলতে আসে ব্রাজিল। এ বারও ব্যতিক্রম হয়নি। এই রকম শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শুধু নিজেদের উজাড় করে দিলেই হবে না। জীবনের সেরা ম্যাচটাও খেলতে হবে। না হলে জেতার আশা নেই।’’

ব্রাজিল শিবিরে ফুরফুরে মেজাজের আরও একটা কারণ, ফুটবলাররা সকলেই চোটমুক্ত ও চনমনে। আলেক্স সান্দ্রোকে নিয়ে যে সামান্য চিন্তা ছিল তিতের, তাও দূর হয়েছে ব্রাজিলীয় ডিফেন্ডার পুরোদমে অনুশীলন করায়। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় আল আরবি স্পোর্টস ক্লাবের স্টেডিয়ামে অনুশীলন শুরুর আগে নেমাররা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন নাচের মহড়ায়! মাঠের মাঝখানে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে দিতে নাচ শুরু করলেন। আসলে ওয়ার্ম-আপ। ব্রাজিলের এক সাংবাদিক বললেন, ‘‘আমরা ব্রাজিলীয়রা সব কিছুর মধ্যেই ছন্দ খুঁজি। ফুটবলেও তার ব্যতিক্রম হয় না। এই কারণেই আমাদের খেলা এত আকর্ষণীয়।’’

ছন্দে থাকা ব্রাজিল কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, দক্ষিণ কোরিয়া শেষ ষোলোর ম্যাচেই হাড়েহাড়ে বুঝেছিল। এ বার কি ক্রোয়েশিয়ার পালা? দেখার অপেক্ষায় ফুটবলবিশ্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE