Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Pele died

পেলের সঙ্গে খেলার সেই মুহূর্ত জীবনের অমূল্য স্মৃতি

ফুটবলজীবনে আমি কখনওই প্রতিপক্ষকে সমীহ করিনি। ফুটবল মাঠকে আমি মনে করতাম রণাঙ্গন। বিপক্ষ দল আমাদের শত্রু।

স্মৃতি: ইডেনে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে পেলে। ফাইল চিত্র

স্মৃতি: ইডেনে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে পেলে। ফাইল চিত্র

মহম্মদ হাবিব
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:২৯
Share: Save:

স্মৃতি দীর্ঘ দিন ধরেই আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা শুরু করেছে। অসুস্থতার কারণে অতীতের অধিকাংশ স্মৃতিই মন থেকে পুরোপুরি মুছে গিয়েছে। তবে এখনও ভুলিনি পেলের বিরুদ্ধে খেলার মুহূ্র্ত।

ফুটবলজীবনে আমি কখনওই প্রতিপক্ষকে সমীহ করিনি। ফুটবল মাঠকে আমি মনে করতাম রণাঙ্গন। বিপক্ষ দল আমাদের শত্রু। পেলের নিউ ইয়র্ক কসমসের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগেও আমার এই দর্শন বদলায়নি। মোহনবাগানে আমার সতীর্থদের যখন দেখলাম ফুটবল সম্রাটের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়ে নিজেদের ধন্য মনে করছে, রাগে শরীরে জ্বালা ধরে গিয়েছিল। ফুটবলার পেলে আমার কাছেও পূজিত ছিলেন। মুগ্ধ হয়ে ফুটবল সম্রাটের খেলার অসংখ্য ভিডিয়ো দেখেছি। কিন্তু ধীরেনদা (মোহনবাগানের তৎকালীন সর্বময় কর্তা প্রয়াত ধীরেন দে) যখন বললেন, নিউ ইয়র্ক কসমসের হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে খেলতে কলকাতায় আসছেন পেলে, তখন থেকেই মনের মধ্যে আগুন জ্বলতে শুরু করেছিল। পেলে ফুটবল সম্রাট। বিশ্বের সর্বকালের শ্রেষ্ট ফুটবলার। কিন্তু ম্যাচে তিনি আমাদের প্রতিপক্ষই। মাঠে ওঁকে কোনও অবস্থাতেই ছাড়ব না।

পেলে আসছেন চূড়ান্ত হওয়ার পরেই প্রদীপদা (পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়) বিশেষ অনুশীলন শুরু করে দিয়েছিলেন। ফুটবল সম্রাট কী ভাবে খেলেন, তা বারবার বিশ্লেষণ তো করতেনই, পাশাপাশি খেলার বিভিন্ন ক্লিপিংস দেখাতেন। গৌতমকে (সরকার) দায়িত্ব দিয়েছিলেন মাঠে সর্বক্ষণ পেলের সঙ্গে ছায়ার মতো ঘুরতে। আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘‘পেলেকে আটকানোর পরিকল্পনা কী তোমার?’’ সকলের সামনেই বলেছিলাম, পেলেকে বল নিয়ে উঠতে দেব না। বল ধরলেই কড়া ট্যাকল করব। এক ইঞ্চি জমিওছাড়ব না।

আমার হুঙ্কার শুনে সতীর্থদের সকলেই বিস্মিত হয়েছিল। কেউ কেউ আমাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেওছিল, ‘‘তুমি হয়তো ভুলে গিয়েছ, পেলের বিরুদ্ধে খেলব আমরা। ফুটবল সম্রাটকে আটকাতে গিয়ে বিশ্বের সেরা ডিফেন্ডাররাও হিমশিম খেয়েছেন।’’ আমি প্রচণ্ড রেগে বলেছিলাম, এই মানসিকতা নিয়ে খেলতে নামলে আমরা লড়াই করতেই পারব না। পেলে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার তো কী হয়েছে? মাঠে নেমে প্রমাণ করতে হবে, আমরা কাউকে ভয় পাই না। আমার কথা শুনে প্রদীপদা জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘‘সাবাস বড়ে মিয়াঁ...তুমি শুধু ফুটবলার নও, বীর যোদ্ধাও।’’ এখনও মনে আছে সে দিন মাঠে নামার আগে কয়েক জন সতীর্থ পেলের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। ওদের ধমক দিয়ে বলি, পেলে ভক্ত হয়ে মাঠে নামার দরকার নেই। ওরা আমার কথা শুনেছিল।

ম্যাচটা ২-২ ড্র হয়েছিল। সম্ভবত মোহনবাগানের হয়ে শ্যামই (থাপা) প্রথম গোল করেছিল। আমি করেছিলাম দ্বিতীয় গোল। আমরা হয়তো জিততেও পারতাম ম্যাচটা। সেই রাতেই গ্র্যান্ড হোটেলে নৈশভোজে আমি ম্যাচের আগে কী বলেছিলাম সতীর্থদের, পেলেকে জানিয়েছিলেন কেউ। ফুটবল সম্রাট খুবই খুশি হয়েছিলেন। অনুবাদকের মাধ্যমে আমার মানসিকতার প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘‘প্রতিপক্ষ যত শক্তিশালীই হোক না কেন, কখনও লড়াই বন্ধ করতে নেই। নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশও করা উচিত নয়। চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে হবে।’’ ফুটবল সম্রাটও লড়াই করছিলেন মারণ ব্যধির সঙ্গে। ভেবেছিলাম ব্রাজিলকে তিন বার বিশ্বসেরা করার মতো এ বারও বিজয়ীর হাসি হাসবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরেই গেলেন ফুটবল সম্রাট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE