ভারতীয় ফুটবলে নতুন যুগের সূচনা। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা রায়ান উইলিয়ামস এ বার ভারতীয় ফুটবল দলের জার্সিতে অভিষেকের অপেক্ষায়। এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি শিবিরে ডাক পেয়েছেন বলিভিয়ার প্রথম ডিভিশনের ক্লাব অ্যাকাডেমিয়া ডেল বলোমপিতে খেলা অবনীত ভারতীও।
এআইএফএ সভাপতি হওয়ার পরেই কল্যাণ চৌবে জানিয়েছিলেন, ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির লক্ষ্যে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খেলা ভারতের পাসপোর্ট রয়েছে এ রকম ফুটবলারদের জাতীয় দলে খেলাতে চান। রায়ান ও অবনীতের অন্তর্ভুক্তি সেই পরিকল্পনা রূপায়ণের পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।
রায়ান-অবনীতের পরে লক্ষ্য কারা? ফেডারেশন সভাপতি জানালেন, ফুটবলে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আনন্দবাজারকে ফোনে তিনি বললেন, ‘‘ব্রাজিল থেকে শুরু করে ফুটবলে উন্নত বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূতকে লিখিত ভাবে অনুরোধ করা হয়েছে, শুধুমাত্র ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে এ রকম ফুটবলারদের তালিকা তৈরি করতে। কারণ, ওসিআই এবং পিওআই অনুমোদন করে না ফিফা। শুধু মাত্র ভারতীয় পাসপোর্টই অনুমোদন করে। সম্প্রতি প্যারাগুয়ে গিয়েছিলাম ফিফা কংগ্রেসে যোগ দিতে। গিয়েছিলাম নিউ জ়িল্যান্ডেও। প্যারাগুয়েতে বসবাসকারী ভারতীয়দের অনুরোধ করেছি ফুটবলারদের খোঁজ দেওয়ার জন্য। নিউ জ়িল্যান্ডে আলোচনা করেছি সরকারি স্তরে।’’
ভারতের দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলে একাধিক ফুটবলার রয়েছেন যাঁরা জন্মেছেন বিদেশে। খেলেনও বিদেশের ক্লাবে। সেরা উদাহরণ হামজ়া চৌধুরী। ইপিএলে খেলা এই ফুটবলারের অন্তর্ভুক্তি বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় দলকে। কিন্তু ভারত দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে না। এই নিয়মের জালেই আটকে গিয়েছিল মাইকেল চোপড়া, বিকাশ ধরাসুর মতো তারকাদের ভারতের হয়ে খেলার সম্ভাবনা। কারণ, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের নাগরিকত্ব ছাড়তে রাজি হননি তাঁরা।
রায়ান কী ভাবে রাজি হলেন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব ছাড়তে? এই কাহিনির নেপথ্যে অন্যতম কারিগর হলেন সুনীল ছেত্রী! অস্ট্রেলিয়ার সুবিয়াকোতে জন্ম ৩২ বছর বয়সি রায়ানের। কিন্তু তাঁর মা অড্রে ভারতীয়। থাকতেন মুম্বইয়ে। রায়ানের দাদু (মায়ের বাবা) লিঙ্কন মুম্বইয়ের হয়ে সন্তোষ ট্রফিতেও খেলেছেন। রায়ানের ফুটবল শুরু অস্ট্রেলিয়ার পার্থ রেড স্টার এফসি-তে। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তুরস্কে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপেও খেলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার সিনিয়র দলেও সুযোগ পেয়েছেন। খেলেছেন ইংল্যান্ডের একাধিক ক্লাবেও।
২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ গ্লোরি ছেড়ে রায়ান যোগ দেন বেঙ্গালুর এফসি-তে। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব ছেড়ে বুধবারই ভারতীয় পাসপোর্ট পেয়েছেন। ভারতের হয়ে রায়ানকে খেলতে রাজি করানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বেশ কয়েক মাস আগে। নিউ টাউনে ফেডারেশনের উৎকর্ষ কেন্দ্রে ভারতীয় দলের প্রস্তুতি দেখতে এসেছিলেন কল্যাণ। সেখানেই সুনীল তাঁকে জানান, রায়ান ভারতীয় পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে ওর ফাইল দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে রয়েছে। এই ঘটনা জানার পরে ফেডারেশন সভাপতিই উদ্যোগ নেন দিল্লিতে ফাইল নিয়ে আসার। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতরের ছাড়পত্র পাওয়ার পরে অবশেষে বৃহস্পতিবার ভারতের নাগরিকত্ব পেলেন রায়ান।
শেষ চারে মুম্বই: কেরল ব্লাস্টার্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে সুপার কাপের শেষ চারে পৌঁছে গেল মুম্বই সিটি এফসি। ৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুম্বইয়ের প্রতিপক্ষ এফসি গোয়া। ৮৮ মিনিটে আত্মঘাতী গোল করেন ফ্রেডি লাল্লায়োমাওয়মা। কেরল এবং মুম্বই দু’দলেরই অর্জিত পয়েন্ট ছয়। কিন্তু মুখোমুখি সাক্ষাতে জিতে শেষ চারে মুম্বই। বৃহস্পতিবার রাজস্থান ইউনাইটেড বনাম স্পোর্টিং ক্লাব দিল্লি ম্যাচ ২-২ শেষ হয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)