Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Surajit Sengupta

Surajit Sengupta: কীভাবে আটকাব, বুঝতেই পারিনি

সুরজিৎদার সঙ্গে এক দলে ও বিপক্ষে অনেক ম্যাচ খেলেছি। তাতেই বুঝেছিলাম যে ও আপাদমস্তক ভদ্র ছেলে। মাঠে মারপিট, গালাগাল থেকে শতহস্ত দূরে থাকে। এটাই তখন আমরা অস্ত্র করতে শুরু করলাম।

অমর: সুরজিৎ সেনগুপ্ত চলে গেলেন। কিন্তু বাংলার অসংখ্য ফুটবলপ্রেমীর মনে থেকে যাবে এই সব ছবি। ময়দানে তখন সুর-ঝঙ্কার চলত।

অমর: সুরজিৎ সেনগুপ্ত চলে গেলেন। কিন্তু বাংলার অসংখ্য ফুটবলপ্রেমীর মনে থেকে যাবে এই সব ছবি। ময়দানে তখন সুর-ঝঙ্কার চলত। ফাইল চিত্র।

সুব্রত ভট্টাচার্য
সুব্রত ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:১৭
Share: Save:

গত মাসে চলে গিয়েছিল আমার বন্ধু ও দাদা সুভাষ ভৌমিক। বৃহস্পতিবার দুপুরে ধেয়ে এল আরও একটা দুঃসংবাদ। এ বার আমাকে ছেড়ে চলে গেল ময়দানে আমার এক দাদাস্থানীয় বন্ধু সুরজিৎ সেনগুপ্ত। জানি না কী হচ্ছে চার দিকে। আর কত প্রিয়জন ছেড়ে চলে যাবে।

গল্ফগ্রিনে আমার চার-পাঁচটা বাড়ির পরেই থাকত ও। আমার বাড়ির সামনে দিয়েই যাতায়াত করত। দেখা হলেই ডেকে নিয়ে বাড়িতে চায়ের আড্ডায় বসে যেতাম। দেদার গল্প হত আমাদের দু’জনের। শেষ কথা সুভাষদা মারা যাওয়ার দিনেই। আমি ফোন করার পরে বলল, ‘‘বাবলু কোভিডে ধরেছে রে। তবে চিন্তা করিস না। আমি সেরে উঠব।’’ কিন্তু সুরজিৎদা আর ফিরে এল না। এ দিন ওর কথাগুলোই কানে বাজছিল।

আমি বড় হয়েছি উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরে। আর সুরজিৎদা গঙ্গার ও পারে হুগলিতে। মনে আছে, ১৯৭১ সালে আমাদের প্রথম মাঠে মুখোমুখি হওয়া। সেটা জেলা লিগের খেলা ছিল। আমি তখন কলকাতা বিএনআরে খেলি। সুরজিৎদা খিদিরপুরে। সে দিন ওর গোলেই আমরা হেরে গিয়েছিলাম। ওর ড্রিবল, বুদ্ধি আর গতি আমাকে চমকে দিয়েছিল। বাড়ি যাওয়ার সময় কিন্তু আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে যেতে ভোলেনি। চুয়াত্তরে আমি যে বার মোহনবাগানে এলাম, তখন ও চলে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গলে। পঁচাত্তরের সেই পাঁচ গোলের ম্যাচে সে দিন সুরজিৎ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল। আমাদের রক্ষণ সে দিন ওকে আটকাতে পারেনি। আর ওর দিকে নজর দিতে গিয়েই আমরা ভৌমিক, রঞ্জিত (মুখোপাধ্যায়), শ্যাম থাপাদের কিছুটা অরক্ষিত করে ফেলেছিলাম। যার মাশুল গুণতে হয়েছিল। ওর চেয়ে বড় কোনও শিল্পী ফুটবলারকে আমি আটকাইনি। এটা বলতে দ্বিধা নেই। পরবর্তীকালে কিছুটা এ রকম প্রতিভা দেখেছিলাম কৃশানু দে-র মধ্যে।

সুরজিৎদার সঙ্গে এক দলে ও বিপক্ষে অনেক ম্যাচ খেলেছি। তাতেই বুঝেছিলাম যে ও আপাদমস্তক ভদ্র ছেলে। মাঠে মারপিট, গালাগাল থেকে শতহস্ত দূরে থাকে। এটাই তখন আমরা অস্ত্র করতে শুরু করলাম। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলে সুরজিৎদা থাকার সময়েই আমাদের রণনীতি থাকত দিলীপ পালিত ওকে প্রথম থেকে ধাক্কাধাক্কি করবে। ওকে কাটিয়ে বেরোলে ধরব আমি। সঙ্গে উত্তপ্ত কথা, গেমসম্যানশিপ তো থাকবে। এতে অনেক ম্যাচেই কাজ হয়েছে। কিন্তু ১৯৭৮ সালের ডুরান্ডে ও আমাদের রক্ষণকে ধোঁকা দিয়ে ঠিক গোল করে গিয়েছিল। আমরা হেরেছিলাম। সে দিন শিক্ষা পেয়েছিলাম, শিল্পী ফুটবলারকে রোজ শক্তি প্রয়োগ করে আটকানো যায় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Surajit Sengupta Death East Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE