ম্যাচ পকেটে! এ ভাবেই উল্লাসে ফেটে পড়লেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এএফপি-র তোলা ফাইল ছবি।
ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক পড়েছেন ধাঁধাঁয়। ৬ বছর আগে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে যে পিচে খেলেছেন, সেই উইকেটের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে এখনকার পিচের যে কোন মিলই খুঁজে পাননি!
ঢাকা টেস্ট শুরুর আগে উইকেটে টোকা মেরে খুশিই হয়েছিলেন। পিচ থেকে পেসাররা কিছুটা হলেও সুবিধা পাবেন। ধরে নিয়েছিলেন তিনি। অথচ, শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের ২০ উইকেটই তুলে নিয়েছে বাংলাদেশের তিন স্পিনার! যে ইংল্যান্ডের কাছে ৯ টেস্টের ৪টিতে ৩ দিনে হেরে গিয়েছে বাংলাদেশ, সেই ইংল্যান্ডকে দশম টেস্টে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এবং তিন দিনে। প্রতিশোধটা মধুরই বটে!
তবে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন দিনে জয়কে অবিশ্বাস্য মনে হলেও মুশফিুকুরের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে না। পঞ্চম দিনে খেলা টেনে নিলে ম্যাচ হাতছাড়া হবে। সময় যতই গড়াবে, ততই ম্যাচে ফিরে আসবে ইংল্যান্ড। এই ভাবনা থেকেই নাকি তিন-চার দিনে ফল বের করে আনা যায় এমন উইকেট চেয়েছিলেন মুশফিকুর। গোপন থাকা এই পরিকল্পনার কথাই রবিবার ম্যাচ শেষে জানিয়েছেন টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তিনি জানান, পছন্দের উইকেট পেলে ইংল্যান্ডকে যে বিপদে ফেলা যাবে, তেমন উইকেটের ভাবনা পূর্ব পরিকল্পনায় ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘ইংল্যান্ড বাংলাদেশ সফরে আসবে যখন জানতে পারি, তখন থেকেই তিন থেকে চার দিনের মধ্যে রেজাল্ট হয়, এমন পিচের কথা ভাবছিলাম। যে উইকেটে আমাদের স্পিনাররা বাড়তি সহায়তা পাবে এবং ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা সমস্যায় পড়বে। চট্টগ্রামে উইকেট পেয়েছি, ওই উইকেটে পঞ্চম দিনে খেলা কী ভাবে গেল, তাতে বিস্মিত হয়েছি।’’ তাঁর মতে, ওই উইকেটে তিন বা সাড়ে তিন দিনের বেশি ম্যাচ হওয়ার কথা নয়।
ঢাকা টেস্টে ইংল্যান্ডকে স্পিন ফাঁদে ফেলে তিন দিনে হারিয়ে দেওয়ার নায়ক মিরাজ, সাকিব, তাইজুল— এই ত্রয়ী। তাঁদের সাফল্যের মঞ্চটা তৈরি করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান কিউরেটর গামিনি সিলভা। চট্টগ্রাম টেস্টে স্পিন আতঙ্কে ইংল্যান্ডকে তটস্থ রেখেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ, তার পরেও ২২ রানে হেরে যাওয়া ওই ম্যাচ শেষে প্রশংসিত হয়েছেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু। ১৫ মাস পর টেস্ট খেলতে এসে চট্টগ্রামে পছন্দ মতো উইকেট পেয়ে ইংল্যান্ডকে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেওয়ায় তাই ঢাকা টেস্টে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার ডলার মাইনে পাওয়া শ্রীলঙ্কার এই কিউরেটরকে। সেই চ্যালেঞ্জে জিতে ভীষণ খুশি গামিনি।
বছর ছয়েক আগে বিসিবি-র সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তবে, তারও আগে থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সম্পর্কে ধারণা তার বিস্তর। ২০০৫ সালে জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জেতে। সেই সিরিজের ফিল্ড আম্পায়ার ছিলেন গামিনি। নিজে খেলেছেন শ্রীলঙ্কার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। সে কারণে পছন্দ মতো উইকেট তৈরির আগে গোয়েন্দাগিরির দায়িত্বটা বিসিবি দিয়েছিল তাঁকে। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল ঢাকায় পা রাখার পর যে দিন নেমে পড়ে অনুশীলনে, সে দিন থেকেই শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের ইন্ডোর, আউটডোর, অ্যাকাডেমি মাঠে তাদের ব্যাটসম্যানদের ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন গামিনি।
ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা কোথায় দুর্বল, সেখানেই হানতে হবে আঘাত। স্বদেশি কোচ হাতুরুসিংহে সে দায়িত্বই দিয়েছিলেন গামিনিকে। গোয়েন্দাগিরি করে চার দিনের মধ্যে ঢাকা টেস্ট জিততে উইকেট তৈরির ফর্মুলা বের করেছিলেন তিনি। তাঁর তৈরি উইকেটে তিন দিনেই ধরাশায়ী ইংল্যান্ড। তাতেই বেজায় খুশি শ্রীলঙ্কার এই কিউরেটর। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ দলের শক্তি অনুযায়ী উইকেট তৈরি আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জ জিতেছি। ইংল্যান্ড দল যখন ঢাকায় এসেছে, তখন থেকেই ওদের দূর্বলতা কোথায়, তা দেখে উইকেট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিউরেটর বলেই সারা ক্ষণ ওঁদের পেছনে ছায়ার মতো থাকতে পেরেছি। ইংল্যান্ডের কোথায় দুর্বলতা, কোথায় শক্তি— সব নিয়ে কথা বলেছি কোচ, অধিনায়কের সঙ্গে। তার পরে যেমনটা চেয়েছেন, তেমন উইকেট তৈরি করে দিয়েছি।’’
আরও পড়ুন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy